বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

ফুরমোন পাহাড়ে শুভ্র মেঘের বসবাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ জানুয়ারি ২০২২

পাহাড়ে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকটা দিন। এরই মধ্যে শুভ্র সাদা মেঘের দখলে সবুজ পাহাড়। দিনরাত চলে মেঘ পাহাড়ের খুনসুঠি। পাহাড়ে গা ছুয়ে ভেসে বেড়ানো মেঘ রক্তিম গোধূলীকেও যেন হারমানায়।

আর কুয়াশার হাতছানিতে স্নিগ্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াই পাহাড়ি ফুলের গন্ধ। আপছা ভোরের আলোয় হিরে বসানো সবুজ ঘাসের ঢগা এক মুহুর্তেই মনে হয় শিল্পীর ক্যানভাসে আকাঁ ছবি।

হঠাৎ এমন চিত্রে দেখলে মনে পরে যাবে-কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা বনলতা সেন কবিতার শেষ অংশের খন্ড চিত্র। ‘‘সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল; পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল। ’’

বলছি- রাঙামাটি ফুরমোন পাহাড়ের কথা। রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে মানিকছড়ি। আর এ মানিকছড়ির একটি পাহাড়ের নাম ফুরমোন। যে পাহাড়ে মেঘেদের বসবাস। শহর থেকে প্রায় ১ হাজার ৫১৮ ফুট উঁচু ফুরমোন পাহাড়। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠলে দেখা মিলে বৈচিত্রময় রাঙামাটির এক অন্যরকম চিত্র। দূর পাহাড়ি গ্রামগুলোকে মনে হয় শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। এখানে চলে পাহাড়, হ্রদের মিলন মেলা। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট।

এ অপরূপ সৌন্দর্যে কারণে রাঙামাটির ফুরমোন পাহাড় পরিচিত লাভ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ফুরমোন পাহাড়ের সৌন্দর্যের টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে এখানে। প্রকৃতি উজাড় করে দিচ্ছে নিজেকে।

তবে ফুরমোন পাহাড় ভ্রমণ করতেও প্রয়োজন চ্যালেঞ্জ ও মনবল। বলছিলো ঢাকা থেকে আগত পর্যটক মো. আবির মাহমুদ। বন্ধুদের সাথে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে ফুরমোন পাহাড় ভ্রমণ করেন তিনি। একই কথা জানালেন তার বন্ধু রাকিবও। তারা বলেন, ফুরমোন পাহাড়ে উঠতে হলে পায়ে হেটে উঠতে হবে। এখানে গাড়ি চলাচলের কোন সুযোগ নেই। ৪১৩টি পাকা সিড়ি ও আরও বেশ কিছু মাটির সিঁড়ি পাড়ি দিতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। প্রথমে একটু ক্লান্তিভাব থাকলেও ফুরমোনের চূড়ায় উঠার পর মনেই থাকবে না ওই ক্লান্তির কথা। কারণ ফুরমোনের সৌন্দর্য এতোটাই সুন্দর তা কল্পনাতেও কল্পনা করা যাবে না।

প্রকৃতির এমন রূপমাধুরী দেখে মনে হবে আপনি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা মেঘালয়ে চলে এসেছেন। তবে ফুরমোনে উঠার আগে কিছু প্রয়োজনিয় জিনিস সাথে রাখতে হবে। যেমন-বাঁশের লাটি (যা হাটার পথে সহযোগিতা করবে), স্যালাইন, পানি ও হাল্কা শুকনো খাবার।

এ ফুরমোন ভ্রমণ অভিযান শেষে ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানালেন স্থানীয় পর্যটক মো. আবু তৈয়ব। বলেন, রাঙামাটিতে আমাদের বসবাস। কিন্তু ফুরমোন পাহাড়ে ভ্রমণ করে রাঙামাটিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। কেন মানুষ লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে বেড়াতে যায়। আমাদের দেশে এতোটাই সুন্দর যা নিজের চোখে না দেখলে বর্ণনা করা যাবে না।

যদিও ফুরমোন পাহাড় পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে এখনো গড়ে উঠেনি। কিন্তু এখানে হাজারো মানুষের সমগম। দল বেঁধে মানুষ প্রায় প্রতিদিন ভ্রমণ করছেন। আসছে দেশি-বিদেশি পার্যটকও। এ ফুরমোন পাহাড়কে ঢেলে সাজানো গেলে রাঙামাটি পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

অনিন্দ্য সুন্দরী পাহাড়ি রাণী ‘খৈয়াছড়া ঝরনা’
ভারত ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করলেন হাইকমিশনার

আপনার মতামত লিখুন