বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

বৈশ্বিক পর্যটন খাত করোনার আগের অবস্থায় ফিরছে

অনলাইন ডেস্ক
০৬ মে ২০২৩

কোভিড-১৯, তথা করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব খাত, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পর্যটন খাত। তখন গোটা দুনিয়াতেই পর্যটনশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ধকল কাটিয়ে খাতটি আবার গতি ফিরে পেয়েছে। ফলে বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটনশিল্পের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি করোনার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে শুরু করেছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বা বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাত প্রায় ২০১৯ সালের পর্যায়ে ফিরে যাচ্ছে। সেবার বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট, তথা অর্থনৈতিক প্রভাব-সংক্রান্ত এ গবেষণা অনুযায়ী চলতি বছর বৈশ্বিক পর্যটন খাত ২০১৯ সালে যে অবস্থায় ছিল, তার ৯৫ শতাংশের বেশি পুনরুদ্ধার হবে। এরই ধারাবাহিকতায় পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি আগামী বছর মহামারির আগেকার অবস্থাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে সংস্থাটি আশা করছে।

ডব্লিউটিটিসির পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি ২০২৩ সালে বৈশ্বিক পর্যটন খাতের সম্মিলিত আয় ৯ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। এটি ২০১৯ সালের বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের আয়ের চেয়ে মাত্র ৫ শতাংশ কম। এর মানে, চলতি বছর ভ্রমণ ও পর্যটন খাত করোনার আগের বছরের আয়ের ৯৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে চলেছে। ইতিমধ্যে ৩৪টি দেশ করোনা মহামারির আগের অবস্থানকে অতিক্রম করে ফেলেছে।

গত বছর অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার গতি অব্যাহত ছিল। ফলে ২০২২ সালে এই খাতের আয় ২২ শতাংশ বেড়ে ৭ দশমিক ট্রিলিয়ন বা ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে ওঠে। এই আয় ২০২২ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতির ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের পর এটিই ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অবস্থান।

ডব্লিউটিটিসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনসহ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ-পর্যটনের ওপর আরোপিত দীর্ঘ নিষেধাঞ্জার কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। এতে এই খাতের পুনরুদ্ধারের গতি মন্থর হয়ে পড়েছিল। তবে চীন সরকার এ বছর তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে পর্যটন খাত কিছুটা বিকশিত হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর এই খাতের আয় করোনা মহামারির আগের অবস্থানকে ছাড়িয়ে যাবে।

করোনা মহামারির কারণে পর্যটন খাতের কর্মসংস্থান মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। করোনা মহামারির আগে এই খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৩৩৪ মিলিয়ন বা ৩৩ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের। কিন্তু মহামারির প্রথম বছর ২০২০ সালে খাতটিতে কর্মসংস্থান ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি কমে ২৬৪ মিলিয়ন বা ২৬ কোটি ৪০ লাখে নেমে যায়। তবে ২০২১ সালে নতুন ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ এবং ২০২২ সালে ২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। বদৌলতে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার করা হয়। এর ফলে বৈশ্বিক পর্যটন খাতে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়ায় ২৯৬ দশমিক ৬০ মিলিয়ন বা ২৯ কোটি ৬৬ লাখ।

আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিদেশি পর্যটকদের ব্যয় ৮২ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ১০ হাজার কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

ডব্লিউটিটিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জুলিয়া সিম্পসন বলেন, ‘ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে এই খাতের আর্থিক অবস্থান ২০১৯ সালের কাছাকাছি পৌঁছাবে। আর ২০২৪ সালে আমরা ২০১৯ সালের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাব বলে আশা করছি।’

জুলিয়া সিম্পসন আরও বলেন, এ বছর পর্যটন খাতে পুনরুদ্ধারের গতি আরও বাড়বে। কারণ, চীনা ভ্রমণকারীরা বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করবেন। এভাবে আগামী ১০ বছর ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের গতি বাড়তে থাকবে।

বৈশ্বিক পর্যটন সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে যে এই খাতের জিডিপি, মানে আয় আগামী ২০৩৩ সাল নাগাদ ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে, যা হবে তখনকার বিশ্ব অর্থনীতির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ওই সময়ে সারা বিশ্বের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়াবে ৪৩০ মিলিয়ন বা ৪৩ কোটি, যা হবে বিশ্বের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার ১২ শতাংশ।

ডব্লিউটিটিসি আরও বলছে, চলতি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ১৮৫টি দেশের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই পর্যটন খাতের আয় সম্পূর্ণরূপে মহামারির আগের স্তরে ফিরে যাবে বা ৯৫ শতাংশ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে।

মিরপুরে ওয়ালটন মোবাইলের নতুন ব্র্যান্ড শপ ‘মোবাইল নীড়’
ওয়ালটন ফ্রিজারে থাকবে লাভেলোর আইসক্রিম

আপনার মতামত লিখুন