ঘুরে আসুন বাংলার তাজমহল

ভারতের আগ্রার তাজমহলের সৌন্দর্য বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে। আর তাইতো প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমায় তাজমহল দেখতে। তবে, যেকোনো ব্যক্তি চাইলেই তো আর সেখানে যেতে পারবে না। কিন্তু আপনি ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের তাজমহলের যেতে পারবেন। অনেকের কাছে প্রশ্ন উঠবে এটা আবার কোন তাজমহল? এটা পুরোপুরি ভারতের আগ্রার আকারেই তাজমহল করা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা কম খরচে বিনোদনের খোরাক নিতে পারেন।
অবিকল আগ্রার তাজমহলের মতোই এক নিদর্শন আপনি দেখতে পাবেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় ঈশাখার রাজধানীতে। বাংলার তাজমহল নামেই সবাই এই নিদর্শনটিকে চেনেন। এই তাজমহলটি গড়ে তোলা হয়েছে ব্যক্তিমালিকানায়। শিল্পপতি চলচ্চিত্রকার আহসানউল্লাহ মনি বাংলার তাজমহলের নির্মাতা। এই তাজমহলে ব্যবহার করা হয়েছে বিদেশি উপকরণ যেমন ১৭২টি কৃত্রিম ডায়মন্ড। আগ্রার তাজমহলকে অনুকরণ করে নির্মাণ করায় নির্মাতাকে বেশ কয়েকবার ভারতে যেতে হয়েছিল।
জানা যায়, ঢাকার অতি নিকটের এই দর্শনীয় স্থানটি পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। এ কারণেই ছুটির দিনগুলোসহ অন্যান্য সময়ও সেখানে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা থেকে মাত্র ১০ মাইল পূর্বে সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে অবস্থিত এটি। প্রায় ৫ বছর ধরে এর নির্মাণকাজ চলেছে। এটি প্রায় ১৮ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। এর আশেপাশে আরও ৫২ বিঘা জমি আছে পর্যটনের জন্য। যেখানে দেখা মিলবে প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর নাম না জানা হাজারও পাখির কিচিরমিচির। এছাড়া মিশরের আকারে পিরামিড করেছেন এ মালিক। এর সাথেই এটি অবস্থিত। প্রথমে যে কেউ দেখে মুগ্ধ হবে এটি।
বাংলার তাজমহল ২০০৮ সালে উদ্বোধন হয়। পর্যটকদের জন্য এখানে প্রবেশের আগে চমৎকার ১০টি ঝরনা আছে যা মুগ্ধ হয়ে দেখার মতোই। এছাড়াও তাজমহলের আশেপাশে ফুলের বাগান আর নিরিবিলিতে বসার স্থান খুঁজে পাবেন। তাজমহলের ভেতরে দারুণ সব পাথর দিয়ে কারুকার্য করা। এর ভেতরেই আহসানউল্লাহ্ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দু’জনের কবরস্থান সংরক্ষিত আছে। এতেও আগ্রার তাজমহলের মতোই চার কোণে চারটি বড় মিনার দেখতে পাবেন।
এছাড়াও তাজমহলের ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন ‘রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও’। এর বাইরে আছে ‘রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরা’। একইসঙ্গে খাবারের দোকান, হোটেল ও আবাসিক ভবন খুঁজে পাবেন সেখানে। আরও আছে জামদানি শাড়ির দোকান, হস্তশিল্প সামগ্রী, মাটির গয়নাসহ আরও অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর দোকান। এর আশেপাশে আছে বিভিন্ন পিকনিক স্পট। চাইলে সেসব স্থান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন বাংলার তাজমহল?
ঢাকা থেকে যেতে হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জগামী যে কোনো বাসে উঠতে হবে। এরপর বরপা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। ভাড়া পড়বে ৩৫-৪০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি বা স্কুটারে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন তাজমহলে।
এছাড়াও ঢাকা থেকে আরেক রুটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে কুমিল্লা, দাউদকান্দি অথবা সোনারগাঁগামী যে কোনো গাড়িতে চড়ে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে পারেন। কিংবা বায়তুলে মোকারমের সামনে থেকে মদনপুরগামী অসংখ্য বাসা পাওয়া যায়। এতে ভাড়া পড়বে ৪০-৫৫ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি বা স্কুটারে জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন তাজমহলে। বাংলার তাজমহলের টিকিট জনপ্রতি ১৫০ টাকা। গাড়ি পার্কিংয়ে খরচ হবে ২০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে বাংলার তাজমহল।
এ ব্যাপারে তাজমহলের ম্যানেজার মো. উজ্জ্বল বলেন, আমার চাচা মো. আহসানউল্লাহ মনি তিনি বিনোদন খুব পছন্দ করেন। এছাড়া তিনি দেশ ও বাইরে অনেক সফরও করেছেন। তিনি চিন্তা করেছেন আমাদের দেশের মানুষের বিনোদন খোরাক নেওয়ার জন্য ভালো কোনো স্পট নেই। যার ফলে তিনি তাজমহল ও পিরামিড বানানোর উদ্যোগ নেন। তিনি আরো বলেন, এখানে যেকোনো লোক আসলে ভালো লাগবে।এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন