বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

ঈদের ছুটির সচেতনতা

জাকির উদ্দিন আহম্মেদ
১৮ এপ্রিল ২০২৩
জাকির উদ্দিন আহম্মেদ

জাকির উদ্দিন আহম্মেদ

বর্তমানে সিকিউরিটি এন্ড সেইফটি ইস্যু নিয়ে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত। আমাদের সেইফটি এবং সিকিউরিটির ব্যাপারে আমাদেরকেই সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে নিজেকে এবং নিজের পরিবার সহ প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। কি করনীয় রয়েছে এই ঈদের ছুটিতে আমাদের, আসুন জেনে নিই। 

বাসা অথবা প্রতিষ্ঠানে যদি থাকে সি সি টিভি মনিটরিং সিস্টেমঃ ঈদের ছুটিতে প্রতিষ্ঠান অথবা বাসা বন্ধ করে যাওয়ার আগে কিছু কাজ করতে হবে আপনাকে, যা আপনি নিজেই সেরে নিতে পারেন খুব সহজেই। যেমন- 

১। ডি ভি আর এবং এন ভি আর এ রেকর্ডিং হচ্ছে কি না দেখতে হবে এবং যদি না হয়, চালু করে দিতে হবে, চালু না হলে ডি ভি আর রিসেট করা অথবা হার্ডডিক্স ফরমেট দিতে হতে পারে। 

২। রেকর্ডিং চালু থাকলে তারিখ ও সময় সঠিক রয়েছে কি না দেখতে হবে। 

৩। প্রতিষ্ঠান অথবা বাসার মেইন পাওয়ার সিস্টেম বন্ধ করলে DVR বা NVR সহ ক্যামেরা বন্ধ হচ্ছে কি না দেখতে হবে। 

৪। অনলাইনে মনিটরিং এর জন্য WiFi এবং নেট লাইন সচল রয়েছে কি না দেখতে হবে 

৫। মনিটর অথবা টিভি সংযোগ সচল থাকলে তা খুলে অথবা বন্ধ রাখতে হবে, যদি মনিটর করার মত কেউ না থাকে বাসায় অথবা প্রতিষ্ঠানে। 

৬। ইলেকট্রিক পাওয়ার সংযোগ এবং অথবা ক্যামেরার সংযোগ লুছ কানেকশন রয়েছে কি না দেখতে হবে। 

আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি থেকে টাইম এটেন্ডেন্স অথবা এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম তাহলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে এই ঈদের ছুটিতে। আপনার প্রতিষ্ঠান অথবা বসবাসরত স্থাপনায় যদি থাকে ফায়ার এলার্ম সিস্টেম, তাহলে চেক করে নিতে পারেন এখনি-  

১। ফায়ার এলার্ম সিস্টেম প্যানেল সচল রয়েছে কি না? প্যানেলে কোন ফলস এলার্ম সো করছে কি না? বেল এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কি না? 

২। প্যানেলে ব্যাটারী চার্জ নিচ্ছে কি না এবং বেকআপ দিচ্ছে কি না? 

৩। সকলকে সচেতন করে একবার কল পয়েন্টে প্রেস করে সিস্টেমকে চেক করে নিন 

৪। পাবলিক এনাউন্সমেন্ট (PA) সিস্টেম সচল রয়েছে কি না এবং এলার্ম সিস্টেমের সাথে ইন্ট্রিগ্রেশন রয়েছে কি না? যদি অটো ভয়েস ইভাকুয়েশন থাকে তা সচল রয়েছে কি না। 

৫। যদি কোন ডিটেক্টর বা ডিভাইস নষ্ট অথবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে তাহলে ঈদের ছুটির আগেই সারিয়ে নিতে হবে।  

আপনার প্রতিষ্ঠানের অথবা বসবাসরত স্থাপনায় অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু কাজ সেরে নিতে হবে আপনাকেই, বাসস্থান বা প্রতিষ্ঠান ঈদের ছুটিতে বন্ধ রাখলে, অবশ্যই বন্ধ রাখুন-

১। এসির মেইন পাওয়ার সুইচ

২। গ্যাসের চুলার সংযোগ বা সিলিন্ডার এর সংযোগ 

৩। সকল পানির কল অথবা সংযোগ 

৪। বিচ্ছিন্ন করুন সকল প্রকার প্লাগ লাইন সংযোগ 

৫। খুলে রাখতে হবে টিভির এন্টেনা বা ডিস কানেকশন সংযোগ 

যদি হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (কমার্শিয়াল অথবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল) অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ডের কাছে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের কমন স্পেসের চাবি বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ব্যবস্থাপনা। বন্ধ রাখতে হবে সকল অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সংযোগ। 

যদি হয় বাসা তাহলে জানিয়ে যেতে হবে আপনার পাশের বাসা অথবা কাছের আত্মীয়ের বাসায় যে, আপনি কতদিন থাকছেন না, সোশ্যাল মিডিয়াতে না জানানোই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। বন্ধ রাখতে হবে সকল প্রকার অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সংযোগ। 

আপনার প্রতিষ্ঠান অথবা বসবাসরত স্থাপনায় রাখতে হবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের বা বাসার সিকিরিটি গার্ডকে জানতে হবে এর ব্যবহারবিধি।  

যদি থাকে ফায়ার হাইড্রেন্ট অথবা স্প্রিংক্লার সিস্টেম তাহলে অবশ্যই চেক করে নিতে হবে এর কার্যকারিতা এবং পাম্প সিস্টেমের অটোমেটিক ব্যবস্থাপনা। ডিজেল ইঞ্জিন পাম্পের ক্ষেত্রে মজুদ রাখতে হবে ডিজেল এর সরবারাহ, অবশ্যই চেক করতে হবে ওয়াটার রিজার্ভার এ পানির উপস্থিতি এবং ব্যবস্থাপনা। পুরো সিস্টেমকে একবার ঈদের বন্ধের আগে সচল করে দেখতে হবে কার্যকারিতা।

সিকিউরিটি গার্ডের জন্য জরুরি নির্দেশনা হচ্ছে- ১। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কোন প্রকার ধূমপান করা যাবেনা। ২। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কোন প্রকার মোমবতি বা কয়েল জালানো যাবেনা (টর্চ লাইট/চার্জ লাইট এবং মশারী ব্যবহার করতে হবে) 

দোকান, মার্কেট, প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা বন্ধ রাখতে হবে। সোন্দর্য বর্ধনের জন্য বা নিরাপত্তার প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের এবং বাস্থানের আলোক সজ্জা ব্যাবস্থাপনার জন্য লাইটের প্রয়োজনে শুধুমাত্র রাতের বেলায় জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। চুরি হওয়ার ভয়ে বাসা, দোকান, মার্কেট অথবা অফিসে ২৪ ঘন্টা লাইট জ্বালিয়ে ঈদের ছুটি কাটানো যাবেনা।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যখন আমাদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়িতে যাবো, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমাদের গাড়ির ইঞ্জিন এ পর্যাপ্ত পানিসহ রিজার্ভারে পানির মজুদ রয়েছে কি না। বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়েদার টেম্পারেচার ৪০-৪২ ডি: সে: যা খুব সহজেই ইঞ্জিন গরম হয়ে ঘঠতে পারে বিপদসহ ইঞ্জিন বিকল। 

আমাদের বাসা, দোকান, অফিস এবং শপিংমল ও মালামালের গোডাউনে ঈদের বন্ধের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে ভিতরে বাতাস চলাচলে ব্যবস্থা রয়েছে কি না? না থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি, কারণ এই গরমে বায়ু চলাচল অত্যন্ত জরুরি। আমাদের একটু অসচেতনতাই এনে দিতে পারে বড় ধরনের বিপদ সহ অগ্নি দুর্ঘটনা। তাই আসুন এই ঈদের ছুটিতে একটু সচেতন হই এবং ঈদকে আনন্দময় করি । 

লেখক: সিইও, জেড এম ইন্টারন্যাশনাল এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ইলেক্ট্রনিক্স সেইফটি এন্ড সিকিউরিটি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)

গ্রামীণফোন নিয়ে এলো ‘ঈদ স্মার্ট মেলা’
ঈদে ‘অ্যানুয়াল রিপোর্ট’ ফিচার নিয়ে আসছে ইমো

আপনার মতামত লিখুন