শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

ভ্রমণের জন্য কীভাবে উন্মুক্ত হবে বিশ্ব?

অনলাইন ডেস্ক
১২ জুন ২০২০

মাসের পর মাস লকডাউনে করোনাভাইরাসকে দমিয়ে দেওয়া দেশগুলো এখন সীমানা খুলছে ধীরে ধীরে। তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ, কীভাবে দ্বিতীয় ধাপের অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ দেশে না এনেও পর্যটকদের ফেরানো যায়।

তিন বাল্টিক দেশ এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া যেমন গত ১৫ মে কেবল নিজেদের মধ্যে সীমানা খুলে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া আর নিউ জিল্যান্ড তাদের নিজস্ব ‘ট্রাভেল বাবল’ এর ভেতরে বাধাহীনভাবে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে, যেখানে ফিজি, ইসরায়েল ও কোস্টা রিকা যোগ দিতে চাচ্ছে।

চীনে কর্পোরেট চার্টাড ফ্লাইট বাড়ছে। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল আসার সনদ থাকলে সাইপ্রাসে পর্যটকরা ঢুকতে পারছে।

করোনাভাইরাস মহামারী আন্তর্জাতিক ভ্রমণে দেশগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্কটাকে বিষিয়ে তুলেছে। কিন্তু এখন ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে সম্পর্ক আবার গড়ে উঠছে শিগগিরই দূর হবে না এমন একটি ভাইরাসের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে।

ব্যবসায়িক ভ্রমণ বা আনন্দভ্রমণ-ভ্রমণকারীদের নিরাপদ বোধ করানোর জন্য পর্যাপ্ত বিধিনিষেধ থাকতেই হবে। তবে এত নিয়মকানুন নয় যাতে কেউ আর ভ্রমণ করতে চাইবেন না।

নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক স্কট টাস্কার বলেন, আমরা সবাই আবার চলার পথে ফিরে আসব, তবে অন্যভাবে। এটি বিমান ও পর্যটন শিল্পের কাছে বিশ্বব্যাপী একটা ধাক্কা, যেমনটি আমরা কখনও দেখিনি।

মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরা, তাপমাত্রা মাপা, কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের ব্যবহার এবং সোয়াব টেস্ট করা ভ্রমণ যন্ত্রণাময় করে তুলবে। ফ্লাইট কম থাকায় যাত্রা হবে দীর্ঘ, যা যাত্রীদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে।

বিশ্বকে আবার উন্মুক্ত করার প্রথম ছোটো পদক্ষেপগুলো শুরু হবে যেসব দেশে যেখানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার এবং সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কম।

বাল্টিক দেশ তিনটি তাই প্রথম যাত্রা শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডও একই পথে আছে। তবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রেও সম্পর্কটা শুরু থেকে গড়ে তোলার মতো হবে।

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের সীমান্ত সংস্থা, বিমানবন্দর, বিমান সংস্থা এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এক মাসেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন এমন একটি প্রস্তাব কার্যকর করার চেষ্টায় যাতে ভ্রমণকারীরা ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন থাকার বাধ্যবাধকতা এড়াতে পারেন। তারা আশা করছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু হবে।

অকল্যান্ড বিমানবন্দর কর্মকর্তা টাস্কারের মতে, সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভাইরাসটির স্থানীয় সংক্রমণ যতটা সম্ভব নির্মূলের কাছাকাছি আনাটা নিশ্চিত করা। ভ্রমণকারীদের নতুন কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। বুকিং করা থেকে শুরু করে ফেরত আসা পর্যন্ত তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত সতর্কবাণী পেতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার করোনাভাইরাস ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন কোভিডসেইফ দুই দেশের মধ্যে ব্যবহারকারীর অবস্থানের উপাত্ত আদানপ্রদানে ব্যবহার করা হতে পারে।

যদি এই পদ্ধতি এই দুই প্রতিবেশীদের জন্য কাজ করে তবে বিশ্বের অনান্য জায়গাতেও ‘ভ্রমণ বুদবুদ’ দেখা দিতে পারে।

অনেক ইউরোপীয় দেশ নির্দিষ্ট কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু করেছে। যেমন, ডেনমার্ক ও নরওয়ে ১৫ জুন একে অপরের জন্য খুলে যাচ্ছে। তবে তারা বাদ দিচ্ছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার আরেক দেশ সুইডেনকে, যেখানে ভাইরাসটি দমানো যায়নি।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুনরায় খোলার ধাপে ধাপে যত বেশি চলাফেরা বাড়বে তত ঝুঁকি আর কাজ বাড়বে; সরকারগুলোরও, ভ্রমণকারীদেরও।

অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী মার্গি ওসমন্ড বলেন, ভ্রমণ আগের মতো আর সহজ এবং স্বতঃস্ফূর্ত হবে না। আমি জানি না যে এটি আরও ব্যয়বহুল হবে কিনা; তবে ভ্রমণকারীকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।

বিশ্বের বেশিরভাগ ব্যস্ততম বিমানবন্দরে যাত্রী চলাচল ৯০ শতাংশ বা তার বেশি কমার পর এখন খানিকটা বাড়ছে। বিমানবন্দরের সব কর্মী এখন মাস্ক ও গ্লাভস পরে থাকছেন। দুবাইয়ের বিশাল বিমানবন্দরের আগত সব যাত্রীকে এখন থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্ক্যান করা হচ্ছে তাপমাত্রা মাপতে। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও এখন এটি চালু হচ্ছে।

এয়ারলাইন্সগুলোও তাদের নিজস্ব রক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলছে। বিশ্বজুড়ে তারা ফ্লাইটে খাদ্য এবং পানীয় সেবা কমিয়ে ফেলছে। সবার জন্য মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউরোপের জনপ্রিয় বাজেট ক্যারিয়ার রায়ানএয়ারে এখন যাত্রীদের বাথরুম ব্যবহার করার আগে অনুমতি চাইতে হবে যাতে লাইন তৈরি না হয়।

উচ্চ-ঝুঁকির দেশগুলোতে ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ চলছে।

এই জুনেই তাইওয়ান এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার অংশ হিসাবে ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক সান ফ্রান্সিসকো থেকে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে উড়াল দেবেন। বোর্ডিংয়ের আগে যাত্রীদের পরীক্ষা করা হবে। পৌঁছানোর তিন, পাঁচ, সাত, ১০ ও ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা হবে। গবেষকরা দেখতে চাচ্ছেন, কত আগে পজিটিভ টেস্ট আসে। তারা জানতে চাচ্ছেন ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন পর্ব সংক্ষিপ্ত করা যায় কিনা।

কিছু সংস্থা ইতিমধ্যে নিজস্ব যাত্রা শুরু করেছে। গত এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের কিছু অংশের মধ্যে সবার আগে উন্মুক্ত করা হয় ব্যবসায়িক ভ্রমণ।

প্রাইভেট জেটের ব্যবহারও বাড়ছে তবে প্রথম শ্রেণির সুবিধা পাওয়া এই যাত্রীদেরও হয়তো পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিমানে মাস্ক পরতে হচ্ছে বা কয়েকটা দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে।

তাই আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউ ইয়র্কের একটি ব্যাংক কোয়েনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিনিয়র এয়ারলাইন বিশ্লেষক হেলেন বেকার বলেছেন, আমরা মনে করি, আগামী দুই থেকে তিন বছরে স্বল্প-দূরত্বের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আগের অবস্থায় ফিরে আসবে, তবে দীর্ঘ দূরত্বের বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতে পাঁচ থেকে সাত বছর লাগবে।

কর্পোরেট ভ্রমণে পুরানো অভ্যাসগুলি শেষ পর্যন্ত ফিরে আসবে বলে মনে করেন জেটব্লুর প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড বার্জার। তবে তা কেবল স্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ার পর। তিনি বলেন, আপনি যদি সেই ব্যক্তি হন যিনি প্রচুর ভ্রমণ করেন তবে আপনি ভ্রমণের আগে নিশ্চিত হতে চাইবেন। নিশ্চয়তা না আসা পর্যন্ত লোকেরা বলবে, ‘আমি জুম কল করব’, বা ‘বছরে ছয়টি ট্রিপের পরিবর্তে আমি দু’বার ভ্রমণ করবো’।

আর কিছু নিয়মিত ভ্রমণকারী এরই মধ্যে শিখে গেছেন যে তারা কোনো ভ্রমণ না করেও পুরোপুরি সুখী থাকতে পারেন। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

বাজেটে পর্যটন খাতের জন্য নেই প্রণোদনা
করোনার পর বাংলাদেশের ১০ ভ্রমণ গন্তব্য

আপনার মতামত লিখুন