পর্যটনের ঈদ কেটেছে নিরানন্দে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা দেশের পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চলছে দুর্দিন। প্রতিবছরের মতো এবারও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা ঈদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এবারের ঈদেও তাঁদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি, কাটেনি দুর্দিন। ঈদে অন্তত ২৫০-২৭০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। করোনার কারণে সারা বিশ্বে পর্যটন খাতের ৭৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯৬ শতাংশ।
পর্যটনসংশ্লিষ্টদের আনন্দবিহীন ঈদ কেটেছে জানিয়ে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘সবই বন্ধ। হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের দরজাও খুলতে দেয়নি। সাধারণ মানুষ ঈদের পরদিন থেকে ট্র্যাভেল করে। এবার সে সুযোগ পায়নি। ফলে পর্যটক ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব মানুষ এবার আনন্দবিহীন ঈদ উদ্যাপন করেছে।’
কুয়াকাটার পর্যটন রিসোর্ট ইলিশ পার্কের মালিক আর এম তুষার বলেন, ‘প্রতি ঈদে পর্যটকদের আনাগোনায় কুয়াকাটা জমে ওঠে। কিন্তু এখন কুয়াকাটা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে, কোথাও কোনো পর্যটক নেই। সব হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট বন্ধ। আমরা বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছি, এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ ২০১৫ সালে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পর্যটকবান্ধব বিশেষ রিসোর্টটি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। স্বল্প সময়ে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের নজর কাড়তে পেরেছিল ইলিশ পার্ক। কিন্তু করোনা–বাধায় গতবারের মতো এবারের ঈদেও গুনতে হয়েছে লোকসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব বলেন, ‘প্রতি ঈদে পর্যটন বেশ জমে ওঠে। করোনায় পর্যটনশিল্প অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনায় মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। সরকারেরও কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিও মানুষের জীবন এবং জীবিকা দুটো বিষয় টিকিয়ে রাখতে হবে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ট্যুরিজমের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।’
পর্যটনের কোথাও কোনো আশা নেই জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেকটা নির্বাক হয়ে গেছি। আন্তর্জাতিকভাবে এই খাত ৭৩ শতাংশ ডাউন। আর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ৯৬ শতাংশ ডাউন। আমাদের ৪৫ লাখ কর্মী নিঃস্ব, তারা কঠিন ক্রান্তিকাল পার করছে। আমরা কোথাও কোনো আশা–ভরসা দেখতে পাচ্ছি না। কীভাবে পর্যটনসংশ্লিষ্ট মানুষ বাঁচবে জানি না।’
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মার্চের শেষ দিকে সব বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে সব হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট। পরে ২২ আগস্ট থেকে আবার পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলতে শুরু করে। হোঁচট খাওয়া পর্যটনশিল্প প্রাণ ফিরে পায়। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন মালিকেরা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার দফায় দফায় বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।
আপনার মতামত লিখুন