শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাঁও গেরাম

দেশের সেরা ৩ সরিষা ফুলের রাজ্য

 ডেস্ক রিপোর্ট
১৮ জানুয়ারি ২০১৯

চোখে সর্ষেফল দেখার সময়ই এখনই! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারলেই দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের অসংখ্য ছবি। এসব ছবি দেখে যে কারোরই হলুদ রাজ্যে ঘুরে আসার ইচ্ছে জাগতেই পারে। কিন্তু কোথায় পাবেন সরিষা ক্ষেতের খোঁজ? গ্রাম-বাংলার চারপাশ এখন সরিষা ক্ষেতে ঢাকা। যেদিকেই চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। যে কোনো দিন কিছুটা সময় করে তাই ঘুরে আসতে পারেন কাছে-দূরের কোনো এক সরিষা ক্ষেত থেকে। তবে এই সময়ে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গা হয়ে উঠে পর্যটন কেন্দ্র। সেই জায়গাগুলোর খোঁজ নিয়ে এই আয়োজন-

সরিষা ক্ষেতের জন্য মানিকগঞ্জের ঝিটকা খুবই পরিচিত একটি নাম। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে থাকা সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারে জায়গাটিতে। দুই পাশে বিস্তৃত হলুদ ক্ষেতের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি খেজুর গাছ। বর্তমান সময়ে সরিষা ক্ষেতগুলোর কোনো কোনো জায়গায় মধুচাষিরা বসেন মধু সংগ্রহের জন্য। মাঘের ভরা শীতেও দূর থেকে হলুদ আভার আহ্বান। কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর, তাও চারদিকে হলুদের সমাহার। মনে হয় যেন রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে অনেককেই দেখা যায় এই রাজ্যে! সবাই যেন হুমড়ে পড়ে হলুদের ওপর।

ঝিটকায় যেতে হলে আপনাকে প্রথমে ঢাকার গুলিস্তান থেকে মানিকগঞ্জের বাসে উঠতে হবে। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে চড়ে ঝিটকা, সারাদিনই এ বাস পাওয়া যায়। এ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাওয়া ভালো। যাদের সে ব্যবস্থা নেই তারা ভাড়ায় মাইক্রোবাস কিংবা অন্য কোনো গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।

কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি। চারিদিকে বিরাজ করছে শীতের আবহ। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদের বিশাল সমারোহ। কুয়াশা ও ঝলমলে রোদের খেলা এখন দিগন্ত বিস্তৃত হলদে বরণ সরিষার ফুলে ফুলে। দিগন্তজোড়া হলদে রঙের সেই সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারেন আড়াইহাজার। চাইলে আপনার প্রিয় মানুষটিকেও এই ভ্রমণের সফরসঙ্গী করতে পারেন। আর সরিষা ফুলের সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়া, মেঘনা নদীতে ঝাপঝাঁপি, আড়াইহাজারের স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া ও বিরামহীন ছবি তোলা।

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাসে প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আড়াইহাজার পৌঁছানো সম্ভব। আড়াইহাজার নেমে প্রথমেই খেজুরের রস দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। এরপর অটোতে করে কাঙ্খিত হলুদ ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করুন। দুপুরটা কাটিয়ে দিন হলুদের রাজ্যেই। দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে পারেন মেঘনা পাড়ে।

ফুসফুসের উপকার সাধিত হয় সরিষা ফুলের ঘ্রাণে। তাই শীতে বসে না থেকে ঝালকাঠির ধানসিড়ি ইউনিয়নের সাচিলাপুর গ্রামের হলুদে মিশে যান একদিন। সেখানে সবাই ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নাই। কৃষকরা ব্যস্ত সরিষার পরিচর্যায়, ভ্রমর মধু খুঁজে ফিরছে ফুলে ফুলে। দেখবেন নানা রঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষা ক্ষেত। রঙ-বেরঙের প্রজাপতি ডানা ঝাপটানো চিত্তে জাগাবে নবতর আনন্দ। কোথাও ঝলক দিয়ে উঠছে কালো ডানায় হলুদ-লালের মিশ্রণ, নীল, সবুজ, লাল-নীলের ডোরাকাটা বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রজাপতিরা এখানে আসে বিশ্রাম নিতে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরিষার ঝাঁজে তাদেরও উপকার মেলে। অনেক দূর উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর পর সরিষার মাদকতা আকৃষ্ট করে।

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ বা স্টিমারে রাজাপুর ঘাটে নেমে যেকোনো পরিবহনে সরিষা গ্রামে যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট-স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস অস্ট্রিচ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ ছাড়ে। সপ্তাহের দিনগুলোতে পালাক্রমে ছাড়ে স্টিমারগুলো।

কাছে কিংবা দূরে, যে দিকেই বেড়াতে যান না কেনো সরিষার রাজ্যে ভ্রমণে যেতে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা কোনো গাড়ি নেওয়া উচিৎ। খরচ কমাতে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন। তাহলে ইচ্ছেমতো ভালোলাগা যে কোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন। তাছাড়া ঘুরতে গিয়ে সরিষা ক্ষেতের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখবেন। মনে রাখবেন, সরিষা ক্ষেতে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা বিকেল।

সবচেয়ে প্রভাবশালী পাসপোর্ট জাপানের, ৯৭ নম্বরে বাংলাদেশ
ঘুরে আসুন ফেনীর ‌'শর্শদি'

আপনার মতামত লিখুন