শনিবার, ১১ মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

ওয়ালটনকে নিয়ে চবি শিক্ষার্থীর আবেগঘন পোস্ট, পেলেন উপহার

অনলাইন ডেস্ক
৩১ মার্চ ২০২১

বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেজো। দুই বোনের একজন বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। অন্যজন পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে উপার্জন তার। করছেন ফ্রিল্যান্সিংও। এই উপার্জনেই চলে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারের অধিকাংশ খরচ। বলছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন সজীবের কথা। জীবনসংগ্রামের মধ‌্যে দিয়ে কখন শৈশব-কৈশোর কেটে গেছে টের পাননি তিনি। সজীব বলেন, ‘এ সংগ্রাম চলবে।’

পরিবারের সব প্রয়োজন মিটিয়ে কষ্টের টাকায় মা-বাবার শখ পূরণ করতে সব সময় সচেষ্ট সজীব। বাড়িতে একটা ফ্রিজ না হলেই চলছিল না। তাই টিউশনির টাকা জমিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ, ২০২১) বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের একটি ফ্রিজ কেনেন তিনি। এর আগে মাকে ওয়ালটনের মোবাইল ফোন এবং টিভিও কিনে দিয়েছেন টিউশনির টাকায়। এ আনন্দ বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ভাগ করতে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেন সজীব।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা কথার সঙ্গে লিখলেন, ‘আজ নিজের টাকায় বাসায় নতুন ফ্রিজ কিনলাম।...আম্মু আজ অনেক খুশি। সারা দিন ঘুরে-ফিরে ফ্রিজের কাছে যাচ্ছে আর বলছে, ফ্রিজটা সুন্দর হয়েছে। আম্মু খুশি, তাই আমিও খুশি।...মধ্যবিত্ত পরিবারে ছোটখাটো হলেও নতুন একটা কিছু আসলে যে খুশি আর আনন্দ কাজ করে, না চাওয়ার আগে সব পেয়ে যাওয়া রিচ কিডরা হয়তো এইসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়।’

ইমরান হোসেন সজীব নামে নিজের ওই ফেসবুক আইডিতে তিনি ওয়ালটন থেকে কেনা ফ্রিজটির একটি ছবিও পোস্ট করেন। লেখেন, ‘এই বছর অ্যাডমিশন টেস্ট প্রোগ্রামে উপার্জিত কিছু টাকায় আমার আম্মুর জন্য কেনা গিফট—ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের ছবি। এটি সম্পূর্ণভাবে দেশে প্রস্তুতকৃত। দেশি পণ্য কিনুন, দেশের প্রযুক্তি এগিয়ে নিতে সাহায্য করুন।’

কিছুক্ষণের মধ্যে ওই পোস্টটি চোখে পড়ে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদের। তিনি কর্মকর্তাদের ডেকে ইমরান হোসেন সজীবকে তারই কেনা ফ্রিজটি উপহার দিতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে। আমন্ত্রণ জানানো হয় ঢাকার ওয়ালটন করপোরেট অফিসে। ফ্রিজ কেনার পুরো টাকাই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার হাতে ওয়ালটন ফ্রিজের উপহারের টাকা তুলে দেন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমদাদুল হক সরকার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহজালাল হোসাইন লিমন এবং অপারেটিভ ডিরেক্টর শহীদুজ্জামান রানা।

সজীব জানান, তার বাড়ি পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার হাসপাতাল পাড়ায়। অভাব-অনটন আর শত না-পাওয়ার মধ্য দিয়েই লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ২০১৩ সালে। সীতাকুণ্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন ২০১৫ সালে। মামার বাড়িতে থেকেই চলে পড়াশোনা। এর পর উচ্চ শিক্ষার জন্য সুযোগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০১৬-১৭ সেশনে।

সজীব বলেন, ‘মায়ের কোনো শখ আমি অপূর্ণ রাখতে চাই না। এজন্যই ফ্রিজটি কেনা। আর প্রযুক্তিপণ্য কেনায় আমি সর্বাগ্রে বিবেচনা করি ওয়ালটনের কথা। আমি জানি, গাজীপুরের বিশাল কারখানায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের পণ্য তৈরি করছে ওয়ালটন। ওয়ালটন পণ্য দামে যেমন সাশ্রয়ী, এর গুণগত দিকও আন্তর্জাতিক মানের। প্রযুক্তিপণ্যে ওয়ালটন আমাদের দেশের গর্ব। ওয়ালটনের পণ্য কিনলে আমাদের দেশই উপকৃত হবে। আমদানিকৃত বিদেশি পণ্যকে অনুৎসাহিত করে দেশীয় পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া আমাদের কর্তব্য।’

সজীব জানান, সামর্থ হলে তিনি সমাজের অসহায়-অবহেলিত-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। নিজের ব্যবস্থাপনায় আশ্রম খুলতে চান সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য। সুযোগ হলে কাজ করবেন ওয়ালটনের জন্য।

ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বাইরেও নানা মানবিক কাজে সম্পৃক্ত ওয়ালটন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ওয়ালটনের তরুণ এমডি সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মানবিক বিষয়ে দৃষ্টি দেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানাজনকে সহায়তা করে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সজীবের পোস্টটির ব্যাপারে তিনি আমাদের জানালে সজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এই শিক্ষার্থীর আবেগঘন লেখা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আসলে ওয়ালটনের প্রতি কোটি কোটি মানুষের যে আস্থা ও ভালোবাসা, তার প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়। মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটাতে সন্তানের এই প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় আমরা শুধু শামিল হতে চেয়েছি।’

ওয়ালটনের ফ্রেমলেস ডিজাইনের নতুন স্লিম মনিটর বাজারে
ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম

আপনার মতামত লিখুন