শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

রপ্তানিতে সবার আগে ওয়ালটন

 নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ মার্চ ২০২০
মুঠোফোনের কারখানায় দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করছেন দেশি শ্রমিকেরা। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানায়

মুঠোফোনের কারখানায় দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করছেন দেশি শ্রমিকেরা। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানায়

যা ছিল স্বপ্ন, তা এখন বাস্তব। মুঠোফোন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই। শুধু কথা বলার জন্য ফিচার ফোন নয়, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোনও তৈরি হচ্ছে এ দেশের কারখানায়। মুঠোফোন কেনার সময় আপনি যদি একটু খেয়াল করে মোড়কটি দেখেন, তাহলে দেখবেন লেখা আছে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ অথবা ‘বাংলাদেশে সংযোজিত’।
এর মানে হলো, কেউ দেশেই মুঠোফোন তৈরি করে। আবার কেউ কেউ তৈরির পথে প্রথম ধাপ, অর্থাৎ সংযোজনে রয়েছে। যেমন দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের মুঠোফোন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে।
দেশে এখন পর্যন্ত মুঠোফোন উৎপাদনকারী বা ম্যানুফ্যাকচারারের তালিকায় একমাত্র প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ২০১৭ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে মুঠোফোন কারখানা উদ্বোধন করা হয়। রপ্তানিতেও তারা এগিয়ে গেল।
ওয়ালটন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানি শুরু করছে। এই প্রথম ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। আমেরিকার একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ওয়ালটনের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিচ্ছে। অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে ওই ব্র্যান্ডকে স্মার্টফোন তৈরি করে দিচ্ছে ওয়ালটন।
মুঠোফোন উৎপাদক ও সংযোজনকারীর মধ্যে পার্থক্য হলো, সংযোজক বিদেশ থেকে সব যন্ত্রাংশ আমদানির পর সংযোজন করে তা বাজারজাত করে। আর উৎপাদক কিছু যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে। ওয়ালটন জানিয়েছে, তারা মেকানিক্যাল ডিজাইন, মোল্ড, ফোন ও চার্জারের হাউজিং অ্যান্ড কেসিং, চার্জার, ব্যাটারি, পিসিবি, পিসিবিএ, মাদারবোর্ড ও ডিসপ্লে তৈরি করে। এ ছাড়া চার্জার, ব্যাটারি ও ইয়ারফোন তৈরি করে তারা।
ওয়ালটন বলছে, মুঠোফোন কারখানায় তারা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪ হাজার প্রকৌশলী ও কারিগরি কর্মীর। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা মাসে ২০ লাখ ফিচার ফোন ও ৮ লাখ স্মার্টফোন। এর পাশাপাশি প্রতি মাসে ২০ লাখ চার্জার, ১০ লাখ ব্যাটারি ও ১০ লাখ ইয়ারফোন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে তারা।
দেশে কারখানা চালুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মুঠোফোন উৎপাদন ও বাজারজাত করেছে ওয়ালটন। এর মধ্যে রয়েছে ৪২টি মডেলের স্মার্টফোন। এর পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ইউনিট। আর ২৮টি মডেলের দেশে তৈরি ফিচার ফোন বাজারে ছাড়া হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৩ লাখ ইউনিট।
২০১৯ সালে ওয়ালটন ১২ লাখের বেশি স্মার্টফোন ও ৪১ লাখ ৭৬ হাজারের কিছু বেশি ফিচার ফোন বিক্রি করেছে ওয়ালটন।
ওয়ালটন মুঠোফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম রেজওয়ান আলম বলেন, দেশের বর্তমান কর–কাঠামো অনুযায়ী আমদানিকারকদের সঙ্গে সংযোজনকারীদের করভারের পার্থক্য ৩০ শতাংশ। কিন্তু সংযোজনকারীদের সঙ্গে উৎপাদনকারীদের করভারের পার্থক্য মাত্র ৫ শতাংশ। এর ফলে দেশে মুঠোফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও নতুন আর কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। এতে দেশের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
গত ১ মার্চ গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ওয়ালটনের পণ্য ব্যবহার করে দেশের মানুষ খুশি। ওয়ালটন যে অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তা থেকে তারা বিচ্যুত হয়নি, বরং যা আশা করেছি তার থেকেও আরো সুন্দরভাবে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আমেরিকার বাজারে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে। ওয়ালটনের মাধ্যমে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ আমরা আমেরিকার বাজারে দেখতে পাব।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটর কারখানার উদ্বোধন করেন। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন রপ্তানি, ভারতে বিপুল পরিমাণ এসি রপ্তানি, অল-ইন-ওয়ান ওয়ালটন পিসি এবং ওয়ালটন টিভির নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘আরওএস’ উদ্বোধন করেন।
একই সঙ্গে ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে অভিহিত হলো।

এক্সিকিউটিভ-এইচআর পদে লোক নেবে ওয়ালটন
স্বপ্ন যখন বাস্তব

আপনার মতামত লিখুন