শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেখা থেকে লেখা

চিরহরিৎ দেখার ডায়েরি

হাসান শাওন
০২ মার্চ ২০২২
রামগতির এই মেঘনার মোহনা একটি অনবদ্য পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে

রামগতির এই মেঘনার মোহনা একটি অনবদ্য পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে

জন্মান্তরের ডিএনএ ভেতরে গাঁথা। তাই নদী টানে, বিরাণভূমি টানে, সমুদ্র, পাহাড় হাতছানি দেয়। আমাদের সব আনন্দ আয়োজন প্রকৃতির এই দানে। আমরা ফিরে ফিরে আসি।

এখানে একঘেঁয়েমি নেই। মুহূর্তে মুহূর্তে আকাশ বদলায়। নদী বয়ে চলে উপকূল গন্তব্যে। সঙ্গে ভেসে চলা মাছের ঝাঁক নজর এড়ায় না। এখানে আদিমতা পূর্ণতা পায়। সব শেষের পরেও কিছু অবশিষ্ট থাকে। তার মায়ায় আমরা পথ চলি। এ ঘেসো পথের কোনো নকশা নেই। পথও এখানে নদীর মতোন। মায়াময়তা চারপাশ জুড়ে। সবুজ ঘিরে থাকা পথে ক্লান্তি থাকে না। বিস্ময়কর লাগে এই পথচলা। পাললিক মন বিনম্র থাকে। এখানে শুধু আরাধনা প্রকৃতির প্রতি। বিহ্বলতা ভর করে। ঘোর লাগে। জীবনানন্দের পঙ্‌তি মাথায় আসে।

“...আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো গেলাসে-গেলাসে পান করি।”

এ যেন পাখির স্বর্গরাজ্য। বক, শালিক, মাছরাঙা, দোয়েল গান গেয়ে যায় ওপেন এয়ার কনসার্টে। কেউ না থাকা এ প্রান্তরে ওরাই শ্রোতা, ওরাই গায়ক। গাছেরা মাথা নেড়ে পাখির গানে তাল দেয়। এ বন্ধন ছিন্নের সাধ্য কারও নেই। পার্থিব আর অপার্থিবতার মেলবন্ধন এখানেই। সঙ্গীত এখানে থেমে নেই। নদীও সুরে বয়। এর ধ্বনিও স্পষ্ট। ভেসে যাওয়া স্রোতে শোনা যায় নানা রাগরাগিনী।

ভৌগলিকভাবে এ জায়গা নোয়াখালীর রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারে অবস্থিত। এর উত্তরে কমলনগর উপজেলা, পূর্বে নোয়াখালীর সুবর্ণচর, হাতিয়া এবং পশ্চিমে ভোলার তজুমদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলা অবস্থিত।

মেঘনার মোহনা তার বিশালত্ব নিয়ে চাক্ষুষ এখানে। মনুষ্যবসতি শূন্য এ অঞ্চল। এ প্রকৃতি রাজ্যে এলে প্রাণ মন প্রশান্তি পায়। হারিয়ে যাওয়াই নিয়ম এখানে। চারপাশের সঙ্গে মিলেমিশে কাটানো যায় দীর্ঘতম সময়। ক্লান্ত লাগে না। সারাক্ষণ উড়ে যাওয়া মেঘ ভূখণ্ডকে শীতল রাখে।

দূষণ দেখতে দেখতে ক্লান্ত মন এখানে নিরাময় পাবে। উজ্জীবনের একটি প্রক্রিয়া বাস্তবতা পায় এখানে এলে। নদী আর বনানীর মিলন এ জায়গায় অবারিত। মানবসৃষ্ট কিছু নেই এই প্রকৃতি রাজ্যে। এমনই নিঃস্তব্ধ যে নিজের চলার শব্দ ফিরে আসে নিজের কানে।

বিশাল আকারের মহিষ দেখে নাগরিক মন আশ্চর্য হয়! ওরা আছে দলে দলে। বিচিত্র ওদের দিনযাপন। কখনও মেঘনায় ডুব। আবার কখনও তীরের ঘাস চিবুনো। মুগ্ধতা জাগে এদের যূথবদ্ধতা দেখে। মনে হয় অনাদিকাল থেকে ওরা এখানে। ভাবসাবও রাজসিক। নিজস্ব জমিনে যেমন দাঁড়ায় হাল ধরা কৃষক। কোনো শাসনকাঠামো নেই। মহিষেরা তাই চলে স্বাধীনভাবে। আলেকজেন্ডারের ভূমিপুত্র মনে হলো ওদের। এ অঞ্চলের মৃত্তিকা সন্তানের মতোই গায়ে কাদা মেখে ওরা তা প্রমাণ করে চলে।

প্রকৃতির নিজস্বতায় অনন্য এ অঞ্চল। যেন এক অনাবিস্কৃত জমিন। যেন আমরাই প্রথম মানব। এ অনুভূতি জেগে ওঠে এখানে এলে। প্লাস্টিক কংক্রিটে ঠাঁসা শহরে ফেরার ইচ্ছে মরে যায় এখানে দাঁড়িয়ে। প্রকৃতির চাদরে গা মুড়িয়ে ইচ্ছে করে থেকে যেতে। কিন্তু সে ব্যবস্থা নেই এখানে।

রামগতির এই মেঘনার মোহনা একটি অনবদ্য পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে যথার্থ বিনিয়োগে। তবে এর জন্য যেন প্রথমেই বিবেচিত হয় পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে এটি সম্ভব। নদীমাতৃক বাংলায় নদী পর্যটনেরও একটি ক্ষেত্র হতে পারে এই এলাকা।

ক্লান্তিহীন এ রাজ্য থেকে ফিরতে ইচ্ছে হয় না। তবু ফিরতে হয়। তখন মনেহয় পেছন চিরৎ-এর ডাক, ‘‘আয়, আয়... ”। তবু ফিরতে হয় প্রত্যাবর্তনের লজ্জা নিয়ে।

মালদ্বীপ ভ্রমণে ইউএস-বাংলার আকর্ষণীয় হলিডে প্যাকেজ
পর্যটন শিল্পে যুক্ত হচ্ছে গুলিয়াখালী সৈকত

আপনার মতামত লিখুন