শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

বাংলার দার্জিলিং ভ্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ মার্চ ২০২০

বান্দরবান হচ্ছে শৈল শহর। আমাদের দার্জিলিং। পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সৌন্দর্য লুকানো। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। চোখে পড়বে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। যেতে যেতে সুর ভাসে বিভিন্ন উপজাতীয়দের গান। মজার না? আবার রোমাঞ্চ! পাহাড় পেরিয়ে বিভিন্ন লোকেশনে প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই মনোরম লাগে। পাহাড়ের ভাঁজে পাহাড়ি ফুল। রংবেরঙের ফুল মোহিত করে। দেয় দৃষ্টিসুখ।

মেঘলা ও নীলাচলের মতো নান্দনিক আরও কিছু ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে বান্দরবান শহরের আশপাশেই। ছয় থেকে আট কিলোমিটারের মধ্যেই। পাহাড়ি সাঙ্গু নদী কুলকুল করে বয়ে চলেছে শহরের মধ্য দিয়েই। পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মিলনমেলা বান্দরবান শহর। বাজারে উভয় জনগোষ্ঠীর ভিড়। বেচাকেনাও করে একই সঙ্গে। দারুণ সম্প্রীতির শহর এটি। আমি তো অভিভূত এ সম্প্রীতি দেখে। ফুটপাতের ছোট ছোট বাজারগুলোও চমৎকার দেখতে। রাতে পাহাড়ের ভাঁজে আলো জ্বলে। দূর পাহাড়ে মিটমিট করে। ম্রোদের বাসও শহরের কাছাকাছি; পাহাড়ের খাঁজে।

মেঘলা-বান্দরবান সড়কে চোখে পড়ল আনারসের বাগান। মেঘলায় প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। নানা রকম ফুল। হ্রদে বিভিন্ন রকম জলজ পাখি। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে পাহাড়ের দেয়াল। হ্রদে নৌভ্রমণ আনন্দকে দ্বিগুণ করে। এ হ্রদের ওপর দিয়ে কেব্‌ল কার দেখে দার্জিলিংয়ের কেব্‌ল কারের কথাই মনে হয়ে যায়। এখানে থাকার জন্য ব্যবস্থাও আছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পাহাড়ের দৃশ্য কী চমৎকার। নিচে বাচ্চা ও পর্যটকের চলাচল, খেলাধুলা কী চমৎকার।

এরপর যৌথ খামার হয়ে টাইগারপাড়ায়। উঁচু–নিচু কালো পিচের রাস্তা। সাঁই সাঁই করে পাশ দিয়ে যায় চান্দের গাড়ি, মোটরবাইক ও যন্ত্রযান। টাইগারপাড়ার প্রায় প্রবেশমুখেই সড়ক প্রবেশ ফি দিতে হয়। চান্দের গাড়িপ্রতি ৬০ টাকা। বাইক বা সিএনজি ৩০ টাকা। এরপর দেখি ন্যাড়া পাহাড়। মাঝেমধ্যে আগুন বা কালো ছাই। পাশের সহযাত্রী বললেন, এগুলোকে বলে জুমচাষ। পাহাড়ের লোকজনের চাষপদ্ধতি। টাইগারপাড়া দিয়ে নীলাচল যেতে রোমাঞ্চকর আঁকাবাঁকা ও উঁচু–নিচু রোমাঞ্চকর পথ পাড়ি দিচ্ছি। মোড়ে মোড়ে পাহাড়িদের কাঁচা বাড়ি। অল্প পরিমাণ পাকা বাড়িও দেখলাম। পাকা বাড়ির বেশির ভাগই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দোকান বা পর্যটকদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা আছে। এরপর পৌঁছে গেলাম নীলাচল। বান্দরবন থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে।

৫০ টাকার প্রবেশ ফি দিয়ে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া! কী অপরূপ গো তুমি! দার্জিলিংয়ের চেয়ে কম কিসে! ওই দূরের শহর, জুমচাষ, পাহাড়িদের ছোট ছোট ঘর দেখা যাচ্ছে! সবুজ কলাপাতা আর বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে দূরের স্বর্ণামন্দির দেখা যায়। পাহাড়ি রঙিন ফুলে মুগ্ধ হতেই হয়। নিচের দিকে পাহাড়ি পথ যেন পেনসিলে আঁকা ধূসর চিকন বক্রপথ। খেলার মাঠ। পাশ থেকে কেউ কেউ বলছেন, না, এটা জুমচাষ! চারদিকে নীল পাহাড়। যেন শাড়িপরা বান্দরবানের আঁচল; নীল রঙের। মিষ্টি বাতাসে পর্যটকদের চুল ওড়ে। তাদের বিভিন্ন রঙের ড্রেসে পাহাড় সেজেছে অন্য রকম। পাহাড়-নারী-ঝরনা-নদী—অপূর্ব সাজ! কী করে ভুলি তোমারে! সুন্দরী বান্দরবান, চোখের ইশারায় ডাকে সব সময়।

থাকা ও খাওয়া

থাকা ও খাওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতেই আবাসিক ব্যবস্থা পাবেন। খাবারের ব্যবস্থাও আছে। কম খরচে থাকলে শহরের সাঙ্গু নদীর তীরে বিভিন্ন হোটেল পাবেন। বাসস্টেশন ও সারা শহরজুড়ে থাকা ও খাওয়ার প্রচুর হোটেল, লজ, রিসোর্ট আছে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সকাল ও রাতে বান্দরবানগামী বাস পাবেন। হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক, এস আলম, সেন্ট মার্টিন প্রভৃতি কোম্পানির বাস পাবেন। কিছু নরমাল কোম্পানিরও বাস পাবেন। নন এসির ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া এক হাজার টাকা থেকে শুরু। প্রথমে চট্রগ্রাম যেতে পারেন। এসব গাড়ি ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, শ্যামলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে ছাড়ে। ট্রেনে গেলে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। এরপর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় পূর্বাণী গাড়ি যায়। ভাড়া ১২০ টাকা।

এরপর বান্দরবান গিয়ে চান্দের গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করতে হবে। বাসস্টেশনের কাছেই এসব পাওয়া যাবে। দরদাম ঠিক করে নিতে হবে। চিম্বুক পাহাড় বা নীলগিরি যেতে পাঁচ খেকে ছয় হাজার টাকা ভাড়া নেবে। মেঘলা-নীলাচল, শৈলপ্রপাত বা আশপাশের স্পটগুলোতে যেতে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নেবে। এ ক্ষেত্রে অবস্থানের সময়ের ওপর ভাড়া নির্ভর করে। চান্দের গাড়িতে ১০-১২ জন আরামেই যাওয়া যাবে। তিন থেকে চারজন হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে চান্দের গাড়ির চেয়ে ভাড়া কিছুটা কম পড়বে। অথবা দুই বা তিন গ্রুপ একত্রে (শেয়ার করে) চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলে খরচ কম হবে। ভ্রমণও আনন্দপূর্ণ ও আরামদায়ক হবে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের বাজার

দুপুরের পর জমজমাট হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময়ের হেরফের হয় বলে জানা যায়। দেখা গেল, ক্রেতা বাঙালি, কিন্তু বিক্রেতা পাহাড়ি। উল্টাও হয়। আবার একই গোষ্ঠীর ক্রেতা-বিক্রেতাও আছে। সম্প্রীতির দারুণ বন্ধন। সন্ধ্যায় যেন জমকালো অনুষ্ঠান চলে শহরে। লাল-নীল-বেগুনি আলোয় মায়াময় রূপ ধরা দেয় শহর ও আশপাশে। সাঙ্গু নদীর দুই তীরে আলোর খেলা। পাহাড়ের ভাঁজে আলো-আঁধারির খেলা।

করোনার প্রভাবে ভুটান ও সিকিমে ভ্রমণ বন্ধ
নিত্যপণ্য মজুত ও ভ্রমণ না করার পরামর্শ

আপনার মতামত লিখুন