শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

পতেঙ্গা-সেন্টমার্টিন

বিলাসবহুল ক্রুজশিপে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ

ডেস্ক রিপোর্ট
১২ মার্চ ২০২২

দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে বিলাসবহুল ক্রুজশিপ ‘বে-ওয়ান’। সর্বোচ্চ নিরাপদে আরামদায়ক সমুদ্রভ্রমণে পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী এ জাহাজটি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, নীল জলরাশি, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে পৃথিবীর অনিন্দ্য সুন্দর প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা। জাহাজটি সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে পরের দিন সকাল ৭ টায় সেন্টমার্টিন পৌঁছায়। সেখানে শুক্রবার অবস্থান করে শনিবার সকাল ১০টায় যাত্রা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরে আসে পতেঙ্গায়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে যাত্রা শুরু করে দেশের একমাত্র বিলাসবহুল পর্যটকবাহী এ ক্রুজশিপ। দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ক্রুজশিপ যা এ নৌরুটে চালু হয়। করোনা বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে ভ্রমণপিপাসুদের ব্যাপক আগ্রহ ও সেবার ক্রমবর্ধমান মানোন্নয়নের মধ্য দিয়ে পর্যটন সেবার দ্বিতীয় মৌসুম পার করছে এ জাহাজ। চলতি মৌসুম শুরুর আগে পর্যটকদের চাহিদার ভিত্তিতে জাহাজটির সেবার মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে কর্তৃপক্ষ।

পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে জাপান থেকে মিতসুবিসি ব্যান্ডের অত্যাধুনিক এ ক্রুজশিপটি ক্রয় করে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। এক হাজার ৮০০ আসনের সাততলা এ প্রমোদতরীতে রয়েছে- বিলাসবহুল ভিভিআইপি ও প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন ও আরামদায়ক চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসন। জাহাজটি যাতায়াতের মাঝখানে এক রাত সেন্টমার্টিন অবস্থান করায় পর্যটকরা সারাদিন সেখানে ঘুরে জাহাজের পাঁচ তারকা মানের বিলাসবহুল কেবিনেই রাত যাপন করতে পারছেন। এর আধুনিক বাথরুমগুলোতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন ও কয়েন পরিচালিত ঝরনা।

জাহাজের যাওয়া-আসার সর্বোচ্চ ভাড়া ভিভিআইপি কেবিন ৬০ হাজার টাকা। আর ইকোনমি প্যাকেজের আওতায় ইকোনমি সিটের ভাড়া চার হাজার ও বিজনেস ক্লাস চেয়ার পাঁচ হাজার ৪০০, ওপেন ডেক ছয় হাজার ৫০০ এবং বাংকার বেড আট হাজার টাকা। তবে একমুখী যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ ভাড়া অর্ধেক। এছাড়া ভাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অফারও থাকে।

জাহাজটির সেবার মান সরেজমিনে পরিদর্শনে ৩ মার্চ প্রশাসনের পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়। জাহাজটি যাত্রী ও আমন্ত্রিতদের নিয়ে ৩ মার্চ রাত ১১টায় পতেঙ্গা থেকে যাত্রা করে পরদিন সকালে সেন্টমার্টিন পৌঁছায়। ওইদিন সরকারি সফরে সেন্টমার্টিনে আসেন বেসরকারি বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সেন্টমার্টিনকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তুলতে সরকারি অনুমতি ছাড়া দ্বীপে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পর্যটন শিল্প বিকাশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বে-ওয়ানের কর্ণধার এমএ রশীদের মতো অন্য উদ্যোক্তাদেরও পর্যটনবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ উদ্যোক্তা দেশে সুইমিংপুল সুবিধাসহ ১৪তলা জাহাজ নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা এ শিল্প বিকাশে আরও সহায়ক হবে। সেন্টমার্টিন থেকে ৪ মার্চ জাহাজে আসেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কেএম আলী আজম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ, টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী ও বেপজার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এনডিসি, পিএসসি। এ সময় সেনাকল্যাণ সংস্থা চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক কমান্ডার ইফতেখার হাসান (অব.), বেওয়ানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ নেভির সাবেক কমান্ডার সানোয়ার হোসেন ও প্রকৌশলী ওমর শরীফ উপস্থিত ছিলেন।

অত্যাধুনিক এ ক্রুজশিপের দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট ও ড্রাফট প্রায় ১৮ ফুট। এর গড়গতি ঘণ্টায় ১৬ দশমিক ১ থেকে ২৪ নটিক্যাল মাইল। জাহাজটিতে ক্রু রয়েছেন ১৬৭ জন। নিরাপত্তায় রয়েছে আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল বিধি অনুযায়ী সরঞ্জামাদি তথা ব্যবস্থাপনা যেমন-যাত্রীপ্রতি একাধিক লাইফ জ্যাকেট, বয়া ও জরুরি বোট ইত্যাদি। বিশেষ করে এ জাহাজের তলদেশে থাকা পাখা দুটি বড় কোনো বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে জাহাজটির ভারসাম্য রক্ষা করবে। আকারে বড় বলে সেন্টমার্টিন জেটিতে (ঘাটে) পৌঁছতে পারে না বে ওয়ান। তাই যাত্রীদের জাহাজ থেকে জেটিতে আনা-নেওয়ার জন্য সেন্টমার্টিন ক্রুজ নামে একটি আধুনিক বার্জ তৈরি করা হয়েছে। বার্জে যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি এটাকে অত্যাধুনিক ভাসমান রেস্তোরাঁ করার কাজও প্রক্রিয়াধীন।

বে-ওয়ান পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে বাথরুমবিশিষ্ট কেবিনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জাহাজের সম্মুখভাগে সিভিউ কমন রেস্টরুম এবং সিভিউ বুফে তৈরিসহ কমন রেস্তোরাঁর আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ভোজনরসিকদের জন্য জাহাজে একাধিক বুফে ছাড়াও রয়েছে কমন রেস্তোরাঁসহ স্ন্যাকস, কফিশপ ও আইসক্রিম বার। সেইসঙ্গে বিশাল অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন শিল্পীদের পরিবেশনায় লাইভ মিউজিক।

রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর থেকে ঘুরতে আসা শিকদার নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে মন কেড়ে নেয় রাতের জোছনা আর সমুদ্রের নীল জলরাশির মিতালী। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার আবু সুফিয়ান দম্পতি জাহাজের বিশালা সি ভিউ অডিটোরিয়ামে শিল্পীদের নাচ-গানের প্রশংসা করেন। এর সিভিউ বুফে রেস্তোরাঁয় সমুদ্রের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন ও গান শুনতে শুনতে বহুবিধ খাবারের স্বাদ উপভোগের ব্যাপারটি অসাধারণ বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লিমিটেডের কর্ণধার ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশীদ জানান, বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। পর্যটন ক্ষেত্রও পিছিয়ে নেই। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় এ শিল্পের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতেই আমরা চালু করেছি বে-ওয়ান ক্রুজশিপ। আগামীতে এ শিল্পের উন্নয়নে আরও ভালো কিছু করার চিন্তা রয়েছে।

কুয়াকাটায় জেলিফিশের ‘অস্বাভাবিক’ উপস্থিতির কারণ খোঁজার তাগিদ
ঢাকা-টরোন্টো রুটে ২৬ মার্চ থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু

আপনার মতামত লিখুন