শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাঁও গেরাম

একটি ফোন কলেই ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন সুবর্ণচরের ইউএনও

আরিফুর রহমান, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:
১৮ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রভাবে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। লকডাউনে তিন দিন ধরে না খেয়ে আছে অথচ কেউ ত্রাণ দেয়নি এমন অভিযোগ থেকে সুবর্ণচরবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন । মোবাইল ফোনকল পেলেই দুর্গম গ্রামাঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান ওই কর্মকর্তা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে অসহায়, হতদরিদ্র, কর্মহীন পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইউএনও এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন তার নির্ধারিত গাড়িতে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। দিনের বেলায় যতক্ষণ অফিসে থাকেন, ওই সময় কখনও করোনাসংক্রান্ত সচেতনতামূলক মিটিং, কখনও অফিসে আগত অসহায় মানুষকে ত্রাণ বিতরণ, আবার কখনও কখনও রাস্তায় টহলে ব্যস্ত সময় পার করছেন ইউএনও।

ইবনুল হাসান ইভেন ' ইউএনও সুবর্ণচর' এর ফেইজবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে সুবর্ণচরবাসীকে বলেন, বর্তমান করোনাভাইরাস প্রতিরোধ পরিস্থিতিতে আপনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, আপনার বাসায় খাবার সংকট থাকলে এবং সবার সামনে আপনি খাদ্য সহায়তা নিতে বিব্রতবোধ করলে অনুগ্রহ করে ০১৭০৫৪০১১০৮ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। উপকারভোগীদের বাড়িতে কিংবা হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মনিটরিং করছেন ইউএনও, এসিল্যান্ড, পিআইও, শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রোগ্রাম অফিসার এবং উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। সোলেমান বাজার থেকে চেউয়াখালী বাজার পর্যন্ত সর্বত্র কর্মকর্তাগণ ছুটে চলেছেন, এই চলা অব্যাহত থাকবে। সাথে আছেন সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবীকরা। ত্রাণ বিতরণে যাতে বেশি লোক সমাগম না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। সরকার, সংসদ সদস্য এবং অন্যদের কাছে অনুপ্রাণিত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন। আপনারাও সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে আসুন। আমরা একসাথে ত্রাণ বিতরণ করব বলে ইউএনও বলেন।

প্রকৃত উপকারভোগীদের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রশাসন বদ্ধ-পরিকর। আপনি শুধু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। পরিচয় গোপন রেখে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা আপনার বাসায় পৌঁছে দেব।’

তিনি আরো বলেন,আপনারা জানেন আমাদের চাহিদা অনেক বেশি। হয়ত সকলকে এই সহায়তা প্রদান সম্ভব হবে না। সেইক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার বাড়ির পাশের দরিদ্র মানুষটির খোঁজ নেন তাহলে আমাদের কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে। এই জাতীয় এবং বৈশ্বিক ক্রান্তিলগ্নে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন।

গত দুদিনে উপজেলার চরজুবিলী, চরজব্বার, চরবাটা, চরওয়াপদা, পূর্ব চরবাটা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অসহায়, কর্মহীন পরিবারের মাঝে নিজে ত্রাণ পৌঁছে দেন ইউএনও। এভাবে গত চার দিনে ৪শত পরিবারের মাঝে তিনি নিজেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে অসহায় পরিবারে মাঝে হাসি ফুটিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় উপজেলার ৫ হাজারের অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন ।

সুবর্ণচরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, অনেোক ভয়ে ভয়ে ইউএনও স্যারকে ফোন করি। ফোন করার কিছুক্ষণের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন ইউএনও এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন । একজন নবীন সরকারি কর্মকর্তার এমন মানবিকতা দেখে আমরা মুগ্ধ,আমরা উনার মানবিকতা দেখে উনার জন্য দোয়া করছি।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক নারী বলেন, লোকজনের কাছে শুনে ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি দ্রুত আমাদের মধ্যে খাবার নিয়ে ছুটে আসেন। ত্রাণ পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইউএনও এএসএম ইবনুল হাসান ইভেনের জন্য বিশেষ দোয়া করেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
করোনা রোগীর জীবন বাঁচাতে ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর হস্তান্তর

আপনার মতামত লিখুন