শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
গাঁও গেরাম

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাস্তবায়ন চায় নোয়াখালীবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ অক্টোবর ২০১৯

নোয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে জেলার ধর্মপুর ইউপির উত্তর ওয়াপদা বাজার এলাকায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দ্রুত বিমানবন্দর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন নোয়াখালীবাসী।

তাদের মতে নিঝুম দ্বীপে বিদেশি পর্যটক আসতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটকরা আসতে পারছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের পর্যটন শিল্প। যদি নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মিত হয় তাহলে প্রচুর পরিমাণে দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরা আসতে শুরু করবে। এতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে উন্মোচিত হবে আরেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

১৯৯৫ সালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদফতরের পূর্বে চর শুল্যকিয়া নামক স্থানে সরকারিভাবে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য কৃষি অধিদফতর বীজ সংরক্ষণের প্রায় ৪০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। নির্মাণ সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের রানওয়ের, যেখানে প্রাথমিকভাবে খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তু কিছু জটিলতায় সংযোগ সড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে।

কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে থমকে যায় নোয়াখালীর শিল্প সম্ভাবনা এবং পরবর্তীকালে সরকারি উদ্যোগে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানা গড়ে না উঠলেও বেসরকারী উদ্যোগে অনেকগুলো এগ্রো বেইজড ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠে এ অঞ্চলে। তাই সাগরতীরের নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা হলে এ অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে সরকার।

জানা গেছে, নোয়াখালী থেকে দ্রুত সময়ে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে যাওয়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর স্থাপন নোয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের এ দাবি অবশেষে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর স্থাপন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি তোলেন নোয়াখালীবাসী।

এদিকে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির পক্ষ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এভিয়েশন অথোরিটি কোনো ফান্ড না দেয়ায় এ সমীক্ষা কমিটির কাজে বিলম্ব হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ধর্মপুর ইউপির উত্তর ওয়াপদা বাজারের পাশে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদফতরের আগের তৈরি রানওয়েসহ বিশাল জায়গায় প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নির্মাণ কাজের পরামর্শক নিয়োগ শেষে সমীক্ষা ও যাচাইয়ের জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ফান্ড না দেয়ায় তারা কাজ করতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিমানবন্দর সমীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ড. মোহাম্মদ ইউছুফ মিয়া জানান, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি কোনো ধরনের ফান্ড না দেয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি না।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ মোট ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক ফান্ড না থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনি।

প্রস্তাবিত জায়গায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২২ জুলাই সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থান পরিদর্শন করে বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেন। পরে তিনি বিমানবন্দরের স্থান পরিদর্শনে এসে বলেন, আমি নোয়াখালীর সন্তান হিসাবে নোয়াখালীর জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিলো দীর্ঘদিন।

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় নোয়াখালী অঞ্চলে প্রবাসীদের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হলে তারা সরাসরি বিদেশ থেকে নোয়াখালীতেই আসতে পারবে। একই সঙ্গে নিঝুম দ্বীপে বিদেশি পর্যটকরাও আসতে পারবে। এতে তাদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হবে না এবং ঢাকার বিমানবন্দরের উপরও চাপ কমে যাবে।

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। দেশের স্বার্থে এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্য, পর্যটন সম্ভাবনা ও বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের সুবিধার্থে নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। তাই বিমানবন্দরের জন্য পূর্বের অধিগ্রহনকৃত জমিতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ সমাপ্ত করা হলে পাল্টে যাবে বৃহত্তর নোয়াখালীর সার্বিক চিত্র।

নোয়াখালীর প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী জানান, নোয়াখালীতে বিমানবন্দর এখন আর স্বপ্ন নয় এটা বাস্তব। আমি বারবার বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন করেছি। তাই জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি যৌক্তিক।

নোয়াখালী জেলা এখন দেশের একটি উন্নত অতি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জেলা। এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুইটি ইপিজেড করার ঘোষণা দিয়েছেন। যার কাজ অল্প কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে শুধু ধানই হয় না এখানে বিভিন্ন ফসলসহ বিভিন্ন প্রজাতীর মৎস্য উৎপন্ন হয় যা দেশে-বিদেশে রফতানি হয়। এখানে দেশ-বিদেশের অনেকেই কাজ করছে।

নোয়াখালীর ডিসি তন্ময় দাস জানান, নোয়াখালীতে বিমানবন্দর নির্মানের ঘোষণা দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সম্মতি রয়েছে। জেলাবাসী দ্রুত বিমানবন্দর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তাদের একমাত্র দাবি- ‘নোয়াখালিতে বিমানবন্দর চাই।’

তিনি আরো জানান, আমরা বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত। কিছুদিনের মধ্যে একটি বিশেজ্ঞক টিম আসবে। আশা করছি বিমানবন্দর নির্মাণ হলে নোয়াখালীর অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে।

মদিনায় গেল বিমানের ফ্লাইট
লন্ডনের বিশ্ব পর্যটন মেলায় অংশ নেবে বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন