মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ

ডেস্ক রিপোর্ট
০২ জানুয়ারি ২০২২

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম দেশ। তাই পাহাড়, নদী, সাগর ও বনাঞ্চলসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদান সমৃদ্ধ এই দেশটি বুকে ধারণ করে আছে শত শত দর্শনীয় স্থান। সেগুলোরে মধ্যে হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ বিশ্ব জুড়ে ভ্রমণপিপাসুদের প্রকৃতির অম্লান বিস্ময়ের মাঝে হারিয়ে যেতে এক অমোঘ আকর্ষণে হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় ঘেরা কুঞ্জ আর উপত্যকার লেক পেরিয়ে দিগন্তে হারিয়ে যেতে এই জায়গাগুলোর জুড়ি নেই। আজকের ফিচারে থাকছে এই হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ কড়চা।

হিমাচল প্রদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুলু জেলায় অবস্থিত পৃথিবীর স্বর্গ নামে পরিচিত মানালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭২৬ ফিট উচু ভূমি। উচু-নিচু বরফ আর পাথুরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে চোখে পড়ে সর্পিলাকার বিয়াস নদীর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। পাহাড় ট্রেকিং, ক্যাম্পিং ছাড়াও মানালির সোলাং ভ্যালিতে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট্স, মানালি পাখি অভয়ারণ্য, রিভার রাফটিং এবং পুরাতন মন্দিরগুলোর আকর্ষণে ছুটে যান পর্যটকরা।

শিমলা
হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলার মূল আকর্ষণ হলো এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জাখু পাহাড় ও এখানে অবস্থিত হনুমান দেবতার মন্দির। এছাড়া ভারত ও ব্রিটিশ সভ্যতার অদ্ভূত মেলবন্ধন দেখতে হলে যেতে হবে ভারতের এই রাজ্যে। পর্যটকরা এখানকার মল রোড ঘুরে কেনাকাটা এবং বিখ্যাত টয় ট্রেনে উঠতে একদম-ই ভুলেন না।

ডালহৌসি
চাম্বা জেলায় অবস্থিত পাহাড়ী এলাকা খাজ্জিয়ারের এই উপত্যকাটি পরিচিত ভারতের সুইজারল্যান্ড নামে। নগর জীবনের কোলাহল থেকে রেহাই পেতে সম্পূর্ণ অন্য এক জগতে হারিয়ে যেতে ডালহৌসি সেরা জায়গা। এই অনুভূতিটা বহুগুণে বেড়ে যায় এর ডাইনকুন্ড, গঞ্জি ও বাকরোটা পাহাড়ে আরামপ্রদ ট্রেকিং-এর সময়। এছাড়া অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক স্থান শহরের প্রাচীনতম গির্জা সেন্ট জোন্স।

জম্মু-কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থানসমূহ

পাহালগাম
বেতাব উপত্যকা এবং লিডার হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত পাহালগাম হল এমন জায়গা যেখানে আপনি আদিম জলের নদী এবং চিত্তাকর্ষক গভীর উপত্যকাগুলি দেখতে পাবেন। এছাড়াও, পাহলগাম লিডার লেকে রিভার রাফটিং এবং ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি আইটেম কেনার জন্য বিখ্যাত।

শ্রীনগর
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর ভারতের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। নৌকায় চড়ে নির্মল ডাল লেকে ঘোরা, শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে সারা শহর দেখা দর্শনার্থীদের শ্রীনগরের প্রেমে ফেলে দেয়। সম্প্রতি ডাল লেকে চালু হওয়া এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল জায়গাটির প্রতি দর্শনার্থীর আকর্ষণ বৃদ্ধি করছে।

কাশ্মীর উপত্যকা
কারাকোরাম এবং পীর পাঞ্জাল রেঞ্জ দ্বারা পরিবেষ্টিত এই উপত্যকাটির আকার অদ্ভূত ডিম্বাকৃতির। এটি হিমালয়ের বৃহত্তম উপত্যকা এবং এর ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথটি সকল ট্রেকার এমনকি স্থানীয়দের জন্যও একটি চমৎকার ট্রেইল। সমতল পাহাড়ী রাস্তায় আরামদায়ক বাইকিং-এর জন্যও অনেকে এ পথ বেছে নেয়।

লাদাখ-এর দর্শনীয় স্থানসমূহ

হেমিস জাতীয় উদ্যান
বিখ্যাত মঠ হেমিস গোম্পার নামানুসারে হেমিস জাতীয় উদ্যান অভয়ারণ্য লাদাখের বিশ্বজুড়ে বিস্ময়কর সৌন্দর্য্য সন্ধানীদের আদর্শ গন্তব্য। এটি ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান যা হিমালয়ের প্রধান রেঞ্জের উত্তরে স্থাপিত হয়েছে। খুব একটা ঘন বসতি না থাকায় এখানে তাঁবু খাটাতে হয় ট্রেকারদের। হেমিসের প্রচুর সংখ্যক বিরল প্রজাতির পশুর মধ্যে ভরল, তুষার চিতা, নেকড়ে, আইবেক্স, তিব্বতি আরগালি ও লাদাখ ইউরিয়াল অন্যতম।

প্যাংগং টিসো লেক
৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হ্রদের কিছু অংশ পড়েছে চীনে এবং কিছু অংশ তিব্বতে। শীতে এর হিমায়িত আচ্ছাদন এক নজরকাড়া দৃশ্যের অবতারণা করে। তবে জুনের উষ্ণতায় বরফ গলে গেলে হ্রদটি সমহিমায় আবির্ভূত হয়। লেকের চারপাশে হাজারো অতিথি পাখির ডানা ঝাপটানো দেখার সময় ক্লান্ত পর্যটক পলক ফেলতে ভুলে যান।

নুব্রা উপত্যকা
বাদামি কেকের ওপর বরফ কুঁচির আস্তরণ। ঠিক এমনটাই মনে হয় শীতকালে নুব্রা উপত্যকাকে। লাদাখের লেহ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে কাশ্মীর ও তিব্বতের মাঝে অবস্থিত এই স্বর্গটি উপত্যকা কুঞ্জ, ব্যাক্ট্রিয়ান উট ও প্রাচীন মঠের জন্য বিখ্যাত। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ নুব্রা ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক হয়।

হিমাচল, জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের ভিসা প্রসেসিং
এই জায়গাগুলোর প্রত্যেকটিরই ভারতের দিল্লী অথবা চণ্ডিগড়ের সঙ্গে সংযোগ আছে। ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি দিল্লি বা চণ্ডিগড়ে যাওয়া যায়। তাই আকাশপথে যেতে হলে ভারত ভ্রমণ ভিসা আবেদন করার মুহূর্তে পোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাই এয়ারপোর্ট নির্বাচন করা যেতে পারে। আর স্থলপথে গেলে কলকাতা যাওরার জন্য কোনো পোর্ট নির্বাচন করা যায়। কারণ কলকাতা ট্রাঞ্জিট নিয়ে ভারতের যে কোন শহরে ভ্রমণ করা যায়।

বাংলাদেশ থেকে হিমাচল, জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের যাতায়াত

বাংলাদেশ থেকে হিমাচল প্রদেশ
আকাশপথে ঢাকা থেকে চণ্ডিগড় তারপর সেখান থেকে বাসে বা ট্যাক্সিতে মানালী, শিমলা, ডালহৌসি পৌঁছা যায়। এ রুটে সবচেয়ে দ্রুত যাওয়া যায়; কমপক্ষে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ ঘণ্টায় কিন্তু খরচ সবচেয়ে বেশি। শুধু যেতেই খরচ পড়তে পারে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ হাজারেরও বেশি। এছাড়া সঠিক সময়ে টিকেটের খরচের আধিক্যের ব্যাপারটা তো আছেই।

স্থলপথে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে কলকাতা; অতঃপর কলকাতার অরবিন্দ সেতু থেকে বাসে হাওড়া স্টেশন। সেখান থেকে ধরতে হবে চণ্ডিগড়ের ট্রেন। তারপর চণ্ডিগড় থেকে বাসে করে শিমলা, মানালী অথবা ডালহৌসি।

এ রুটে গন্তব্যের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে সময় লাগতে পারে প্রায় ২ দিন ১৬ ঘণ্টা। আর খরচ পড়তে পারে প্রায় ৮ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ থেকে জম্মু-কাশ্মীর
বাংলাদেশ থেকে জম্মুর-কাশ্মীরের উপরোল্লিখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে শ্রীনগরে। এই রুটে সবচেয়ে দ্রুততম মাধ্যম হচ্ছে বিমান; যেখানে সময় লাগে সর্বোচ্চ নয় ঘণ্টা। কিন্তু এখানে খরচ গুণতে হয় প্রায় সাড়ে ২২ হাজার থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।

স্থলপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের ট্রেনের রুটটা অনুসরণ করা যেতে পারে। হাওড়া থেকে জম্মু তাওই আরেকটা ট্রেনে। কলকাতায় ট্রেন বদলে আরেকটি ট্রেনে সরাসরি জম্মু তাওইতে পৌঁছা যায়। অতঃপর জম্মু থেকে বাসে করে শ্রীনগর। 

এই পুরো যাত্রায় সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা আর খরচ হতে পারে ৭ থেকে ১২ হাজার টাকার মত।

বাংলাদেশ থেকে লাদাখ
বিমানে করে দিল্লীতে নেমে সেখান থেকে আবার প্লেনে লাদাখ যাওয়ার পথটা বাংলাদেশ থেকে লাদাখ ভ্রমণের দ্রুততম উপায়। এখানে সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা এবং খরচ হতে পারে সাড়ে ১৮ থেকে ৫৩ হাজার টাকা।

স্থলপথে একইভাবে ট্রেন ও বাস যোগে কলকাতার হাওড়ায় পৌঁছে সেখান থেকে দিল্লির ট্রেন পাওয়া যাবে। অতঃপর দিল্লী থেকে বিমানে লাদাখের লেহ। এখানে খরচ হতে পারে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা এবং সময় লাগবে সর্বমোট ১ দিন ১০ ঘন্টা।

হিমাচল, জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ-এ পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
শিমলায় লাক্কার বাজার বেশ কিছু হোটেল আছে যেখানে ভাড়া বেশ সাশ্রয়ী। মানালির শহরতলীতে মডেল টাউন রোডের হোটেলগুলোতে অফ সিজনে ৫০০ থেকে ১০০০ রুপির মধ্যে রুম পাওয়া যায়। এখানে বাঙালি খাবারের হোটেলও আছে।

হোটেল থেকেই মেঘে ঢাকা অথবা বরফ সাদা পাহাড় দেখতে চাইলে যেতে হবে ওল্ড মানালিতে। সেখানে হোটেল ভাড়াও বেশ কম। এখানে কম খরচেই থাকা ও খাওয়ার প্যাকেজ মিলে যায়। এছাড়া ভাসিস্ত, হরিপুর, আলেও ও কুল্লু-মানালি হাইওয়ের আশপাশে কম ভাড়ায় অনেক হোটেল পাওয়া যায়। এগুলোর পরিবেশও অনেক ভালো।

জম্মু-কাশ্মীর ঘোরার ক্ষেত্রে পর্যটকরা প্রায় সময় আইকনিক হাউসবোটে থেকে যান। এখানকার মাঝারি ভাড়ার হোটেলগুলোতে মাথাপিছু খরচ ২০০০ থেকে ৫০০০ রুপি।

নুব্রা উপত্যকার হুণ্ডারে অথবা ডিসকিটে দু'জনের জন্য থাকা-খাওয়ার প্রতিদিনের খরচ পড়ে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা। মোরিরি হ্রদের কাছাকাছি কোরজোক গ্রামে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। একজনের জন্য থাকা-খাওয়ার খরচ দিন প্রতি প্রায় দেড় থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মত পড়ে।

বাংলাদেশে থেকে ভারতের হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণে যাওরার জন্য অবশ্যই আগে থেকেই পুরো যাত্রাটা হতে হবে সুপরিকল্পিত। বিশেষত এখানে ভ্রমণের জায়গাগুলোতেই রাত্রিযাপনের প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থায় সঙ্গে খাবার স্যালাইন, প্রয়োজনীয় ওষুধসহ, পোকা-মাকড় নিরোধক রাখা বাঞ্ছনীয়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা থেকে নিজেকে ও সঙ্গীদের বিরত রাখতে হবে। 

শ্রীলঙ্কায় গ্যাস স্টোভ রপ্তানি করছে ওয়ালটন
সুরমায় নান্দনিক ট্যুরিস্ট নৌকার যাত্রা শুরু

আপনার মতামত লিখুন