শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

উপকূল বাঁচাতে ঝিনুকের প্রাচীর

কৌশিক আহমেদ
২০ জানুয়ারি ২০২২
কুতুবদিয়ার ঝিনুকের প্রাচীরটি জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছে। ছবি : বিবিসি

কুতুবদিয়ার ঝিনুকের প্রাচীরটি জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছে। ছবি : বিবিসি

ঝিনুকের তৈরি প্রাচীর সাগরের নিরন্তর ঢেউ থেকে রক্ষা করতে পারে উপকূলের মাটি। কুতুবদিয়া দ্বীপে পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এর কার্যকারিতা। গ্লাসগো কপ-২৬ পরিবেশ সম্মেলন চলাকালে বিবিসির জলবায়ুসংক্রান্ত বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরা হয়েছে বিষয়টি। বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, ঝিনুকের প্রাচীর তৈরি করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রকোপ থেকে কুতুবদিয়াকে রক্ষা করা যাবে। প্রকল্পটি বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা গেলে তা কাজে আসতে পারে গোটা উপকূলরেখার নিচু অঞ্চলের জন্যই।

মূল ধারণাটি খুবই সাধারণ—তীরে পৌঁছানোর আগেই সাগরের ঢেউ ঝিনুকের প্রাচীরে আঘাত হেনে দুর্বল হয়ে যাবে। এ পদ্ধতি নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার উপকূলীয় অঞ্চলে সফলভাবে কাজ করেছে। কুতুবদিয়ার ক্ষেত্রে ঝিনুকের প্রাচীর কতটা কাজ করে, তা দেখতে যৌথভাবে কাজ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ও নেদারল্যান্ডসের ওয়াহেনিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসোর্স অ্যান্ড ইকোসিস্টেম স্টাডিজের একদল গবেষক। মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ চৌধুরী ২৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপে সব মিলিয়ে দুই বছর কাটান। গবেষণা চালিয়েছেন আরো ছয় বছর। প্রথাগতভাবে সাগরের ঢেউ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় কংক্রিটের বাঁধ। তবে কংক্রিটের পরিবর্তে জীবন্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরো বেশি কার্যকর। তাতে প্রকৃতিকে ব্যবহার করেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা যায়। প্রকৃতি ও মানুষ উভয়কে নিয়ে টেকসই বাস্তুতন্ত্র গঠন করাই বাস্তু-প্রকৌশল বা ইকোলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ। কুতুবদিয়ার উদ্যোগটির ক্ষেত্রে শক্ত ও ডুবন্ত কোনো কিছুর উপরিভাগে ঝিনুক একীভূত হয়ে প্রাচীর গঠন করার মাধ্যমে তাদের নিজেদেরও বেঁচে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঝিনুকের প্রাচীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। তবে বাংলা-ডাচ গবেষকদলের উদ্দেশ্য ছিল, প্রাচীর ঢেউয়ের গতি কমাতে কী ভূমিকা পালন করে, সেটা পর্যবেক্ষণ করা। দেখা গেছে, কুতুবদিয়া উপকূলে ঝিনুকের প্রাচীর তৈরির আদর্শ পরিস্থিতি রয়েছে। পুরনো ঝিনুকের খোলার ওপর নতুন ঝিনুক বেড়ে ওঠে। কংক্রিটের খুঁটি বা স্ল্যাবের মতো কৃত্রিম ভিত্তিও ব্যবহার করা যায়। সঠিক স্থানে সঠিকভাবে কংক্রিট স্ল্যাব স্থাপন করা হলে সেখানে গড়ে ওঠা ঝিনুকের প্রাচীরও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। প্রাকৃতিক কারণে প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ঝিনুকগুলো নিজে নিজেই মেরামত করে ফেলে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঝিনুকের প্রাচীরের পেছনে জমা পলি। ডাচ গবেষক পেট্রা ড্যানকার্স বলেছেন, ‘ধীরে ধীরে প্রাচীরের আশপাশে পলি জমা হয়। বাংলাদেশে আমরা ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত পলি জমতে দেখেছি, যা নেদারল্যান্ডসের চেয়ে অনেক বেশি।’ গবেষকরা বলছেন, এই পলি কাজে লাগিয়ে সমুদ্র থেকে বিশাল ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। ঝিনুকের প্রাচীর ২০ ইঞ্চি উচ্চতার ঢেউকে শান্ত করে দিতে পারে। ৪০ ইঞ্চি উচ্চতার ঢেউয়ের গতিকে কমিয়ে দিতে পারে অনেকটা। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই প্রাচীর চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াতেও কাজ করে। তবে ঝিনুকের প্রাচীরের সক্ষমতারও সীমা আছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ম্যানগ্রোভ বনসহ অন্যান্য কৌশলের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।

পুলিশ দেখলেই মাস্ক পরেন পর্যটকরা
পৃথিবীর যে ৬ স্থানে সূর্য কখনো অস্ত যায় না

আপনার মতামত লিখুন