বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বাংলাদেশে হালাল ট্যুরিজমের অযুত সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার
০৬ আগস্ট ২০১৯

বিশ্বব্যাপী পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে হালাল ট্যুরিজম। পর্যটন বিশ্লেষকদের দাবি, ২০২০ সালে হালাল ট্যুরিজমের আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে কমপক্ষে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মুসলিম ট্যুরিস্টের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫৬ মিলিয়ন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ এবং আগামী দশকে হালাল পর্যটনের আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে।

বিপুল এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এরই মধ্যে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম অনেক দেশ। হালাল ট্যুরিজমে এগিয়ে থাকা দেশগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, জর্দান, মালদ্বীপ, ইরান, লেবানন, ওমান ও সৌদি আরব। এশিয়ার অমুসলিম দেশ জাপান, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াও হালাল ট্যুরিজমের বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো ও পরিবেশের উন্নয়ন, মুসলিম ট্যুরিস্টদের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা ধরনের প্রচারণা, তাদের সহযোগিতায় বিশেষ ওয়েবসাইট ও অ্যাপ খোলা। এসব দেশের হোটেলে মুসলিম পর্যটকদের হালাল খাবার সরবরাহ, নামাজের স্থান রাখা, নারীদের জন্য পৃথক সুইমিংপুলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপুল জনসংখ্যার কারণে বাংলাদেশে বিকল্প অর্থনৈতিক চিন্তা জোরালো হচ্ছে। এই হিসাবে হালাল ট্যুরিজম বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বিশ্বব্যাপী হালাল ট্যুরিজমের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ওআইসির পর্যটনমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে হালাল ট্যুরিজমের সম্ভাবনা তুলে ধরেন এবং এই খাতের বিকাশে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে বিশ্বাসভিত্তিক পণ্য ও সেবার সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি অমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছেও এসব পণ্য ও সেবা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই আমাদের ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

ওআইসির সম্মেলন থেকে ঢাকাকে ২০১৯ সালের জন্য ‘সিটি অব হালাল ট্যুরিজম’ ঘোষণা করা হয়। পর্যটকরা মনে করেন, এই ঘোষণা বাংলাদেশে হালাল ট্যুরিজমের বিকাশের বড় সুযোগ; বিশেষত ওআইসিভুক্ত মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশে মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য, মানুষের ধর্মীয় অনুরাগ, ইবাদত পালনের সহজ সুযোগ, মুখরোচক হালাল খাবার, হালাল পণ্য ও হোটেলগুলোর অনুকূল পরিবেশ তুলে ধরার বড় একটি উপলক্ষ হতে পারে ‘সিটি অব হালাল ট্যুরিজম’-এর ঘোষণা। বাংলাদেশে অবস্থিত ৮৮টি মুসলিম ঐতিহ্য ও স্থাপনা, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, পৃথিবীর বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা আবশ্যক। পাশাপাশি বাংলাদেশের নান্দনিক ও মুসলিম ঐতিহ্যের আদলে গড়ে ওঠা কুটির শিল্প, তাঁতবস্ত্র ও তৈজসপত্রের পরিচিতিও মুসলিম পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যম হতে পারে।

কোনো সন্দেহ নেই, মাল্টি বিলিয়ন ডলারের হালাল ট্যুরিজমের মূল চালিকাশক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য আরব শায়খরা। এখনো ইউরোপই তাদের মূল গমনস্থল। কিন্তু সম্প্রতি এশিয়ার দেশগুলো তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, এমনকি সন্ত্রাসকবলিত পাকিস্তানেও আরব পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যকটদের নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যাপক প্রচারণার কারণে হালাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে দেশগুলো।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডাব্লিউটিটিসি) মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ১০টি পর্যটনকেন্দ্রের একটি। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সরকারও এরই মধ্যে পর্যটন খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ এবং বিদেশি পর্যকটদের জন্য পৃথক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রসংশনীয়। সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন দ্বীপগুলোকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে দেশের পর্যটনশিল্পের চেহারা বদলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এসব ‘পর্যটন পরিকল্পনা’য় ‘হালাল ট্যুরিজম নীতিমালা’ অবলম্বন করলে দেশের পর্যটন খাত আরো বেশি উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।

হালাল ট্যুরিজম শুধু বিদেশি পর্যটকদের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ নয়, স্থানীয় পর্যটকদের বিবেচনায়ও তা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বছরের বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। হালাল ট্যুরিজম দেশের ধর্মানুরাগী মানুষের স্বস্তি ও তৃপ্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, কোনো সন্দেহ নেই। পরিশেষে বলা যায়, হালাল ট্যুরিজমের বিকাশে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে।

কাশ্মির ছাড়ছে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী
উনাবাতুনা- পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমুদ্র সৈকত

আপনার মতামত লিখুন