শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

অগ্রণী ব্যাংকের ১৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ১৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা ১০ সেপ্টেম্বর অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখ্‌ত সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ উপস্থিত ছিলেন। 

বার্ষিক সাধারণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ব্যাংকের পরিচলনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ,  ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ, মহাব্যবস্থাপকবৃন্দ ও নিরীক্ষা ফার্মের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী সর্বসম্মতি ক্রমে অনুমোদিত হয়। এছাড়া, ২০২০ সালের জন্য ব্যাংকের বহিঃনিরীক্ষক হিসেবে এ কাশেম এন্ড কোং এবং মেসার্স মশিহ মুহিত হক এন্ড কোং ফার্মের নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। 

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও জনাব মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম ২০১৯ সালে ব্যাংকের সাফল্য গাঁথা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আর্থিক সূচক সমূহের অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন। ব্যাংকের আমানত, ঋণ ও অগ্রিম, পরিচালন মুনাফা, আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়সহ বিভিন্ন সেবা খাতে ব্যাংকের ভূমিকা উল্লেখ করে সমাজ তথা জাতীয় অর্থনীতিতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের অবদান ও সাফল্যের বিশদ বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ব্যাংকের মোট সম্পদ ২০১৮ সালের তুলনায় ৬ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বা ৮.২১% বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকায় উন্নিত হয়। ব্যাংকের মোট সম্পদের মধ্যে সুদবাহী সম্পদের পরিমান ৫৩ হাজার ২ কোটি টাকা যা মোট সম্পদের ৬২%। ২০১৯ সালে ঋণ ও অগ্রিমের পরিমান ১৭.৭১% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায় যা ২০১৮ সালে ছিল ৩৯,৫৭ কোটি। ২০১৯ সালে ঋণ ও অগ্রীমের মধ্যে নিয়মিত ঋণের পরিমান ৮৬%। এ বছরে ঋণ-আমানত অনুপাত ৩.৬৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭.২৯%-এ দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে আমানতের পরিমান ছিল ৬২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা যা ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৩১ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ২২৪ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি ১১.৩১%। ২০১৯ সালে ২.০৩% প্রবৃদ্ধিসহ শেয়ার হোল্ডার ইক্যুইটি ৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের রিটার্ন অন ইক্যুইটি হল ২.৫৩%। বিগত বছরের তুলনায় ৮.১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৯০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে নীট সুদ আয় ছিল ৬৩৪ কোটি টাকা যা রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় নীট পরিচালন আয় ৩.১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকায় উন্নিত হয়েছে।

বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক পূর্ববর্তী বছরগুলোর ন্যায় এ বছরেও রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান এবং সকল ব্যাংক সমূহের মধ্যে ২য় স্থান ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। ২০১৯ সালে ব্যাংক ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরণ করেছে যা ২০১৮ সালের তুলনায় ২ হাজার ১৮৩ টাকা বা ১৭.২২% বেশি। ২০১৯ সালে মোট আমদানির পরিমান ৩৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বা ৬৪.৯২% বেশি এবং মোট রপ্তানির পরিমান ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা যা ২০১৮ সালের রপ্তানির পরিমান ৮ হাজার ২৮০ কোটি ব্যাংক টাকার তুলনায় ৩১.৩১% বেশি। 

ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড শ্রেণীকৃত ঋণ এর লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৯ সালে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমান ৫.০১% কমে ৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে যা ২০১৮ সালে ছিল ৬ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। মোট ঋণ ও অগ্রিমের তুলনায় শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমান ১৪.২৬% যা ২০১৮ সালে ১৭.৬৭% ছিল। ২০১৯ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ হতে আদায় করেছে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা যা বিগত বছরের তুলনায় ১৪৪% বেশি। এর মধ্যে নগদ আদায়ের পরিমান ছিল ৪১১ কোটি টাকা, অবলোপনকৃত ঋণ হতে আদায়ের পরিমান ছিল ১১১ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী বছর গুলোর ন্যায় ২০১৯ সালে ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। ২০১৯ সালে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১০.০২%। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে  বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ বাস্তবায়নে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ২০১৯ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারই ফলশ্রুতিতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা ২৯ হাজার ৮৩৭টি লোনের মাধ্যমে বিতরণ করেছে।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দক্ষ জনবল নিয়ে সর্বক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সর্বোত্তম সেবা দিয়ে দেশ তথা জাতির উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এ ব্যাংকটি নানা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলেছে। ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক এবং সিইও তার বক্তব্যে এসব সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। সে সাথে ২০২০ সালে ব্যাংকটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ব্যাংকের সকল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড এবং আর্থিক সূচক সমূহের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম অর্জন ও সর্বক্ষেত্রে অগ্রণীর অবিরত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ  তার বক্তব্যে অগ্রণী ব্যাংকের সকল ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামীতে ব্যাংকটি সকল আর্থিক সূচকে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করে নিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

সভায় ব্যাংকের পরিচালকবৃন্দের মধ্যে অনেকেই ব্যাংকের সাফল্য তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন। পরিশেষে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখ্‌ত ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তিনি ব্যাংকের সকল ব্যবসায়িক ও আর্থিক সূচকে অভাবনীয় অগ্রগতি ও সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সে সাথে এই অর্জনে পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ ও মহাব্যবস্থাপকবৃন্দসহ সকল নির্বাহী এবং সর্বস্থরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে অভিনন্দন জানান। আগামীতে অবিরত অগ্রণীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এ কামনা ব্যাক্ত করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি  ঘোষণা করেন তিনি।

‘হাওর পর্যটন’ উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে- পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
অগ্রণীকে অগ্রে রাখার প্রত্যয়ে অগ্রণীয়ানদের মহাসম্মেলন

আপনার মতামত লিখুন