শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
দেখা থেকে লেখা

ভালো কাজের ‘হোটেল’

অনলাইন ডেস্ক
২৫ জানুয়ারি ২০২১

টাকা নয় ভালো কাজ করলেই এক বেলা মিলবে ভালো খাবার। যারা পেট পুরে এক বেলা খেতে পারে না, তাদের জন্যই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে 'ভালো কাজের হোটেল'।

খাবারের জন্য এখানে গুণতে হবে না কোনো অর্থ, শুধু বলতে হয়, সর্বশেষ কোনো ভালো কাজটি তিনি করেছেন।

এখানে যেকোনো একটি ভালো কাজের বিনিময়ে ডিম-খিচুড়ি খেতে পারছে অনেক গরিব, দুঃস্থ ও অভাবী মানুষদের। মূলত যারা পেটপুরে এক বেলা খেতে পারে না, তাদের জন্যই এমন আয়োজন 'ভালো কাজের হোটেল' এ।

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ের কাছেই অবস্থিত কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো সংলগ্ন ফুটপাথে প্রতিদিন দুপুর দেড়টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত খাবার বিতরণ করা হয়। 

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে পাঁচ দিন দুপুর দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে সুবিধা বঞ্চিত যে কেউ সেখানে পেতে পারেন দুপুরের খাবার। শনিবার সন্ধ্যা থেকে দেওয়া হয় রাতের খাবার।

এই হোটেলে খেতে আসা স্বপন আমিন বলেন, “সবাই তো মনে করেন রাস্তাঘাটে খাইতে পারে না। এই কারণে এই জায়গায় খাওনের নিয়ম করছে এক বেলা খাওনের নিয়ম ভালো কাজের বিনিময়ে আহার।”

৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবু হানিফ বলেন, "ভালো লাগতেছে। আমাদের খানা দিতেয়াছে এইডাই তো আখিরাতের কাজ করতেয়াছে।" 

মো. মিলন মোল্লা প্রায়ই এই হোটেলে আসেন এক বেলা পেট পুরে খাওয়ার জন্য। 

তিনি বলেন, “খাবার দেয়, ভালো কাজ করে। আমাদেরও ভালো কাজ করতে বলে। মানুষের উপকার করতে পারি, সাহায্য করতে পারি সেইজন্য আমাদের পরামর্শ দেয়।”

শুধু শুক্রবার এই হোটেল বন্ধ থাকে। তবে ইউথ ফর বাংলাদেশ নামের এই সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার নিয়ে যান বিভিন্ন এতিমখানায়। 

নিয়মিত এখানে আসা রিয়ামনি বলেন, “যদি দূরে থাকি, ওই সময় চলে আসি। কাজ থুইয়া চইলা আসি।”

ভালো কাজের হোটেলের গল্প শুরু হয় একটা নাটক থেকে। সেই নাটকে অভিনেতা প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করতেন। সেই থেকেই এই পরিকল্পনার কথা ভাবেন 'ইউথ ফর বাংলাদেশ' এর প্রধান স্বেচ্ছাসেবক আরিফুর রহমান। 

হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "ক্ষুধার্ত মানুষগুলি সাধারণত কিছু খারাপ কাজে উদ্ধুদ্ধ হয় ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে। এবং এই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা এক বেলা খায় কিন্তু পরের বেলা তারা কী খাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই সকল মানুষদেরকে ক্ষুধার যন্ত্রণা কমাতে, ভালো কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে আমাদের এই ভালো কাজের হোটেল। আমরা বলি প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও ভালো কাজ করবেন। একটা ভালো কাজ কিন্তু শুধু একটা ভালো কাজ না। আরও দশটা খারাপ কাজকে কিন্তু পেছনে ঠেলে দেয়।"

রবি থেকে বৃহস্পতি, খাবারের মেন্যুতে থাকে ডিম-খিচুড়ি। শুক্র ও শনিবারের খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানি, পোলাও, মাংসের মতো খাবার। যা বিতরণ করা হয় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানায়। খাবার দেওয়ার আগে একজন স্বেচ্ছাসেবক নাম, বয়স, পেশা ও কী ভালো কাজ করেছেন তা লিপিবদ্ধ করে নেন। এরপর শুরু হয় খাবার দেওয়া।

সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের চাঁদার টাকায় নিজেরাই বাজার করেন। প্রতিদিন রান্না করে নিজেরাই তা প্যাকেটে করে পরিবেশন করেন সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে।

সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মো. সাকির হাসান শাওন বলেন, "আমাদের এইখানে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের একটা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বেসিকেলি আমাদের মূল খাবার টা থাকে ডিম-খিচুড়ি। মাঝে মাঝে আমরা মোরগ-পোলাও, তেহারি বা ডিম-পোলাও জাতীয় খাবার দিয়ে থাকি।"

ভালো কাজের ধরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কেউ কোনো অন্ধ মানুষকে রাস্তা পার করে দিয়েছেন, কেউ বা রাস্তার কুকুরকে রুটি কিনে দিয়েছেন, আবার কেউবা অন্যকে সাহায্য করেছেন। কেউ যদি কোনো ভালো কাজ নাও করে থাকেন, তাহলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। বরং খাবারের সাথে প্রতিদিন যেন একটা ভালো কাজ করেন, সেই পরামর্শ দেওয়া হয়।"

২৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ডেইলি টেন মেম্বারের আওতায় প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমিয়ে মাস শেষে তা প্রদান করেন। যেখান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই আয়োজন করা হয় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য খাবার।

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবেন জো বাইডেন

আপনার মতামত লিখুন