শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

শিল্পরূপ পায়নি পর্যটন খাত

 হাসান নাসির
২১ জানুয়ারি ২০১৯

অপার সম্ভাবনার পর্যটন খাত এখনও অবহেলিত। স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় পাঁচ দশকেও শিল্প হিসেবে দাঁড়ায়নি পর্যটন। অথচ বিশ্বে এমন দেশও রয়েছে, যে দেশের অর্থনীতির প্রধান খাতই এই পর্যটন। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে হতে পারে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সরকারও সম্ভাবনাময় এই খাতকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি বলে প্রতীয়মান। মন্ত্রণালয়ের নাম ‘বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।’ অর্থাৎ বিশাল পর্যটন সেক্টর যুক্ত রয়েছে আরেকটি মন্ত্রণালয়ের লেজুড় হিসেবে। এতেই পরিষ্কার যে, খাতটি আলাদাভাবে গুরুত্ব পায়নি। পৃথক একটি মন্ত্রণালয় করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো সম্ভব, এমনই অভিমত এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের।

সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বছরটি কেটে যায় অনেকটা নীরবেই। ঘোষিত সেই পর্যটন বর্ষের কার্যক্রম চলার কথা আরও দুই বছর। সেই তিনটি বছরও কেটে গেল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে যতটা অর্জন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। সরকারের টার্গেট ছিল তিন বছরে অন্তত ১০ লাখ বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করা।

বাস্তবতা হলো পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে সেই পরিসংখ্যান পাওয়াটাও দুষ্কর। কারণ এর জন্য নেই টুরিস্ট স্যাটেলাইট এ্যাকাউন্ট (টিএসএ)। পর্যটন কর্পোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েব সাইট পেজেও কিছু বাণী আর বিজ্ঞপ্তি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু নেই, যা দিয়ে দেশের পর্যটনের সামদ্রিক চিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা সম্ভব।

নবেম্বর মাস থেকে এদেশে শুরু হয় পর্যটন মওসুম। দর্শনার্থীদের ভিড়ে ঠাসা থাকে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, সিলেট, কুয়াকাটা, সুন্দরবনসহ দেশের দৃষ্টিনন্দন স্পটগুলো। সেখানে মূলত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে মানুষ নিজস্ব উদ্যোগেই ছুটে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগে সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নানা যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে পর্যটন এলাকায় ভোগান্তির শিকার হন পর্যটকরা। বিশেষ করে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, হোটেলে অবস্থান এবং একান্ত ব্যক্তিগত জীবনযাপনের ওপরই রয়েছে অনাহূত কড়াকড়ি।

বাংলাদেশ একটি রক্ষণশীল দেশ হলেও কিছু স্থানকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে শিথিলতা প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। কেননা কড়া রক্ষণশীল আরব বিশ্বের সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সংলগ্ন দেশগুলোতেও এতটা কড়াকড়ি নেই, যতটা রয়েছে বাংলাদেশে। পর্যটকরা বিষয়টিকে দেখেন মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হিসেবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, নৌপরিবহন এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, লেক, জলপ্রপাতÑসবই আছে। এ উপকরণগুলোর জন্য পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত। তবে একথা ঠিক যে, সবকিছু সদ্ব্যবহার এখনও করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সরকার পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আলাদা মন্ত্রণালয় না হলেও ট্যুরিজম বোর্ড করা হয়েছে। পর্যটনের জন্য সরকারের খুব বেশি অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে দেশে পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে মূলত বেসরকারী খাতে। সরকারীভাবে প্রয়োজন মূলত যোগাযোগ অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি দরকার বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার। বাকিটা বেসরকারী উদ্যোগেই হয়ে যায়। দেশের প্রতিটি জেলায় আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট দাঁড় করাতে পারলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়। কারণ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হোটেল, মোটেল, যানবাহন, দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাসহ অনেক অনুষঙ্গ।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। কারণ এদেশে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে তা পৃথিবীর অনেক দেশে নেই। বিষয়টি অনুধাবন করে চট্টগ্রাম চেম্বার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। তন্মধ্যে প্রধানতম হলো প্রচারের মাধ্যমে দেশকে তুলে ধরা।

কক্সবাজারের পর্যটন : সবকিছু থেকেও যেন নেই
এক শহরেই ৭ দর্শনীয় স্থান

আপনার মতামত লিখুন