বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেখা থেকে লেখা

শীতলক্ষ্যায় একদিন

সুমন্ত গুপ্ত
১৫ মার্চ ২০২২
শীতলক্ষ্যা নদী

শীতলক্ষ্যা নদী

নদীমাতৃক বাংলাদেশে আমাদের নদী সমূহ ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। রূপ বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশের নদীসমূহের রূপ মাধুরীতে যেকোনো মানুষ যে মুগ্ধ হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আজ আমার ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে সাথে আছেন সহধর্মিণী সানন্দা গুপ্ত, আনন্দ, অন্তরা ও রমা। চলছি নৌভ্রমণের উদ্দেশ্যে শীতলক্ষ্যা পানে।  

চাষাড়া রেল গেট পার হয়ে আমরা চলেছি এগিয়ে। সূর্যদেবের প্রখরতা পুরো সড়কজুড়ে। আমরা নৌ ভ্রমণের লক্ষে পৌঁছালাম গুদারা ঘাটে। ঘাটে পৌঁছাতেই মাঝিদের হাক শুনতে পেলাম। বার শুক্রবার, তাই নদী পারাপারের মানুষ ছাড়াও অনেকেই আমাদের মতো এসেছেন নৌ ভ্রমণের নিমিত্তে। দরদাম করে আমরা উঠে পড়লাম ছানি দেওয়া নৌকায়। শীতলক্ষ্যার টলমল পানিতে ভেসে বেড়াতে লাগলাম আমরা। পূবের হাওয়া সাথে নিয়ে আমাদের নৌকা চলছে এগিয়ে। এর মাঝে আমাদের আনন্দ বাদাম দিলো সবার হাতে। নৌকার মাঝি আমাদের এগিয়ে নিয়ে চলছেন। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প। দেখতে পেলাম ডুবন্ত কোনো নৌযান উদ্ধারকারী জাহাজ রোস্তম। বিশাল দেহ নিয়ে বিরাজমান। এই রোস্তম এক সময় একমাত্র উদ্ধারকারী জাহাজ ছিল। 

আমরা ঢেউয়ের তালে তালে এগিয়ে চলছি| যেহেতু অন্তরা ছাড়া আমাদের কেউ সাঁতার জানি না, তাই মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম। তবে সব ভয় জয় করে আমরা চলছি সামনে। নদী পারের মানুষের জীবনধারা আমাদের খুব চমকে দিয়েছিল। আমাদের মাঝির কাছে তার নাম জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তার নাম নিবারণ মাঝি। এই শীতলক্ষ্যায় দুই প্রজন্ম ধরে নৌকা চালান। তিনি আরও বললেন, বাবা শীতলক্ষ্যা পারের অনেক চরাই উতরাইয়ের সাক্ষী তিনি। আগে কি শীতলক্ষ্যা ছিল আর এখন কি! এখন শীতলক্ষ্যায় দূষণ বেড়ে যাওয়ার ফলে আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না। আগে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। ভুঁদোরের বিচরণ সহজেই চোখে পড়ত, কিন্তু কালের আবর্তে এখন আর এসব কিছুই দেখা যায় না। আমরা নিবারণ মাঝির কথার সাথে সাথে এগিয়ে চলছি। 

দেখতে দেখতে গোধূলিলগ্ন চলে এলো। সূর্যদেবের সাথে শীতলক্ষ্যার মিতালী নদী পারে অসাধারণ রূপে বিরাজিত হতে লাগল। আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। এদিকে দূর থেকে দেখতে পেলাম মালবাহী একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজের আগমন বার্তায় নদীতে ঢেউ জেগেছে। জাহাজ যত কাছে এগিয়ে আসছিল ঢেউয়ের পরিমাণ ততই বেড়ে যাচ্ছিলো। আমরা সবাই একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম বৈকি যেহেতু একজন ছাড়া কেউই সাঁতার জানি না। আমাদের নিবারণ মাঝি অভয় দিলেন— ‘বাবারা ভয় পাইও না, কিছুই হবে না। ’ আগে কত শত জাহাজ চলত এই নদীতে; এখন তো দিনে দু-একটার বেশি জাহাজ দেখা যায় না। বিশালাকৃতির জাহাজ আমাদের সামনের দিক দিয়ে চলে গেল। জাহাজ যাওয়ার পর আমাদের ভয় কেটে গেল। এখানে ঘণ্টা হিসেবে নৌকা ভাড়া দেওয়া হয়। প্রতি ঘণ্টা নৌকাভ্রমণে ভাড়া পড়বে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ২৫-৩০ জনের বেলায় ট্রলার ভাড়া নিতে পারেন। এক্ষেত্রে গুনতে হবে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।  সুযোগ পেলে আপনি উঠে পড়তে পারেন দূরপাল্লার বড় বড় লঞ্চে। সেখানে পেয়ে যাবেন লঞ্চের রান্না করা মুখরোচক অনেক পদের খাবার। শীতলক্ষ্যায় নৌকায় ভ্রমণের সময় খেয়াল করতে হবে লঞ্চ বা অন্য নৌযান কোথায় কোথায় চলাচল করছে। সেসব জায়গা এড়িয়ে চলাচল করা ভালো। সবশেষে বলি, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই নৌকায় ভ্রমণ করুন। 

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন নৌভ্রম‌ণে
রাজধানীর গুলিস্তান থেকে উৎসব, বন্ধন, শীতল বাসে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার নেমে রিকশায় বা হেঁটে গুদারা ঘাটে গেলেই পেয়ে যাবেন নৌকার দেখা। সেখান থেকে দরদাম করে উঠে পড়ুন নৌকায়। আপনার বাসে ভাড়া লাগবে ৩৬ থেকে ৫৫ টাকা। আপনি চাইলে ট্রেনে কমলাপুর থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ যেতে পারেন; জনপ্রতি ১৫ টাকা খরচ হবে। আবার আপনি চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন। 

অরক্ষিত মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক
চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের যাত্রীবাহী ট্রেন

আপনার মতামত লিখুন