বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চলছে চৌদ্দমাদল মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ জানুয়ারি ২০২২

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়ায় ১৭ জানুয়ারি (৪ মাঘ, রবিবার) থেকে ২৪ জানুয়ারি (১১ মাঘ, রবিবার) পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী চৌদ্দমাদল উৎসবের উদ্বোধন করেছেন শ্রী শ্রী অদৈত্য প্রভু, গৌরাঙ্গ মহা প্রভু, হরিদাস প্রভু, সিনিবাস প্রভু।  

ঐতিহাসিক চৌদ্দমাদল উৎসব ও বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলা মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত বাঙ্গালাপাড়া গ্রামে হাওরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ উৎসব ৯২ বছর যাবৎ উদযাপিত হয়ে আসছে। সেই কারণে দিনে দিনে চৌদ্দমাদল উৎসব হাওরের সর্বস্তরের মানুষের প্রধান বাৎসরিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

চৌদ্দমাদল হচ্ছে চৌদ্দটি মৃদুল বা খোল নামক বাদ্য যন্ত্র যা চৌদ্দ জোড়া কর্তরালের সন্মিলনে শুরু হয় অষ্টগ্রাম বাঙ্গালপাড়ায় চৌদ্দমাদল সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে। ১৩৩৭ সালের পহেলা মাঘ বাঙ্গালপাড়ার গ্রামের ৪ জন ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রাদায়ের ব্যক্তি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নবদ্বীপে তীর্থ ভ্রমন করতে গিয়ে সেখানে চৌদ্দমাদল উৎসবে অংশ নেয়। সেখান থেকে ফিরে এসে মাঘ মাসে পহেলা তারিখ চৌদ্দমাদল উৎসবের গোড়া পত্তন করেন। ৩রা মাঘ উদ্বোধনের পর এ সপ্তাহব্যাপী চলে ধর্মীয় আলোচনা পাঠ কির্তন, নাম কির্তন সহ বর্ণাঢ্য মেলা। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লিটন রায়, সভাপতি উদযাপন কমিটি ও সুমন দেবনাথ, সাধারারণ সম্পাদক, তপন সরকার, এডভোকেট বিজয় শংকর রায়, সাংবাদিক সুজিত দাস, সাংবাদিক বিজয় কর রতন, সাংবাদিক অজিত দত্ত। প্রকৌশলী কৃষ্ণ কান্ত রায়, বাবু রবিন্দ্র সরকার অধ্যাপক সুমন দাস, নির্মল কুমার রায়, প্রকৌশলী সুদা বৃন্দু, শ্রী বৃন্দাবন দেবনাথ প্রমুখ। 

এছাড়াও ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নেয় পাঠক রাজ মোহন সরকার, শ্রী হরি পদ দেবনাথ, শ্রী দেবব্রত চক্রবর্তী, গোপীনাথ সুত্রধর (কাব্যতীর্থ), শ্রী সুশান্ত গোস্বামী, শ্রী হরি আনন্দ গোস্বামী। চৌদ্দমাদল শ্রী অঙ্গনে ৩২ প্রহর ব্যাপী হরি নাম মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় দেশের বিশিষ্ট কির্তনীয় দল। শ্রী ভক্ত সুধারাম সম্প্রদায় (খুলনা) শ্রী ভাই ভাই সম্প্রদায় (বাগেরহাট), নবশুখি সম্প্রদায় (সিলেট) নন্দ দুলাল (অষ্টগ্রাম) ভজবালক (অষ্টগ্রাম) হরিনাম সংঘ (কিশোরগঞ্জ)। 

এবারের বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলায় প্রায় ২ হাজার দোকানীয় পসরার সাজিয়ে বসেছে। এর মধ্যে মেলায় অংশ গ্রহণকারী প্রাচীন নকশী পালংক, খাঠ, সোফা, ডেসিং টেবিল, কৃষি উপকরণ, মিষ্টান্ন দ্রব্য, শিশুদের খেলনা, কিশোরীদের সস্তা প্রসাধনী, পুতির মালা, কাচেঁর চুরি ইত্যাদি। এ উৎসব ও মেলায় ১৪টি উপজেলায় সাজ সাজ রব পড়ে যায়। স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসে নব বধুরা। বাড়ি বাড়ি পিঠা উৎসব নতুন পোষাক বাবানোর ধুম। 

এ মেলায় আকষর্ণীয় সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়। হাওর বাসীর বিনোদন বিহীন জীবনে চৌদ্দমাদল ও মেলা সার্বজনীন আনন্দ উৎসব ফিরে আসে। 

এ বছর ৩৫ কিলোমিটার অল ওয়েদার সড়ক উদ্বোধন হওয়ায় মেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন লোক সমাগমের উপস্থিতি আশংকা করছে মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে মেলা ও মন্দিরের চারপাশে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ব্যবহার করে  মেলায় প্রবেশের জন্য বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার সাজানো রয়েছে।

গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষি-পর্যটন
রেড জোন ঘোষণায় রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের ধস

আপনার মতামত লিখুন