শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

‘ভিন্ন এক জগৎ’ ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

রেজাউল করিম
০৩ জানুয়ারি ২০২২

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুরের সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় রয়েছে এক অপরূপ বৃক্ষরাজ্য। লাল মাটির উর্বর ভূমিতে সহস্র বছর আগেই এখানে জমে উঠেছিল বৃক্ষের আখড়া। আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্রের কারণে ক্রমেই ভাওয়ালের গড় পরিণত হয়েছে পর্যটকদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ গজারি, এ কারণে একে ভাওয়ালের গজারির গড়ও বলা হয়। দেশে যে কয়টি বৃহৎ প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে, তার মধ্যে ভাওয়ালের গড় অন্যতম। ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যে ভাওয়াল গড়ের তুলনা হয় না।

জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম ভাওয়ালের গড়কে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। উদ্যান ঘোষণার পর থেকে এর প্রতি সরকারের নজর বেড়ে যায়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন-(১৯৭৪) অনুযায়ী পাঁচ হাজার ২২ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত উদ্যানজুড়ে ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলা হয়। এখানে পর্যটকদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তার ব‌্যবস্থা করা হয়। এক কথায় বনকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় মনোরম পিকনিক স্পট, তথা একটি অত্যাধুনিক রিসোর্ট।

প্রাণিবৈচিত্র্যের দিক দিয়ে এই উদ্যান অনন্য। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, কালো চিতা, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। সময়ের পরিক্রমায় সেসব এখন আর নেই বললেই চলে। তবে খেঁকশিয়াল, বাগদাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপের দেখা হরহামেশাই মেলে।

এই উদ্যানে প্রায় ৬৪ প্রজাতির প্রাণি রয়েছে। এর মধ্যে ছয় প্রজাতির স্তন্যপায়ী, নয় প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বনে হাঁটার সময় দেখা মিলবে স্ট্রোক বিলড কিংফিশার, মাছরাঙা, খয়রা গেছো পেঁচা, কাঠ ময়ূর, বন মোরগ বা মুরগির। দেখা মিলবে বানর ও মুখপোড়া হনুমানেরও। এত সব প্রাণি একসঙ্গে দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

এ উদ্যান উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। এখানে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির লতা, ২৭ প্রজাতির তৃণ, তিন প্রজাতির পাম জাতীয় বৃক্ষ, ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, বট, সর্পগন্ধা, শতমূলী, জায়না, বিধা, হারগোজা ইত্যাদি। 

এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় কয়েকটি পিকনিক স্পট । আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন প্রভৃতি বাহারি নাম তাদের। দর্শনার্থীদের আরামের জন্য রয়েছে বকুল, মালঞ্চ, মাধবী, চামেলী, বেলী, জুঁই নামের চমৎকার ও মনোরম কটেজ। এখানে ১৩টি কটেজ ও ছয়টি রেস্টহাউস রয়েছে। উদ্যানের সৌন্দর্য এক সঙ্গে উপভোগ করার জন্য রয়েছে একাধিক সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন হাজার হাজার বৃক্ষ সমাদৃত সবুজ রাজ‌্যের ওপর।

পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান। সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত বনানী পরিবেশের জন্য এ উদ্যান বিখ্যাত। এই জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য জলাশয়। এসব জলাশয়ে শৌখিন পর্যটকরাও নৌকায় করে বেড়াতে পারেন। এছাড়া বনভোজনের সেরা আকর্ষণ হচ্ছে এই ভাওয়ালের ন্যাশনাল পার্কটি। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হয়।

সতর্কতা : উদ্যানের বেশি গহিনে না যাওয়াই ভালো। একাকী গেলে ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে পারেন। জঙ্গলে ভ্রমণের সময় অবশ্যই আরামদায়ক কাপড় ও জুতা পরবেন। দূরের পাখি দেখতে সঙ্গে নিতে পারেন দূরবীন। বনের ভেতর একা না যাওয়াই ভালো। পশু পাখি বিরক্ত হয় এমন শব্দ ও কোলাহল করা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া পলিথিন, ক্যান, প্লাস্টিকের বোতল ফেলে কোনোভাবেই বন ময়লা করবেন না। ভাওয়াল উদ্যানের কিছু অংশ অরক্ষিত। তাই সাবধানতা অবলম্বন না করলে বিপদ হতে পারে।

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশ মূল্য : ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে নির্দিষ্ট হারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে। ভেতরে ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোরার গাড়ি ও রিকশা। 

যেভাবে যাবেন : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়েকর পাশেই ভাওয়াল উদ্যান। দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে আপনি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান আসতে পারেন সহজেই। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়।

পাহাড় বাঁচাতে তিন তরুণের রেকর্ড পরিভ্রমণ
লকডাউন নয় ফের আসছে বিধিনিষেধ

আপনার মতামত লিখুন