বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

রাস্তায় টাকা, কিন্তু কেন?

অনলাইন ডেস্ক
০২ এপ্রিল ২০২০

ফেসবুকে রাস্তায় ডলার পড়ে থাকার কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ছবিগুলো শেয়ার দিয়ে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘ইতালিয়ানরা রাস্তায় এভাবেই ডলার ছড়িয়ে বিশ্ববাসীর জন্য একটি ম্যাসেজ দিতে চাইল, টাকাই জীবনের সবকিছু নয়।’ যারা এই ক্যাপশনে ছবিগুলো শেয়ার দিয়েছেন, তারা বোঝাতে চেয়েছেন, রাস্তায় ডলারগুলো ছড়িয়েছেন ইতালির মানুষ। যারা এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন ডলার বা টাকায় কিছুই হয় না। প্রকৃতপক্ষে, এই ডলার বা টাকাগুলো পড়ে ছিল ভেনিজুয়েলার রাস্তায়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশটির মূদ্রাস্ফীতির কারণে এমনটি ঘটেছে। রাস্তায় ডলারের বা ভেনিজুয়েলার টাকা (প্রেট্রোর) ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ে গত ১২ মার্চ টুইটারের মাধ্যমে। 

আমির রিচানি নামের একজন টুইটারে রাস্তায় পড়ে থাকা মুদ্রার দুটি ছবি শেয়ার করে বলেন, ‘একদল চোর একটি ব্যাংক চুরি করেছিল। কিন্তু এগুলো ছিল দেশটির মূল্যহীন পুরোনো নোট। তাই রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। ভেনিজুয়েলার একসময়ের মূল্যবান মুদ্রা এখন মূল্যহীন। হাইপারইনফ্লেশনে ডুবেছে দেশ।’

সমাজতান্ত্রিক দেশ ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি এতই খারাপ হয়ে গেছে যে, জনগণ তাদের অর্থ ফেলে দিচ্ছে। কারণ, ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি কলামে বলা হয়, ভেনিজুয়েলার রাস্তায় রাস্তায় প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন টাকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাজধানী কারাকাসের ‘ক্রনিকলিস ফ্রান্সিসকো’ এর কলামিস্ট এবং নির্বাহী সম্পাদক টেরো বলেন, ক্ষুদ্র-মূল্যবান মুদ্রা এখন এতটাই মূল্যহীন যে কেউ তা কুড়িয়ে নেন না। এজন্য শহর পরিষ্কারের সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এগুলো আবর্জনার বিনের মধ্যে রেখে দেন। কারাকাসে বসবাসকারী টেরো বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় জিনিসপত্রের দাম এখন প্রতি মাসে ৮০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ, ‘প্রতি ৩৪ দিন বা তার পরে দাম দ্বিগুণ হয়।’ বিশ্লেষকদের মতে, ২০টি ১০০ টাকার নোটের মূল্য বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় 0.000১ ডলারের সমান।

যদিও ভেনিজুয়েলার সরকার মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করে না। কিন্তু দেশের বিরোধী শিবির নিয়ন্ত্রিত জাতীয় ফিন্যান্স গবেষণা কমিশন হিসেব প্রকাশ করেছে যে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ২০.৭ শতাংশ এবং ২০১৯ গোটা বছরের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪,০৩৫ শতাংশ। যদিও এ সংখ্যা কম আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা তাদের। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ধারণা করছে যে, চলতি বছর ভেনিজুয়েলায় মূল্যস্ফীতি ২০০০০০ শতাংশে পৌঁছে যাবে এবং দেশটির অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে।

এদিকে, ভেনিজুয়েলার খুব কম লোকই জিনিসপত্র বা পরিষেবা কিনতে তাদের দেশীয় মুদ্রা ব্যবহার করছেন। বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কিংবা সেবার জন্য মার্কিন ডলার, ইউরো, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বার্টারিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

বার্তা সংস্থা আল জাজিরা জানায়, ভেনিজুয়েলায় মানুষ এখন টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কারুপণ্য তৈরি করে বিক্রি করছে। সে দেশে কারুপণ্য তৈরিতে কাগজের পরিবর্তে ডলার ব্যবহার করছেন। কেননা, ভেনিজুয়েলার মুদ্রার চেয়ে কারুকর্মের কাগজের মূল্য বেশি। ভেনুজুয়েলার মুদ্রার মূল্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে, কিছু ভেনিজুয়েলান বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য মুদ্রা থেকে বিভিন্ন শিল্প তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

কারাকাসের বাসিন্দা হেক্টর করডেরো বলেন, আমি যে নোটগুলো ব্যবহার করে কারুপণ্য তৈরি করেছি, গত বছরের পর থেকে সেগুলোর প্রচলন নেই। তিনি টাকা দিয়ে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি করেন এবং কলম্বিয়া কিংবা বলিভিয়ার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, এই অপ্রচলিত নোটগুলো দিয়ে আমি একটি ছোট মানিব্যাগ তৈরি করতে করতে ১০০ টাকার প্রায় ৭০টি নোট বা একটি বড় মানিব্যাগ ওয়ালেট তৈরির জন্য ১০০টি নোট ব্যবহার করি। একটি হাতব্যাগ তৈরি করতে করতে ১২০০টি পর্যন্ত নোট লাগতে পারে। সব মিলিয়ে কারুশিল্পী করডেরো ভেনিজুয়েলার মুদ্রার ১৬টি আলাদা বর্ণকে তার শিল্পকর্মে ব্যবহার করেন।

ফলে মূল্যহীন নোটগুলোকে কারুশিল্পে রূপান্তরের মাধ্যমে তিনি ছোট মানিব্যাগগুলো প্রায় 8 ডলারে বিক্রি করেন এবং বড় হাতব্যাগগুলো প্রায় ১২ ডলারে। এসবের বেশিরভাগই কিনছেন ইউরোপীয় এবং উত্তর আমেরিকান পর্যটক। দক্ষিণ আমেরিকার একসময়ের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি ভেনিজুয়েলা কিছু অংশ স্মৃতি হিসেবে বাড়িতে রাখতে চান তারা।

করডেরো আরো বলেন, আমি যখন কারাকাস কিংবা ভেনিজুয়েলার বাইরে চলে যাই, তখন আমার ভাই কারাকাসে যান এবং আরো নোট আনেন। আমরা লোকজনের কাছে তাদের চাহিদা অনুসারে জিনিস তৈরি করে বিক্রি করি।

তিনি আরো বলেন, আমার তিনটি মেয়ে এবং একটি ছেলে আছে বলে ভেনিজুয়েলার বাইরে যেতে হয় জীবিকার তাগিদে। আজকাল ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি এমন যে, সেখানে খেয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই কঠিন। আমাদেরকে জীবিকার তাগিদে বলিভিয়াতেও যেতে হয় মাঝে মাঝে। আশা করি, ভেনিজুয়েলায় কিছু পরিবর্তন হবে। আমি ফিরে যেতে চাই আমার দেশ ভেনিজুয়েলায়। আমাদের দেশের মতো সুন্দর অন্য দেশ নয়। আর আমি অন্য কোনো দেশে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। সরকার দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে যেতে দিয়েছে। আমি কেবল সমস্যার সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছি, যাতে আমি ভেনিজুয়েলায় ফিরে যেতে পারি।

একটি হিসেবে দেখা যায়, প্রায়ই ভেনিজুয়েলা ছেড়ে যেতে কলম্বিয়াকে বেছে নেন ক্রাফট বিক্রয়কারীরা। কলম্বিয়ার সরকারের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ভেনিজুয়েলাবাসী কলম্বিয়া চলে এসেছিলেন। এক বছর আগের তুলনায় তা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

বার্তা সংস্থা আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরের সহযোগী প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসে রেঞ্জেল বলেন, বিশ্বজুড়ে সমস্ত অর্থনীতি মার্কিন ডলারকে বিভিন্ন লেনদেনের জন্য ব্যবহার করে।

তিনি প্রক্রিয়াটিকে ডলারাইজেশন বলে অভিহিত করে বলেন, ‘অনেক কর্মচারীকে মার্কিন ডলার বা ইউরোতে বেতন দেওয়া হচ্ছে।’ সূত্র: রাইজিংবিডি.কম

সুবর্ণচরে ব্যবসায়ী রেজার মানবিকতা, ৩শ পরিবার পেল খাদ্যসামগ্রী
লালমনিরহাটে ত্রাণ নিয়ে কুচক্রীদের গুজবে ওয়ালটন মর্মাহত

আপনার মতামত লিখুন