শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উদয় হাকিমের ভ্রমণ কাহিনী

আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এত সহজ! (৬)

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে ফিরে
০৪ জুলাই ২০১৯
আয়ারল্যান্ডে গ্রামের একটি ক্যাসেল

আয়ারল্যান্ডে গ্রামের একটি ক্যাসেল

আয়ারল্যান্ডের ক্লিফস অব মহের যাদুঘরে সংরক্ষিত একটি আলোকচিত্র

আয়ারল্যান্ডের ক্লিফস অব মহের যাদুঘরে সংরক্ষিত একটি আলোকচিত্র

পাসপোর্ট হাতে পেলাম। লোকটাকে থ্যাংকস বলে ঘুরে দাঁড়ালাম। ওই কক্ষটার সঙ্গেই নিচে নামার সিঁড়ি। ভাবছিলাম, নিচে নেমে যাই। কী মনে করে ফিরলাম ওয়েটিং রুমের দিকে। একটু আগেই যেখানে বসে ছিলাম। ওখানে গিয়ে আগে দেখে নিই, ভিসা দিলো কি না। মুহূর্তেই ভাবলাম, দরকার কি? এটা তো কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। দেখে নিই।

পাসপোর্ট খুললাম। চলে গেলাম শেষের দিকে। বিভিন্ন দেশের ভিসায় পাসপোর্টের পাতা শেষের দিকে প্রায়। খুলে দেখলাম ভিসা দিয়েছে! কিন্তু অল্প দিনের। এক মাসের। যাকগে, তবু তো আয়ারল্যান্ড যাওয়া লেখা হলো ভাগ্যে। ভিসাটা ঠিক যুক্তরাজ্যের ভিসার মতোই। কালার, ডিজাইন একই। মিল আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেঙ্গেন ভিসার সঙ্গেও। যে ভিসায় ইউরোপের দেশগুলোতে ঘোরা যায়।

সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলাম। শরীরটা বেশ হালকা লাগছিল। মন আরো হাল্কা- হাওয়ামে উড়তা যায়ে। অজয় যেন আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। হাসিমুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিল হয়তো। ভিসা পেয়েছেন? হ্যাঁ, পেয়েছি। কত দিনের? এক মাসের। কংগ্রাচুলেশন। থ্যাংক ইউ। আপনি লাকি। কীভাবে? এত অল্প সময়ে ভিসা কেউ পায় না। এমনকি ডিপ্লোম্যাটরাও না! শুরু হলো আমার সলিলকি। মনের সঙ্গে কথা বলা। সত্যিই আমি লাকি? তাহলে তো একজনকে ফোন দিতে হয়। কোন সে একজন? যার নাম লাকি! তাকে কেন? সেটুকু আপাতত থাক বাকি।

প্রথমজনকে ফোন দিলাম দিল্লিতে আয়ারল্যান্ড দূতাবাসের সামনে থেকেই। খুশি হলো সে। একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিল্লি গিয়েছিলাম। ভিসা হলে আয়ারল্যান্ড যাব। না হলে ফিরব ঢাকায়। আগে শুনেছিলাম, তিন সপ্তাহের কমে আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। শাহরিয়ারের গল্প তো বলেছিলাম। বছর দুয়েক লেগেছিল তার ভিসা পেতে। যদিও তার কেসটা ছিল ভিন্ন। বেচারার বউ ছিল আয়ারল্যান্ডে। আর সে বাংলাদেশে। বিয়ে করেও বউয়ের কাছে যেতে পারছিল না।

ডাক্তার ইকবালকে ফোন দিলাম। বললাম, ভিসা হয়েছে। তিনি খুবই খুশি হলেন। বললেন, হোটেলে চলে আসেন। সন্ধ্যায় বেড়াতে যাব।

হোটেলে না গিয়ে বসলাম দূতাবাসের সামনের সেই পার্কে। দু’টো দিন ওই পার্কে কতবার বসেছি তার ইয়ত্তা নেই। বেঞ্চগুলো কেমন পরিচিত, আপনজন হয়ে উঠেছিল। আর কাঠবিড়ালিগুলো মনে হচ্ছিল আমারই নাতি-পুতি,  পরিবারের সদস্য। তখনো কাঠবিড়ালিগুলো খেলছিল। দৌড়াচ্ছিল। দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকাচ্ছিল। ধন্যবাদ, কাঠবিড়ালি তোমাদের।

আয়ারল্যান্ডের ক্লিফস অব মহের যাদুঘরে সংরক্ষিত একটি আলোকচিত্র

মোজাইক করা একটা বেঞ্চে বসে ছিলাম। এক পশলা লু হাওয়া বয়ে গেল। ফোন দিলাম খাদেমুল সাহেবকে। সে আমাদের অফিসের ট্রাভেল ম্যানেজার। বিমানের টিকিটসহ বিভিন্ন বিষয় টেককেয়ার করেন। জানালাম, ভিসা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ডাবলিনের টিকিট কনফার্ম করেন। কাল সকালেই যেতে চাই। খাদেমুল সাহেবের ডাক নাম সেলিম। আমাদের সঙ্গে একবার করপোরেট ক্রিকেট খেলেছিলেন। কাজের চাপে আর খেলতে পারেননি। যদিও করপোরেট ক্রিকেটে আমরা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। প্রতিবারই পুরো টিম নিয়ে বিদেশ ঘুরে এসেছিলাম। তিনি যেতে পেরেছিলেন ওই একবারই।

সেলিম জানালেন, তিনি আগেই টিকিটের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে রেখেছিলেন। পরদিন ভোর ৬টায় জেট এয়ারের ফ্লাইট আছে। দুপুর নাগাদ ডাবলিন পৌঁছাবে। সেটি কনফার্ম করবেন কি না, জানতে চাইলেন। সমস্যা হলো- ভোর ৩টার সময় উঠে দৌড়াতে হবে এয়ারপোর্টের দিকে। রিপ্লাই দিলাম, কোনো সমস্যা নেই। দরকার হলে রাতে ঘুমোব না। কনফার্ম করেন। যেভাবেই হোক খেলার আগের দিন পৌঁছাতে হবে। বিকেলে সময় পেলে স্টেডিয়াম ঘুরে আসা যাবে।

পার্ক কেমন যেন মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। তবু যেতে হচ্ছিল। গাছের ছায়ার ঘেরা রাস্তাটা কেমন স্নিগ্ধ মনে হচ্ছিল। আরো বেশি মায়াময় লাগছিল।

অটো নিয়ে সরাসরি হোটেলে। ততক্ষণে ডাক্তার ইকবালও রুমে চলে গেছেন। খানিকটা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কোথায় যাব?

কক্সবাজার সৈকত গিলে খাচ্ছে ব্যবস্থাপনা কমিটি
আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এত সহজ! (৭)

আপনার মতামত লিখুন