শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ভ্রমণের জন্য নিবেদিত প্রাণ

মাহবুব নাহিদ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
কানিজ ফাতেমা

কানিজ ফাতেমা

নিজে একজন ভ্রমণপ্রেমী, আর এখন হয়ে উঠেছেন ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক জনপ্রিয় নাম। তাকে দেখে অনেকেই নতুন করে পথচলা শিখছেন, বলছি ট্রিপজিপ ট্যুরের সিইও কানিজ ফাতেমার কথা। বাবা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকায় সেখানে বেড়ে উঠেছেন ময়মনসিংহে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরম পরিবেশে বেড়ে ওঠার সময়েই বিতর্ক, উপস্থাপনা, গান, উপস্থিত বক্তা, প্রভৃতি ছিল নিয়মিত চর্চা। মাঝে মাঝে পড়াশোনাটাই যেন হয়ে উঠত সহশিক্ষা কার্যক্রম। ছোটোবেলায় প্রথাগতভাবে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও স্বাধীনচেতা কর্মক্ষেত্র সব সময়ই ভেতরে ভেতরে স্বপ্ন ছিল। তার মা একজন গৃহিণী। একমাত্র ভাই বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে কর্মরত।

কৃষি বিদ্যালয় হাইস্কুল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ব্যাবসায় প্রশাসনে পড়ার সুবাদে ব্যবসা-সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা লাভ করলেও ছাত্র অবস্থায় জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগ খুলে দেয় আর একটি দিগন্ত—‘মানুষের জন্য কাজ করা’। ছাত্রদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা, মানুষের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ পালটে দেয় অনেক ভাবনা।

অন্য যে দেশেই তিনি যেতেন, কাজের পরে এক-দুই দিন হয়তো একটু ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করতেন, কখনো দল বেঁধে কখনো একা। কখনো কোনো স্থানে গেলে দুশ্চিন্তা হত না—কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কীভাবে বুকিং করবেন, কী খাবেন, সবকিছুই গোছানো। নিজের দেশের এই দুর্বলতায় সব সময়ই আক্ষেপ লাগত। এই আক্ষেপ তাকে কিছু একটা করার ইচ্ছাকে প্রবল থেকে প্রবলতর করে তোলে।

বাইরের দেশে ভ্রমণের যেমন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব ধরনের তথ্য খুব সহজে পাওয়া যায়, যেন পর্যটকেরা খুব সহজেই মনমতো ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারে। সে রকম কিছু একটা করার লক্ষ্যেই পর্যটনশিল্পের সঙ্গে নিজেকে সম্প্রক্ত করা। ‘ট্রিপজিপ’ নাম নিয়ে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে এবং প্রথমেই নারী ভ্রমণকারীদের নিয়ে একটি উদ্যোগ দৃষ্টি কাড়ে সবার।

ছাত্রজীবনে কো-কারিকুলাম কর্মকাণ্ডের জন্য ডিউক অব এডিনবরা এওয়ার্ড অর্জিত হয়। একই সঙ্গে বিতর্ক ও এমইউএন সম্মেলনে ছিল সাফল্যের সঙ্গে পদচারণা। জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের ঢাকা উত্তরের সদস্য হিসেবে সেরা সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে শতভাগ লক্ষ্য অর্জন কর্মজীবনের শুরুতেই আরেকটি সাফল্যের পালক যুক্ত করে।

এওয়ার্ড নিয়ে অনুভূতি সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলে বলেন, আসলে যে কোনো সম্মান পুরস্কার/সম্মাননাই উত্সাহ দেয় আরো ভালো কিছু করার। দেশের বাইরের এই সম্মাননা একটু ভিন্ন লেগেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সামনে নিজের দেশের পর্যটনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। ছবি তোলা, নতুন নতুন স্থান ভ্রমণ, বই পড়া, গান শোনা—এই কাজগুলো করতে খুবই পছন্দ করেন তিনি। অবসর বলতে তার জীবনে আসলে কিছু নেই। তবে সময় পেলে মুভি দেখেন, রান্না করেন। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের কাজটি ঠিকভাবে সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করেন তিনি। তার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকে যদি নিজের কাজটি ঠিকভাবে করে, দেশ এমনিতেই সামনে যাবে।

আমাদের দেশের নারীদের জন্য তার বার্তা, নিজের ভালো লাগার কাজটি করতে হবে, শতভাগ দিয়ে কাজটি করা উচিত। লক্ষ্য ছাড়া না ছুটে একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্যের পেছনে দৌড়াতে হবে। নারীদের যাত্রাটা একটু কঠিন। সবাই টেনে ধরে রাখতে চায়। নিজের লক্ষ্যের সামনে অন্য কোনো কিছুকে আসতে না দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। রাতারাতি কিছু অর্জিত হয় না। কঠিন ধৈর্য্য ও ইচ্ছাশক্তি নিয়ে লেগে থাকতে হবে। সাফল্য আসবেই।

গাড়িতে ভ্রমণ করলে বমি হয়, করণীয়।
বইমেলায় অপ্রতুল ভ্রমণ বিষয়ক বই

আপনার মতামত লিখুন