শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

মনোনয়ন অসঙ্গতি: একই কারণে কারও বাতিল কারও বৈধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে ৭৩১ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের বড় অংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী, এমনকি ছয় জন বর্তমান সংসদ-সদস্যের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কারণ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ঋণ ও বিল খেলাপি, অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র দাখিল, হলফনামায় তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য প্রদান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের তালিকায় ভুয়া স্বাক্ষর, দ্বৈত নাগরিকত্বসহ নানা ত্রæটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তবে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র গ্রহণ ও বাতিল করা নিয়ে নানা বিষয়ে বেশ অসংগতি, বৈষম্যের অভিযোগ লক্ষ্য করা গেছে।

ইসির পরিসংখ্যান এবং আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত বিষয়টি যথাযথ সমাধান না করা হলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিশেষ করে বিএনপিসহ বিরোধী জোট নির্বাচনে না যাওয়ায় একধনের সংকট তৈরি হয়েছে। একই সাথে এধরনের পক্ষপাতদূস্ট প্রক্রিয়া সমস্যাকে আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত অবৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের তালিকা ধরে নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ঠুনকো কারণেও যেমন অনেকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তেমনি আছে গুরুতর অপরাধ ও ভুল বা অসংগতি। অপরদিকে কোন কোন প্রার্থীর মনোনয়নপ্রত অসম্পূর্ণ ও অসংগতি থাকলেও প্রার্থীতা বৈধ রাখা রয়েছে বলে দেখা গেছে।

জানা যায়, নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের তথ্যও প্রদান করা এবং হলফনামা যথাযথভাবে পূরণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক প্রার্থিই তা যথাযথভাবে পূরণ করেনি। কিন্তু মনোনয়ন ক্ষেত্রে বিশেষে মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই রির্টানিং অফিসার একই কারণে একজন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ করলেও অন্যজনের টা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দেখা গেছে, হলফনামা অসম্পূর্ণ থাকায় ঝিনাইদহ-১ আসনের বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের আবু বকর এর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। অথচ একই জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ-২ আসনে একই ধরনের সমস্যা থাকলেও বর্তমান এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকীর মনোনয়ন বহাল রেখেছে। তাহজীব আলম সিদ্দিকীর হলফনামা পূরণ না করে শুধু আয়কর রির্টানে উল্লেখিত এবং সংযুক্ত লেখা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের কোন তথ্য কিংবা স্ত্রীর সম্পদের কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনিক হলফনামায় স্ত্রীর নামও উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া মাগুরা-১ আসনে জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান তার হলফনামায় স্ত্রীর কোনো সম্পদের বর্ণনা দেয়নি। অথচ নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের তথ্যও প্রদান করা এবং হলফনামা যথাযথভাবে পূরণ করা বাধ্যতামূলক।

এদিকে এক শতাংশ সমর্থক সঠিক না থাকায় যশোর ৩ আসনের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। একই কারণে বাতিল হয়েছে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের মনোনয়। অথচ এক শতাংশ সমর্থকের তথ্য যথাযথভাবে না থাকার পরও মনোনয়ন বৈধ রাখার নজির আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখতে পেয়েছি। একই ধরনের গুঞ্জন রয়েছে ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল করিমের ক্ষেত্রেও।

তবে নানা ধরনের অসঙ্গতি বেশি থাকায় নির্বাচন কমিশন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাধানের সুযোগ রেখেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে অথবা যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে-উভয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আজ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করা যাবে। এজন্য নির্বাচন ভবনে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ তৈরি করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ জন করে আপিল শুনানি হবে। আপিল শুনানি মনিটওে দেখানো হবে। পাশাপাশি ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। আপিল দায়েরে এক কপি মূল কাগজপত্রের সেট এবং ছয় কপি ফটোকপিসহ সাত সেট জমা দিতে হবে। ১৫ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে ইসি। ৩০ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১ ডিসেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি চলবে আজ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। ওইদিন থেকে শুরু হয়ে নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০০% ক্যাশভাউচার পেলেন ফেনীর ইসমত আরা
প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান, ২১৭ জনকে পুরস্কৃত করলো ওয়ালটন

আপনার মতামত লিখুন