শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

শুভ জন্মদিন

বহুমাত্রিক শিল্পী মামুন হোসাইন

নাসরিন আখতার
২০ জুন ২০২০
 শিল্পী মামুন হোসাইন

শিল্পী মামুন হোসাইন

শরীর হলো মনের আধার

শরীর ঘরে থাকে

মন সে সময় দৌড়ে বেড়ায়

নবগঙ্গার বাঁকে 

এই হচ্ছেন শিল্পী মামুন হোসাইন। উপরের পংক্তিগুলো তারই লেখা। আপাদমস্তক একজন শিল্পী মামুন হোসাইন। নবগঙ্গা এবং কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরা, ডুঙ্গায় চড়া, সাঁতার কাটা, শাপলা তোলা, ডাহুকের ডিম...দিয়ে যার শৈশব কৈশোর রঙ্গিন হয়ে উঠেছে, বুঝে উঠবার আগেই তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন রঙ তুলি। আশেপাশের মানুষ, প্রকৃতি, বাজারের দোকানে টাঙানো কোনো পোস্টার বা কারো হাতে আঁকা ছবি হুবহু এঁকে ফেলতে পারতেন। আর তার সে আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন আশেপাশের মানুষ। তখন অবশ্য নিজের মনের আনন্দে আঁকতেন কাগজে, দেয়ালে, মাটিতে যখন যেখানে খুশি। তবে তার আাঁকাআকির জগত জুড়ে আছে মায়ের এক অসীম প্রভাব। ছোটবেলা থেকে চাদরে, বালিশে, রুমালে মায়ের আঁকা ফুল, পাখি, লতা-পাতা, আর সেগুলো যত্নে সেলাই করা দেখতে দেখতেই ভেতরে সৌন্দর্য আর শিল্পবোধ গড়ে ওঠে তার। মূলত কারুশিল্পী মায়ের আঁকা এবং সেলাই করা নকশি কাঁথা দেখতে দেখতেই আঁকার প্রতি ভালোবাসা জন্মে।

শিল্পী মামুন হোসাইনের জন্ম ১৯৭৭ সালের ২১ জুন, মফস্বল শহর ঝিনাইদহের ব্যাপারীপাড়ায়। শৈশব-কৈশোরের বড় একটা অংশ কেটেছে গ্রামেই। তখনও জানতেন না, ছবি আঁকার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ আছে। বরং ভাবতেন, পড়াশুনার পাট চুকিয়ে বিদেশে চলে যাবেন। পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু স্কুল পর্ব শেষ করে নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় ভর্তি তার জীবনের বাঁক বদলে দেয়। তার নিজের ভাষাতেই ‘নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে বুঝলাম জীবনে ছবি আঁকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। করতে চাইও নি, এবং সেটাই করছি এখনো।’ পারিবারিক নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মায়ের অপরিসীম আগ্রহ আর সহযোগিতায় বিপরীত সমস্ত স্রোত পেরিয়ে অঙ্কন শৈলী দিয়ে অনন্য এক ভুবন নির্মাণ করেছেন তিনি।আর এ কাজে তিনি যোগ্য সহধর্মীনি হিসেবে পাশে পেয়েছেন আরেক গুনী শিল্পী নার্গিস আখতার পুনমকে। নারায়নগঞ্জ চারুকলার সেই শুরুর দিনগুলো থেকে আজ পর্যন্ত যিনি তার এক নিরাপদ ছায়া। আর এখন তো প্রেমিকা আর আাঁকাআকি একাকার হয়ে গেছে তার কাছে।

তার অঙ্কন শিল্পের মাঝে অনেকেই বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতানের ছায়া দেখতে পান। টাইপোগ্রাফি থেকে কার্টুন, প্রচ্ছদ, স্কেচ, অলঙ্করণ সব ধরনের কাজেই তিনি সিদ্ধহস্ত। প্রচ্ছদ শিল্পে পৌঁছে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।তবে মিনিয়েচার মাধ্যমে কাজ করতে তিনি সবচে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ছোট একটা কাগজ আর বলপয়েন্ট পেলেই হয়, কত যে গল্প বলে যান সেই কাগজের বুকে। এক টুকরো কাগজ এতো জীবন্ত হয়ে ওঠে যে- পুকুরের আলতো ঢেউ, মাটির বুক জেগে ওঠা সবুজ ঘাস, ছোটগাছ বা গাছের গায়ের ছালসব মূর্ত হয়ে ওঠে। 

মামুন হোসাইনের পোট্রেইট ড্রইংয়েও বিশেষত্ব রয়েছে। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, রবীন্দ্রনাথ, ওমর খৈয়াম, এস.এম সুলতান, শিল্পাচার্য  জয়নুল আবেদিন, বিনয় মজুমদার, হুমায়ূন আহমেদ সবাই যেন তার হাতে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ও কিশোর বাংলায় শিল্প সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শিল্পকলার বহুমাত্রিক এই শিল্পী তার কাজের নান্দনিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমি পুরস্কার, টিআইবি পুরস্কার, ডেইলি স্টার পুরস্কার, দিগন্তধারা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া চারুকলায় ছাত্র জীবনেও একাধিক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। 

 আজ ২১ জুন বহুমাত্রিক এই শিল্পীর জন্মদিন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে আমাদের শিল্পকলার জগতকে আরও সমৃদ্ধ করবেন এই প্রত্যাশা থাকলো। 

লেখক: সহকারী সম্পাদক, সাম্প্রতিক দেশকাল

টাকাটা ফেরত দেওয়া কি ঠিক হবে?
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাল্পনিক নায়ক

আপনার মতামত লিখুন