বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

কম বাজেটে ঘুরে আসুন পান্থুমাই ঝরনা

 সিদরাতুল সাফায়াত
১৮ জানুয়ারি ২০১৯

পাহাড়ি ঢল বেয়ে পাথরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি ঝরনা। দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই! ঝরনার অবস্থান ভারতে হলেও সব পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। ঝরনা থেকে গড়িয়ে পড়া পানিতেই তৈরি হয়েছে ছোট নদী। স্থানীয়রা এ নদীকে ‘ছড়া’ বলেন। আর জলপ্রপাত এ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে একে ‘ফাটা ছড়া’ বা ‘ঝরনা’ বলা হয়। বলছিলাম অপরূপ পান্থুমাই-এর কথা।

অনেকে ভ্রমণের নেশায় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের পর্যটন জায়গাগুলোতে ছুটে বেড়ান। অথচ দেশের ভেতরেই এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আপনি চাইলে কম বাজেটে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। এরমধ্যে অন্যতম পান্থুমাই ঝরনা। মনকাড়া, দৃষ্টিনন্দন এই জায়গা ঘুরতে একদিকে যেমন আপনার টাকা বাঁচবে অপরদিকে আপনি পাবেন বিনোদন।

পান্থমাই গ্রামের চারপাশ খুব চমৎকার। ভ্রমনের সময় আপনাকে বাড়তি আনন্দ দিবো পুরো গ্রাম। এখানে রয়েছে বড় একটি খেলার মাঠ। এই জায়গাটি একবছরে বহু রূপ ধারণ করে। বলা হয়ে থাকে, পান্থমাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। আপনার কাছেও গ্রামটা অসম্ভব সুন্দর লাগবে। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা পান্থমাই গ্রাম বষার্র রূপ আর সৌন্দর্যে অনন্য কিংবা অসাধারণ। শীতেও পাবেন আরেকটু বৈচিত্র্যময় আনন্দ।

বিছানাকান্দি যাবার আগেই যেতে হবে পান্থমাই ঝরনায়। পান্থমাই ঝরনা ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়। ভারতীয়দের এ সৌন্দর্য দেখতে হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হয়! ওখানে গেলে আপনার মনে হবে, পান্থমাই জলপ্রপাত ছুঁতে না পারলেও এর অসম্ভব সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত।

আমাদের দেশের ঝরনাগুলো মূলত উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু এ ঝরনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটা পাহাড়ি ঢল বেয়ে পাথরের মধ্য দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হয়। যা আপনাকে এক উদ্দাম নৃত্য দেখাবে। বেশ গজর্ন করতে থাকে। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলরাশিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কেউ বিছিয়ে রেখেছে সাদা শাড়ী। কাছে গেলে ঝরনার শব্দে ভুল ভাঙবে পর্যটকের। বিমুগ্ধ হয়ে আপনাকে চেয়ে থাকতে হবে পাহাড় আর জলের এই মিতালির দিকে। মন চাইবে ঝরনাধারা দিয়ে নেমে আসা শীতল পানিতে পা ভিজিয়ে নিতে। বাংলাদেশের সীমানায় দাঁড়িয়েই আপনি নয়নজুড়ে উপভোগ করতে পারবেন পাংথুমাই রূপ-লাবণ্য। জলপ্রপাত দিয়ে নেমে আসা জলে ভিজিয়ে নিতে পারবেন শরীর।

বিছনাকান্দি-লক্ষনছড়া-পান্থুমাই–এই তিনটি জায়গা ঘুরিয়ে আনতে নৌকার খরচ পরবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। লক্ষনছড়া মাঝি চিনে কি-না সেটা আগেই জিজ্ঞেস করে শিওর হয়ে নিবেন। তিনটি জায়গা মোটামোটি ভাবে ঘুরে হাদারপাড় ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘন্টা। তাই সিলেট থেকে আসার পথে গোয়াইনঘাট বাজারেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে অথবা প্যাক করে নিতে পারেন। গোয়াইন ঘাট থেকে আপনাকে যেতে হবে হাদারপাড়। গোয়াইন ঘাট বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে সহজেই হাদারপাড় যাওয়া যাবে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। কেউ যদি সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি হাদারপার চলে আসেন, তাহলে হাদারপারের গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে ভুলবেন না।

তবে আপনি যদি শুধুই পান্থুমাই যেতে চাহলে তাহলে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। শহরের বিমানবন্দর রোড দিয়ে অটোরিকশায় পান্থুমাইয়ের পথ। ভাড়া করার সময় অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে কি-না অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। পান্থুমাই থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা না থাকলেও সিলেট শহরে অনেক হোটেল-মোটেল রয়েছে। ৩শ’ থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি চাইলে পান্থুমাই যাবার সময়ই সিলেট থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। ওখানে বাজার থাকলেও দুপুরে খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে সেখানে স্থানীয়দের রান্না করা রেস্টুরেন্টে যেতে পারেন, কম খরচে ভালো খাবার পাবেন।

বাংলাদেশের মাঝে এক টুকরো ‌'কাশ্মীর'!
মনপুরা ও নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত

আপনার মতামত লিখুন