শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

মুসলিম বিশ্বের আকর্ষণীয় কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র

 মুফতি মুহাম্মাদ মিনহাজ উদ্দিন
২০ জানুয়ারি ২০১৯

বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীর পরতে পরতে মিশে আছে সৌন্দর্য ও রূপের অনন্য সব উপাদান। কিছু মানুষের সৃষ্টি হলেও সিংহভাগ আল্লাহপ্রদত্ত প্রাকৃতিক। অপরূপ প্রকৃতি কখনো সৌন্দর্য মেলে ধরে ঠিক আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায়। কখনো বা আবার দূর-দূরান্তে; বিদেশ-বিভুঁইয়ে। তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য হয়তো কখনো আমাদের দেখা হয়নি-‘দুই চক্ষু মেলিয়া’।

বলা বাহুল্য, বিশ্বে রহস্যঘেরা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটনকেন্দ্রের সীমা নেই। একরাশ আনন্দের জন্য ভ্রমণপিপাসুরা সময়-সুযোগে সেগুলোতে ভীড় করে। পেরুর মাচু পিচ্চু থেকে দক্ষিণ-পূর্বের অ্যান্টার্কটিকা-চোখধাঁধানো ও শোভানন্দিত জায়গাগুলো গুনে শেষ করা যাবে না।

সাদা মরুভূমি, মিশর
সাদা মরুভূমিতে যাওয়ার পথে খেঁজুর বীথির ছায়ায় কখনো চোখে পড়বে ছোট ছোট জলাধার। তাতে টলটলে পানি চিক চিক করছে। বিশাল ও বিস্তৃত এ মরুভূমিটি মিশরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

এর আরো ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে অদ্ভুত বিস্ময় রয়েছে, এখানকার পর্যটকদের জন্য। সেটি হলো পুরো এক সাদা মরুভূমি। মরুঝড় এবং কালান্তরের আঘাত ও ক্ষয়ের কারণে এখানে কোথাও ধবধবে সাদা আর ক্রিম রঙের বিশেষ ক্যালসিয়াম-পাথর তৈরি হয়েছে, যা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। চকচকে পাথরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলীর জন্য এটি বেশ বিখ্যাত।

এছাড়াও সেখানে অসাধারণ মসৃণ চুনাপাথরের আকর রয়েছে। খোলা প্রান্তরে দানবীয় কাঠামোগুলো আশ্চর্য এক ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বহু বছর। এগুলোর বেশ মনোহারী নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন- মাশরুম, আইসক্রিম, টেন্ট, মনোলিথ ইত্যাদি।

ব্লু সিটি, মরক্কো
জাদুকরী ব্লু সিটি আটলান্টিক পাড়ের দেশ মরক্কোর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটির মূল নাম শেফশাওয়ান। আবার (Blue Pearl of Morocco)-ও বলা হয়। কারণ এ শহরের বাড়িঘরের দেয়াল, দরজা, এমনকি রাস্তাঘাটও নীল রঙে রাঙানো।

ঘর-বাড়ির দেয়াল ও রাস্তাঘাট ইত্যাদি নীল রং করে রাখা এ শহরের বাসিন্দাদের ঐতিহ্য। স্থাপত্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিচিত্র এ শহরের বাসিন্দারা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিয়মিত শহর রং করে এবং শহরটিকে আজকের বিখ্যাত ‘ব্লু সিটি’তে পরিণত করেছে।

কনস্টান্টটিন শহর, আলজেরিয়া
কনস্টান্টাইন শহরকে ‘দ্য সিটি অব ব্রিজেস’ অথবা আরবিতে ‘বালাদুল হাওয়া’ বলা হয়। এটি আলজেরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। শহরকে ঘিরে আছে, রোমেল নদীর উপকূলীয় সৌন্দর্য-বিভা। শহরটি বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পাহাড় ও চিত্তাকর্ষক উপত্যকায় একপ্রকার ছেয়ে আছে। শহরের দুই অংশের সংযুক্তিতে রয়েছে অন্যন্য সুন্দর সেতু-বধীজ। শহরটির হৃদয়কাড়া দৃশ্যাবলী দর্শকের চোখে আনন্দের দ্যূতি বিচ্ছুরিত করে। ২০১৫ সালে আরব-সংস্কৃতির রাজধানী নির্বাচিত হয়েছিল।

ওয়াও নামুস, লিবিয়া
ওয়াও নামুস লিবিয়ার একটি আগ্নেয়গিরির নাম। এছাড়াও ‘মশার মরুদ্যান’ নামে এটি বিখ্যাত। প্রাকৃতিক আশ্চর্য সাহারা মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে ‘ওয়াও নামুস’র অবস্থান। মাঠের মাঝখানে আগ্নেয়গিরির মতো একটি ক্যালডার ও একটি শঙ্কু রয়েছে। মরুদ্যানটি আশেপাশের ১০ থেকে ২০ কি.মি. দীর্ঘ অন্ধকারাচ্ছন্ন-কালো ছাই ও ধূসরে আবৃত। আর তিনটি হ্রদের জল একটি সবুজাভ ও উর্বর মরুদ্যান তৈরি করেছে। যা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

সোকোট্রা দ্বীপ, ইয়েমেন
ইয়েমেন উপকূলে অবস্থিত সোকোট্রা দ্বীপটিকে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যজনক দর্শনীয় স্থান বিবেচনা করা হয়। দ্বীপটি ৬ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকার অংশ হিসেব ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে এখন এটি শত শত দৃষ্টিনন্দন বিরল প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদ ও গাছপালার নন্দনকানন। এখানকার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক গাছটি হল ‘ড্রাগনের রক্তবৃক্ষ’। অদ্ভুত গাছটি অন্য কোথাও প্রায় বিরল। গাছগুলোতে গোলাপি ফুল ফুটলে দ্বীপে অন্যরকম সৌন্দর্য-আভা ছড়িয়ে পড়ে।

পামুক্কালা, তুরস্ক
তুরস্কের পামুক্কালাকে বরফের পাহাড় মনে করে অনেকের দৃষ্টিভ্রম হতে পারে। বাস্তবে কিন্তু এটা বরফের পাহাড় নয়। মূলত পাহাড়টি বা পাহাড়ের ঝর্নাটি সৃষ্টি হয়েছে স্ফটিকের মতো ক্যালসিয়াম থেকে।

তুরস্কের দিঞ্জিল অঞ্চলে ১ হাজার বছর আগে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। আর ভূমিকম্পে সৃষ্ট ফাটল বেয়ে নেমে আসতে থাকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পানি। এরপর থেকে যুগ যুগ ধরে এ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ পানির প্রবাহ রূপ নেয়, তুষারের মতো শ্বেত-শুভ্র ঝর্নার পাহাড়ে।

পাখি ও লাল কাঁকড়ার রাজ্য কুয়াকাটার ‘চর বিজয়’
মানুষ এখন ঘুরে বেড়ায়

আপনার মতামত লিখুন