শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

ভাঙনে নিঃশেষ হচ্ছে কুয়াকাটা, সৈকত রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেই

অনলাইন ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

দীর্ঘ দুই দশক ধরে পরিদর্শন আর প্রতিশ্রুতিতে আটকে আছে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্পট কুয়াকাটা সৈকত ভাঙনরোধের কাজ। এতে দীর্ঘ বেলাভূমি প্রতি বছর প্রশস্ততা হারাতে হারাতে হচ্ছে সঙ্কুচিত। সাগরে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। বেলাভূমিজুড়ে বিশাল সবুজ বেষ্টনী হচ্ছে উজাড়। কুয়াকাটা সৈকতটি ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আর সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। এখন সৈকত ভাঙতে ভাঙতে প্রশস্ততা কোথাও ৪০০ ফুট আবার কোথাও ৩০০ ফুটে এসে ঠেকেছে। সৈকতের পশ্চিম দিকের দেড় কিলোমিটার অংশের প্রশস্ততা একেবারে শূন্য অবস্থায় পৌঁছেছে। এ বছর অমবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে ২৫ ফুট ভেঙে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সর্বশেষ ২০১৯ সালে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন দুই দিকের তীরভূমি ১২ হাজার ৫৬০ মিটার এলাকার ভাঙন রোধ করার কাজ করে। এসব জায়গায় বালু ভর্তি ৬৪টি জিও টিউব এবং আট হাজার জিও টিউব ব্যাগ ফেলা হয়। এতে ব্যয় হয় এক কোটি ৯০ লাখ টাকা।

১৯৯৮ সালে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হলে সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। অমবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে সাগরে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ঢেউ। শোঁ শোঁ শব্দে উত্তাল ঢেউয়ের ঝাঁপটায় বালুক্ষয় হতে হতে সৈকতের পরিধি ছোট হয়ে আসছে। এখনই স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হলে যৌবন হারিয়ে শ্রীহীন কুয়াকাটা হারাতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণ। বিনিয়োগকারীসহ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এখনই স্থায়ী উদ্যোগ না নিলে হুমকির মুখে পড়বে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।

বৈশ্বিক উষ্ণতাজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র স্রোতের গতিধারা বদলে গেছে। ফলে গত দুই দশক ধরে তীব্র স্রোত আর উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে অব্যাহত বালুক্ষয়ে কুয়াকাটা সৈকত হারিয়েছে অন্তত চার কিলোমিটার প্রশস্ততা। সাগরে বিলীন হয়েছে নারিকেল বাগান, ঝাউ বাগান, ইকোপার্ক, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীসহ কয়েক শ’ স্থাপনা।

অমাবস্যা জোয়ের প্রভাবে উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে সৈকতের প্রশস্ততা হয়েছে আরো সঙ্কুচিত। সাগরে বিলীন হয়েছে বেলাভূমির সবুজ বেষ্টনী, ঝাউ বাগান, ইকোপার্ক, বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কয়েক শ’ ভাসমান দোকান। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতটজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এর ক্ষতচিহ্ন।

স্থানীয়রা জানান, যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে কেন্দ্রীয় ঘাটলা মসজিদ, মাদরাসা, রাধাকৃষ্ণ সেবাশ্রম, ট্যুরিজম পার্ক, দুই শতাধিক স্থাপনা, সবুজ বনভূমির অবশিষ্টাংশ, অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, শুঁটকি ও ঝিনুক মার্কেটসহ বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের চলমান উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বর্ষা মৌসুমে বাড়ে ভাঙনের তীব্রতা। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন, ট্যুরিজম বোর্ড ও জনপ্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় পরিদর্শনে আসেন। শুধু জিরো পয়েন্ট এলাকায় কয়েক শ’ ফুট ভাঙন প্রতিরোধে সাময়িক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। লোক দেখানো এসব উদ্যোগ কোনো কাজেই আসছে না।

হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে হুমকির মুখে। বন্ধ হয়ে আছে সব ধরনের বিনিয়োগ। রিয়েল স্টেট ব্যবসা বন্ধ হয়ে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ অলিউজ্জামান বলেন, স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য সমীক্ষা শেষে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, জিও টেক্সটাইল ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হচ্ছে। একনেকের সভায় পাস হলেই শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা মনপুরা
সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের পাস উন্মুক্তের দাবি বোট মালিকদের

আপনার মতামত লিখুন