মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক এখন হাওড়াঞ্চলের দুঃখ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ এপ্রিল ২০২২

কিশোরগঞ্জের হাওড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক এখন এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুমানগঞ্জে সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির জন্যও এ সড়কটিকে দায়ী করছেন হাওড়বাসী। তারা বলছেন, সড়কটি স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে উজানে (সুনামগঞ্জ) বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জেও বন্যা ও ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা। ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওড়ে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে অলওয়েদার সড়কের আধা মাইল পরপর সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে হাওড়ের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবং ভুক্তভোগী কৃষক জানায়, উপযুক্ত সংস্কার এবং খনন কাজের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে হাওড়াঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলো নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। তার ওপর অলওয়েদার সড়ক নতুন করে উন্মুক্ত পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে এ জেলার উজানে অবস্থিত জেলাগুলো থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে পারছে না। ফলে ওইসব জেলার নিুাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের ফসল ও ফসল রক্ষা বাঁধও। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংগঠক জানান, বর্ষাকালে হাওড়াঞ্চলের বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত নিম্নাঞ্চল হয়ে ওঠে অবাধ পানি প্রবাহের উৎস। তখন নদীপথ এবং নিম্নাঞ্চলের পানি সরবরাহ পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন সকল প্রকার নৌযানও বাধাহীনভাবে ইচ্ছামতো দিগ্বিদিক চলাচল করতে পারত। এটিই ছিল এ হাওড়াঞ্চলের শত বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে সড়কপথ নির্মাণে সেই স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে ভাটিকন্যাখ্যাত এ হাওড়াঞ্চলের জীববৈচিত্র্যেও।

বনেদি কৃষক পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সচেতন লোক জানান, এ অঞ্চলে নদ-নদী ও খাল-বিলে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খরচও হতো খুবই অল্প। এখনকার উন্নয়নের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে জীবনমান উন্নয়নের সাদৃশ্য খুবই কম। এসব দৃষ্টিনন্দন সড়কপথ ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে সত্যি, কিন্তু এখানকার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ধারায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি। কেননা, এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা চাষাবাদ ও মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে উন্নয়নের পাখায় ভর করে যেসব সুবিধা আসছে তাও ভোগ করছে সচ্ছল ও ধনাঢ্য শ্রেণির মানুষ। হাওড় উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা কাজে নিয়োজিত একটি সংগঠনের সংগঠক জানান, এসব উন্নয়ন অনেকাংশেই অপরিকল্পিত। এখানে কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী সমাজের জীবনমান উন্নয়ন ভাবনা অনুপস্থিত।

১৯৮৯ সালে কানাডিয়ান রিসোর্স টিম (সিআরটি) নামে একটি গবেষণা দলের সঙ্গে এ হাওড়াঞ্চলে কাজ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিসুর রহমান খান আলমগীর ওরফে আনিস আলমগীর। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এখানকার কৃষিজীবী-মৎস্যজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নই হবে প্রধান কাজ। এ অঞ্চলটির চিরায়ত-শাশ্বত নয়নাভিরাম সেই বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য রক্ষা করাও খুব জরুরি।

ঈদকে ঘিরে কুয়াকাটায় অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের হিড়িক
যে ৫ স্টেশনে ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

আপনার মতামত লিখুন