শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

দার্জিলিঙে বৃষ্টি কালিম্পঙে রোদ: পাঠকের অবাক অবগাহন

চন্দ্র মল্লিকা
২৮ আগস্ট ২০২১

লেখকের মতো আমিও ছোটবেলা থেকেই দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি নামগুলোর সঙ্গে পরিচিত। ইন্ডিয়ান মুভিগুলোতে প্রায়ই এসব জায়গা দেখানো হয়। একটু বড় হওয়ার পর আশেপাশের অনেকের কাছেই শুনতাম দার্জিলিং ঘুরতে যাওয়ার কথা। তারপর সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাঁহন’ পড়লাম। এই উপন্যাসের অর্ধেক প্লট জলপাইগুড়ি, চা বাগান ইত্যাদি ঘিরে। তবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়েছিলাম সমরেশ বাবুর ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাসে এসব জায়াগার বর্ণনা পড়ে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণা, এভারেস্ট, মাকালু কালিম্পং, লামাহাট্টা, সান্দাকফু, সুখিয়াপোখরি গল্পের প্রয়োজনে তিনি এসবের কোনোটিকেই বাদ দেননি। সেই আগ্রহ থেকেই মূলত ‘দার্জিলিঙে বৃষ্টি কালিম্পঙে রোদ’ বইটি পড়া।

বইয়ের শুরুটা অসাধারণ! বাবার যাত্রাপালা, রাজা, জমিদারদের গল্প থেকে দার্জিলিঙে ভ্রমণের দিকে গল্পের টার্ন নেয়া সত্যিই চমকপ্রদ! আর মাঝে মাঝে কিছু বাক্যে কাব্যিক ঢঙে ছন্দ মেলানো উপভোগ করেছি। যদিও ইতিহাস সম্পর্কে খুব কমই জানি, তবুও ইতিহাস আমার প্রিয় সাবজেক্ট। তাই ‘রবিঠাকুর ও গৌরীপুর হাউজ’ পর্বটা আমার ভালো লেগেছে। গোর্খাদের সম্পর্কে একটু-আধটু জানতাম। আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছি এই বই থেকে।

সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো লেখার ফাঁকে ফাঁকে ভ্রমণ সংক্রান্ত ছবি। বিষয়টি ভ্রমণ কাহিনিতে নতুনত্বের ছোঁয়া বলা যায়। ভ্রমণ কাহিনিতে ছবি সংযোজন এর আগে আমি দেখেছি জাতির জনকের ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইতে। আমার মতো দুর্ভাগা পাঠক যারা কখনও এসব জায়গায় যায়নি তাদের নিছক কল্পনা নিয়ে বইটি পড়তে হয়নি। ছবিগুলো এই পুরো ভ্রমণ কাহিনিকে আরও বেশি জীবন্ত করে তুলেছে।

তবে বাতাসিয়া লুপ এবং ঘুম রেলস্টেশন পর্বটা একটু বেশি ইনফরমেটিভ মনে হয়েছে আমার কাছে। ‘রবিঠাকুর ও গৌরীপুর হাউজ’ পর্বে নেপালকে পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতে নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র থাকলেও বর্তমানে অর্থাৎ ২০১৫ সালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নেপালকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলেই আমি জানি।

এটুকু বাদ দিলে সব মিলিয়ে ‘দার্জিলিঙে বৃষ্টি কালিম্পঙে রোদ’ সুখপাঠ্য। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। এবং এ কথাটিও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, লেখক উদয় হাকিমের রক্ত-মজ্জায় মিশে আছে লেখকশৈলী। তার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছোট ছোট বাক্য, সহজ সাবলীল উপস্থাপনা। আর এ কারণেই লেখার মধ্যে তথ্যগুলো শুধু তথ্য মনে হয়নি। অনবদ্য উপস্থাপনায় সেগুলোও সাহিত্য মান অর্জন করেছে। হয়ে উঠেছে পাঠকের কাছে আরো উপভোগ্য।

নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায়, পাঠককে তিনি ঝরনার মেঠো স্রোতের মতো টেনে নিয়ে চলেন শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। এবং পাঠক অবাক অবগাহন শেষে উপলব্ধি করেন তার পাঠতৃষ্ণা শেষ হয়নি। অতিসামান্য বিষয়ও তার লেখায় অনন্যতায় পূর্ণ হয়। স্বভাবসুলভ রসবোধ এবং পরিমিতি তার লেখাকে আরো উপজীব্য করে। এর মধ্যে যদি লেখার বিষয় হয় রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত দার্জিলিং, কালিম্পং তাহলে সেটি পাঠক হৃদয় আলোড়িত করবে সেটাই স্বাভাবিক। লেখক হিসেবে পাঠকের মন বুঝতে পারাটাও কম সাফল্য নয়!

বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে বাংলাবান্ধা, চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শুরু করে হোটেল স্বস্তিকা, মিরিক, টাইগার হিল, পিস প্যাগোডা, বাতাসিয়া লুপ, ঘুম রেলস্টেশন, চা বাগান, মুভি দেখা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লামাহাট্টা, পাইন ভিউ নার্সারী, পাইন গাছের সারি, দোলো বাইও গার্ডেন, ত্রিবেণী সব মিলিয়ে অসাধারণ। ভ্রমণকাহিনি পড়ে পাঠকের একবার হলেও এসব জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছেটা প্রবল হবে। আর কোনো সৌন্দর্য্যের প্রতি পাঠককে আগ্রহী করে তুলতে পারাটাই লেখকের সার্থকতা।

হরিণের দ্বীপে একদিন
ওয়ালকার্টের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিতে ওয়ালটন প্লাজার চুক্তি

আপনার মতামত লিখুন