শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকীকরণ

অনলাইন ডেস্ক
৩০ ডিসেম্বর ২০২০

সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি ভেদ করে কক্সবাজারে অবতরণ করবে এ৩৮০’র মতো বিশালাকৃতির উড়োজাহাজ এমন স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিমানবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন তিনি। মূলত তার লালিত স্বপ্ন থেকেই অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোর অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্পের মতোই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ক্রয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছে প্রকল্পটি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ভেতরে ব্লক তৈরি করে রানওয়ে তৈরি করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির জন্য ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার সিনো হাইড্রোর দরপত্রটি টিকেছে। আজকের সভায় আর্থিক অনুমোদনের পর অনতিবিলম্বে দেওয়া হবে কার্যাদেশ। সেই হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে এই বিমানবন্দরটির প্রকল্প। এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া। করোনা ক্রান্তিকালেও সব ধরনের জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আজকের অবস্থানে নিয়ে আসে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেকোনো মূল্যে। অতীতে যাই ঘটুক আর হয়ে থাকুক এখন আর পিছু ফেরার অবকাশ নেই। আজকের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন পেলে খুব শিগগির কার্যাদেশ প্রদান করে প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিং করা হবে। তিনি বলেন, দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারকে যুগোপযোগী বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর অধীনে একটি অত্যাধুনিক রানওয়ে নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করে সব চূড়ান্ত করে আর্থিক দর পাঠানো হয়েছে ক্রয় কমিটিতে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারকে আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার কাজ। ইতিমধ্যে প্রথম দফার কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন শুধু ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম ইনস্টল করার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। তখনই দিবারাত্রি উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা কয়েকটি বস্তির জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে। বস্তির মধ্যে দোতলা ঘরবাড়ি তুলে চিরস্থায়ী হওয়ার মানসিকতায় নানা শ্রেণির লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বারবার বৈঠক করে তাদের বুঝিয়ে পুনর্বাসনের জন্য ১৪০টি ভবন করার প্রকল্পও নিতে হয়েছে। যার মধ্যে ২০টির কাজ হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্যদের টাকা ও জমি দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের টার্গেট আগামী দুই মাসের মধ্যেই এএলএস ইনস্টল করে দিবারাত্রি বিমানবন্দর চালু করা। দ্বিতীয়ত, আজকের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন পেলে শুধু বাকি থাকবে কার্যাদেশ দেওয়া। আমাদের জোর প্রস্তুতি রয়েছে আগামী ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এর গ্রাউন্ড ব্রেকিং উদ্বোধন করা।

বেবিচক সূত্র জানায়, বছর পাঁচেক আগে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। মূলত প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশনায় প্রকল্পটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে হাতে নেওয়া হয়। দুটি ভাগে নেওয়া হয় উন্নয়ন প্রকল্প। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের সম্প্রসারণ কাজ  শেষ হয়েছে, যা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কিন্তু স্থানীয় বসতভিটা উচ্ছেদ সংক্রান্ত জটিলতায় তা সময় লাগছে। এই অবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ের অত্যাধুনিক রানওয়ে সম্প্রসারণের প্রকল্প নামে নেওয়া হয়। আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেয়ে বেবিচক কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। বিমানবন্দরের বর্তমান ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া ১ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ের ১ হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সাগরের পানির মধ্যে। দেশে এই প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ভেতরে ব্লক তৈরি করে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হবে।

এ বিষয়ে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নের প্রথম পর্বের কাজের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বেবিচক। শর্ত দেওয়া হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর রানওয়ে নির্মাণের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে। তখনকার দরপত্রটি ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাতিল করে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেয় সান ইঞ্জিনিয়ারিং, লটি এএমএল জেভি, এইচডি এনডিই জেভি, সিএইচইসি মির আখতার জেভি, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, সিওয়াইডব্লিউবি-সিসিইসিসি জেভি ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। এগুলোর মধ্যে সিওয়াইডব্লিউবি-সিসিইসিসি জেভি ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড প্রযুক্তিগত মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয়, যার মধ্যে আর্থিক প্রস্তাবে টিকে যায় সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার সমুদ্রতীর ঘেঁষে অত্যাধুনিক এজিএল সিস্টেম তৈরি করা হবে যা রাতের অন্ধকারে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়  দেখা দেবে অনন্য এক নৈসর্গিক দৃশ্য। মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলীতে সাজানো হয়েছে গোটা এয়ারপোর্টের ড্রয়িং-ডিজাইন। এয়ার ফিল্ড লাইটিং সিস্টেম, সমুদ্রের জলাবদ্ধতা রক্ষা, সমুদ্র পুনরুদ্বার, নমনীয় ফুটপাত, সমুদ্রের যথাযথ পদ্ধতিতে আলোক ব্যবস্থার মতো দৃষ্টিনন্দন বস্তুর সমাহার থাকছে এখানে।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধের নির্দেশ
বাজার মূলধনে বছরের সেরা ওয়ালটন

আপনার মতামত লিখুন