শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের পথিকৃৎ নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস আজ

 নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম। তার প্রতিষ্ঠিত ওয়ালটন এখন বিশ্বের কাছে শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরছে। বাংলাদেশও যে পারে বিশ্বের কাছে সেটিই প্রমাণ করছে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য। আজ এই মহান ব্যক্তির দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস। ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।

কর্মজীবনে অত্যন্ত সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ এসএম নজরুল ইসলাম ৭ মে, ১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।

প্রথমে বাবা এস এম আতাহার আলী তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হলেও স্বাধীনতার পর আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সব মহলে। যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছেন, সফলতা পেয়েছেন সেখানেই।

দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সংক্ষেপে আরবি গ্রুপ। পরবর্তীতে তা নাম বদলে হয়ে যায় ওয়ালটন গ্রুপ।

এক সময় দেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় ওয়ালটন পণ্যের। এরপর শুরু হয় একই গ্রুপের আরেক ব্র্যান্ড মার্সেলের পথ চলা। নজরুল ইসলামের দূরদর্শিতা ও সুযোগ্য পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। এ গ্রুপকে এগিয়ে নিতে বিশাল ভূমিকা রাখছেন তাঁর মেধাবী সন্তানরা।

২০০৮ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় ওয়ালটন পণ্যের। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য এবং সেবা দিয়ে ওয়ালটন জয় করে নেয় গ্রাহকের আস্থা।

বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়ালটনের উদ্যোগকে অভিহিত করেছেন প্রকৃত শিল্প হিসেবে।

তবে শুধু দেশেই বাজারজাত করে সীমাবদ্ধ থাকেনি ওয়ালটন। উদ্যোগ নেওয়া হয় বিদেশে রপ্তানির। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে শুরু হয় ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি। বর্তমানে প্রায় ৩৫টি দেশে যাচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। মেড ইন বাংলাদেশ লেখাটি এখন বিশ্বের কাছে সম্মান আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে।

ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণাগার। প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি।

ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলহাজ এসএম  নজরুল ইসলাম বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি তাঁর গ্রামে এসএম  নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহযোগিতা দিতেন। অসুস্থ ও দরিদ্র মানুষের জন্য তাঁর হৃদয় কাঁদতো। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য বয়স্কভাতা প্রকল্প চালু করেছেন।

মহৎপ্রাণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম ২০১৭ বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাতে না-ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

এস এম নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওয়ালটন গ্রুপের করপোরেট অফিসে (প্লট-১০৮৮, রোড- ৮০ফিট-২, ব্লক-আই, বসুন্ধরা আ/এ) আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া মিরপুরে ওয়ালটন গ্রুপের মিডিয়া অফিস, সংশ্লিষ্ট সব অফিস, কারখানা ও দেশব্যাপী সব ওয়ালটন প্লাজায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের বড় ছেলে এসএম নূরুল আলম রেজভী তাঁর পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

‘সোনার তরী’ ও ‘অচীন পাখি’ উদ্বোধন ২৮ ডিসেম্বর
আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে ওয়ালটন-জার্মান যৌথ উদ্যোগ

আপনার মতামত লিখুন