শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

বেহাল সেন্টমার্টিন জেটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের পর্যটন এলাকা কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ে চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন কক্সবাজার। এখন পর্যটন মৌসুম শুরু হতে চলেছে। এটি মাথায় রেখে সীমিত আকারে জেলা প্রশাসন ১৭ আগস্ট পর্যটন এলাকা খুলে দেয়। এরপর থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণীয় এলাকা হলো টেকনাফ উপজেলার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই সেন্টমাটিন দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসে কক্সবাজারে। তারা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ঘুরতে যায় পরিবার পরিজন নিয়ে।


কিন্তু কক্সবাজারের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন জেটির বেহাল অবস্থা। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি নভেম্বর মাসেই শুরু হতে পারে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই এই জেটিঘাট নিয়ে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা সবার মাঝে থেকেই যাচ্ছে। এই জেটি তত্ত্বাবধানে আছে কক্সবাজার জেলা পরিষদ। তারা কোনো ধরনের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানান স্থানীয়রা। তারা আরও বলেছেন প্রতি বছর ইজারা দিয়ে কোটি টাকা নিয়ে গেলেও এই জেটির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। 


ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, জেলা পরিষদ ইতিমধ্যে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ঘাট ইজারা দিয়েছে। আশা করছি ঘাট মেরামত বা নতুন নির্মাণ করে পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হবে।


সূত্র মতে, ২০০৪ সালে সিএমএম কনসোর্টিয়াম মালিকের ঠিকাদারিতে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই সেন্টমার্টিন জেটি। দীর্ঘদিন ধরে জেটির রেলিং পূর্ব পাশের পার্কিং ও গাইড বিম, স্পিং বিম সাগরের বুকে চলে যায়। জেটির নিচে বেশির ভাগই ভেঙে রডগুলো দেখা যাচ্ছে। এই বছরে বয়ে যাওয়া ফণী কোমেন ও টর্নেডোর প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে জেটিরও ভয়াবহ ভাঙন ও ফাটল তীব্র আকার ধারণ করেছে।


স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল মালেক বলেন, ২০০৫ সালে ১৫ জুন এই জেটি দিয়ে পর্যটকসহ স্থানীয়দের চলাচল শুরু হয়। এই জেটিটি নির্মাণের পর থেকে বেশ কয়েক বছর ভালোভাবে চললেও ১০-১২ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এখন বেহাল। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, সেন্টমার্টিনে ছোটবড় ১২০টির মতো আবাসিক হোটেল, বাড়িঘর, কটেজ, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পাশাপাশি দোকান রয়েছে দুইশ’র কাছাকাছি। ভ্যান ও রিকশাসহ ২৫টি সার্ভিস বোট রয়েছে। আর এসব ঘিরে দ্বীপে স্থানীয় জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৪ হাজারের ঊর্ধ্বে রয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দ্বীপে যাতায়াত। কিন্তু সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এ জেটি। এই জেটির কিছু হলে সব কিছুই অকার্যকর হয়ে পড়বে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেন্টমার্টিনকে ধরে রাখতে হলে জেটির বিকল্প নেই।


ব্যবসায়ী ছাবের আলম বলেন, যাওয়ার সময় জাহাজের ওপর ভালো লাগলেও সেন্টমার্টিনে পৌঁছার পর জেটির বেহাল দৃশ্য দেখে নিজে অবাক হলাম। জাহাজ থেকে ওঠানামায় এক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়।


সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, পর্যটন মৌসুমে জেলা পরিষদ থেকে কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়। কিন্তু এই বছর প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং জেটির অবস্থা বেশ নাজুক।


স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান, পর্যটক মৌসুমই দ্বীপবাসীর আয়ের একমাত্র সুযোগ। জেটির ভাঙন আয়ের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করছে বার বার। মৌসুমের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পত্র-পত্রিকায় অনেক রিপোর্ট করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জেটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে দ্বীপবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের লোকসান গুণতে হবে।


সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রতিবেদককে বলেন, জেটিতে গাইড বিম না থাকায় সার্ভিস বোট ভিড়তে পারে না। পর্যটকবাহী একটি জাহাজ ভিড়লে অন্য জাহাজ ভিড়তে না পেরে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে নোঙর করে অপেক্ষা করতে হয় এবং বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রীদের ওঠানামা করাতে হয়। তিনি জেটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।


সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেটির কারণে সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটক বিমুখ হয়ে যাবে। বিপর্যয় এড়াতে প্রাথমিকভাবে রেলিংগুলো হলেও মেরামতের ব্যবস্থা করা দরকার। এমন অবস্থায় দ্বীপের একমাত্র জেটিটি সংস্কার করা না হলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।


এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদকে ফোন করা হয় কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

লক্ষ্মীপুরের জমিদার বাড়িতে হচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর
১৫ই সেপ্টেম্বর জেদ্দা থেকে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট

আপনার মতামত লিখুন