শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লাইফস্টাইল

বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করলেন কৃষ্ণাঙ্গ ভ্রমণকারী জেসিকা নাবনগো

অনলাইন ডেস্ক
১৫ অক্টোবর ২০১৯

কোনও কোনও মানুষ সর্বোচ্চ উঁচুতে লাফিয়ে বা দ্রুত দৌড়ে রেকর্ড গড়েন। কিন্তু জাতিসংঘের একজন কর্মী থেকে ট্রাভেল ব্লগার বনে যাওয়া জেসিকা নাবনগো অন্য এক কারণে রেকর্ড করেছেন। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে তিনি বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং তা লিপিবদ্ধ করেছেন।

২০১৬ সালের মধ্যে ৬০টি দেশ ভ্রমণ করেন জেসিকা এবং পরবর্তী বছরগুলোতে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের সবগুলোতেই ভ্রমণ করেন তিনি। গত ৬ অক্টোবর নিজের ইন্সটাগ্রাম পেজে এক পোস্ট করে জেসিকা দাবি করেন যে, তিনি তার তালিকার সবশেষ দেশ সিসিলিতে পৌঁছেছেন।

তিনি লিখেন, সিসিলিতে স্বাগতম!! ১৯৫টি দেশের ১৯৫ তমটিতে! অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু আমি এখন এই পুরো কমিউনিটিকে আপনাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা আমাদের পথচলা ছিল এবং এই পথচলায় যারা আমার সঙ্গে এসেছেন সবাইকে ধন্যবাদ।

প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের জেসিকার এই দাবি অবশ্য বিতর্কের ঊর্ধে নয়। এর আগে আরেকজন বিশ্ব ভ্রমণকারী ওনি স্পটস ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দাবি করেন যে, প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন তিনি। আর এই বিশ্ব ভ্রমণে তার ৪০ বছর লেগেছে বলেও জানান তিনি।

স্পটস বলেন, তিনি গাইড, টিকিট ও পাসপোর্ট স্ট্যাম্প এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ডসহ একটি ভিডিও প্রজেক্টের মাধ্যমে তার ভ্রমণের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারবেন।

উগান্ডান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জেসিকার জন্ম ডেট্রয়টে। তবে দুই পাসপোর্টধারী জেসিকার এই বিশ্বভ্রমণ কেবল রেকর্ড বইয়ে নাম ওঠানোর জন্য ছিল না। তার উদ্দেশ্য ছিল- যাতে করে নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরাও এমনটা কিছু করতে পারে।

কলেজ শেষে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ছয় অংকের টাকার চাকরি পাওয়ার পর এবং নিজের জন্য থাকার জায়গা কিনতে পেরে তিনি ভেবেছিলেন তার ‘দ্য আমেরিকান ড্রিম’ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু তার কাজ তাকে সন্তুষ্টি দেয়নি।

টাকা উপার্জনের জন্য তিনি তার কন্ডো ভাড়া দেয়া শুরু করেন। তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে জাপানে ইংরেজি শেখানোর চাকরি নেন, পরে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসে যোগ দেন এবং সেখান থেকে জাতিসংঘে কাজ নেন; যা তাকে বেনিন ও ইতালি নিয়ে যায়। কিন্তু এগুলো জেসিকার ভ্রমণের ক্ষুধা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

তবে শুধু টিকিট কিনতে পারার অর্থ এই নয় যে ভ্রমণ খুব সহজ বা ঝঞ্ঝাবিহীন ছিল। না চাইলেও কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভিড়ের মধ্যেও তিনি আর সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন। তার কালো গায়ের রঙ এবং মোড়ানো মাথাও তাকে ব্যতিক্রমী করে তোলে।

এখন পর্যন্ত ১৫০ জন মানুষ বিশ্বের সবগুলো দেশ ভ্রমণ করেছে বলে জানা যায়। তাদের অধিকাংশই আবার শ্বেতাঙ্গ, যারা ইউরোপীয় পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করেছে- যাদের অনেক জায়গায় ‘মিশে’ যাওয়ার সুযোগ ছিল।

২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া দেশের সংখ্যা ১৯৩টি। এছাড়া ‘নন-অবজারভার স্ট্যাটাস’ পাওয়া আরও দুটি দেশ রয়েছে।

জেসিকা বলেছেন, তিনি সবগুলো দেশই ভ্রমণ করেছেন। তার পাসপোর্টে নাইজেরিয়া, কিউবা, ‍তুরস্ক ও লাওস থেকে শুরু করে সব দেশেরই সিল রয়েছে।

নিজের ভ্রমণে খরচ মেটাতে জেসিকা জেট ব্ল্যাক নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। যারা আফ্রিকায় ছোট গ্রুপ ট্রিপ আয়োজন, এছাড়া ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি যেমন টি-শার্ট এবং পাসপোর্ট কভারের মতো জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকে।

এমনকি একজন প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে জেসিকা বিভিন্ন হোটেল ও আতিথেয়তা ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। যাদের অনেকেই আবার জেসিকার প্রশংসার ভরা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের বিনিময়ে তাকে বিনামূল্যে থাকতে দেয়। এছাড়া দাতব্য পেজ গোফান্ডমি থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করে থাকেন জেসিকা।

সিএনএন ট্রাভেলকে ২০১৮ সালে জেসিকা বলেন, নারী হিসেবে বিশ্ব ঘুরে বেড়ানো খুব কঠিন। আমার বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি একজন পতিতা- এমন অভিযোগও শুনতে হয়েছে। এর আগে আমার পেছন পুরুষরা ঘুরে বেড়িয়েছে। আমি রাস্তার হামলার শিকার হয়েছি। এমন আরও তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন জেসিকা।

আফ্রিকায় একজন আমেরিকান-আফ্রিকান

একজন আফ্রিকান হওয়া সত্ত্বেও জেসিকার আফ্রিকা সফর কিন্তু খুব মধুর ছিল না। অনেক সময় তাকে শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের পেছনে দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে, আবার অনেক সময় উন্মুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সীমান্ত পাড়ি দেবার সময় ঘুষ দিতে হয়েছে তাকে।

জেসিকা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমি যে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলাম তা হাস্যকর ছিল। শুধু শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানই নয়, কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের কাছ থেকেও অপ্রত্যাশিত ব্যবহার পেয়েছি।

যদিও কিছু দেশে ঘোরার অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। যেমন- সেনেগাল। দেশটা দারুণ। আপনি সেখানে আফ্রিকানদের ওপরে শ্বেতাঙ্গদের অগ্রাধিকার দিতে দেখবেন না। তারা সবার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার করে। ঘানাও একই রকম


অনির্বাচিত দূত

অনেক সময় দেখা যায়, পরিস্থিতি পুরো উল্টে যায়, তখন তিনি মার্কিনিদের পক্ষ হয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে ওইসব দেশে, যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে বা বন্দুক সহিংসতার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।

জেসিকা বলেন, যখন আমি অন্য দেশে ছিলাম, তখন অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কতটা নিরাপদ? বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য।

তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি- হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কিছু শহুরে এলাকায় ‍অনেক ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু আপনি সংখ্যালঘু হলে গ্রাম্য এলাকায়ও ঝুঁকি রয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা অদ্ভুত এবং কঠিন।

যদিও জেসিকা নিজেকে একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে মনে করেন না; কিন্তু মাঝে মাঝে তার উপস্থিতি ভিন্নতা তৈরি করে বা কোনও কিছুকে সবাই ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করে। অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মধ্যেই এই কমন মনোভাব রয়েছে, অর্থাৎ নিজস্বতা বজায় রাখা।

এই কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার মধ্য দিয়ে জেসিকা একজন সাংস্কৃতিক দূতের ভূমিকা পালন করছেন। আর তার ইন্সটাগ্রামের পোস্টে সেটাই ফুটে ওঠে।

এই প্লাটফর্মটির প্রশংসা করলেও এর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন জেসিকা। কারণ অনেকেই আফ্রিকা মানুষদের বস্তু হিসেবে মনে করে। অনলাইনে বহুবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন জেসিকা।

তিনি বলেন, ইন্সটাগ্রাম দারুণ। আমি এটা খুব পছন্দ করি। এটা আমাকে একটা প্লাটফর্ম দিয়েছে যাতে আমি মানুষজনকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে সচেতন করতে পারি।জেসিকা বলেন, কিন্তু এটা (ইনস্টাগ্রাম) খুবই ভয়াবহ ও ঘৃণ্য জায়গা কারণ অনেকেই তাদের ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়াতে চান। তারা লাইক পেতে চান। তারা চান তাদের ছবি ভাইরাল হোক। তাই তারা যে কাউকে এবং যে কিছুকে ব্যবহার করতে রাজি। তিনি বলেন, আমরা আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করতে পারি না। আমরা পারি না।

জেসিকা আরও বলেন, শুধু দেশ-বিদেশ ঘোরাটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি নারী ভ্রমণকারী, কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপারে মনোভাবের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বর্ণবাদ একটা বিষয়। আমরা এটাকে এড়াতে পারি না। এভাবেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে। আমি পৃথিবীতে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে জন্মেছি এবং এটার কারণে যেকোনো জায়গায় যেতে কোনও বাধাকেই আমি পথ রুখতে দেবো না। সেটা সর্বত্রই।

ভারত ভ্রমণে শীর্ষে বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশ হতে পারে মুসলিমবান্ধব পর্যটনের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য: পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

আপনার মতামত লিখুন