দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে পর্যটনের হাতছানি

বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ সৈকত আর নদীর ঘেরা ঘনসবুজ অরণ্য বেষ্টিত দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে পর্যটনের হাতছানি দিচ্ছে। সাগরের বিস্তীর্ণ সৈকতজুড়ে আকাশে ভেসে বেড়ায় মেঘের ভেলা, সাগরের গর্জনের সাথে আছড়ে পড়া ঢেউ, আছে সারিসারি ঝাউবন, রাতে জোসনার লুকোচুরি, জেলেদের মৃদুমন্দ কোলাহলমুখর পরিবেশ প্রকৃতির নিপুঁণ হাতে গড়া বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ বালুচর নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার কয়েক কিলোমিটারের সৈকতজুড়ে রয়েছে এমন মন ভোলানো পর্যটনের হাতছানি। গত দুই বছর ধরে করোনা মহামারীর কারণে যেখানে চট্টগ্রামের পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে কড়াকড়ি বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটক শূন্যছিল সে সময়েও দেখা গেছে বাঁশখালী ও আনোয়ারার সাগর তীরে মানুষের কোলাহল। আর এখন করোনা সংক্রমণজনিত কারণে তেমন কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় বাড়ছে চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড়। একই কারণে ভ্রমণপিপাসুদের যেন মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাগরের সৈকত। সরজমিনে দেখা গেছে অঘোষিতভাবেই বঙ্গোপসাগর পাহাড় বেষ্টিত বাঁশখালীর খানাখানাবাদ থেকে বাহারছড়ার কয়েক কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ঘিরে প্রতিদিনের ভ্রমণপিপাসুদের মিলন মেলা জমে ওঠে।
সমুদ্র সৈকত ঘিরে এমন উপচে পড়া ভিড় যেন দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজারকেও হার মানিয়েছে। সে কারণে এলাকাবাসী মনে করেন সামান্য পৃষ্টপোষকতা পেলে বাঁশখালী ও আনোয়ারার কয়েক কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত জুড়ে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ সৈকত আর নদীর ঘেরা ঘনসবুজ অরণ্য বেষ্টিত দক্ষিণ চট্টগ্রাম পর্যটনের হাতছানির মূল কারণ হচ্ছে উপকূলজুড়ে ভাঙন ঠেকাতে গড়ে তোলা হচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ। আর এই বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা সৈকত ঘিরে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা।
ইতোমধ্যে সাগর নদী সবুজ ঘন পাহার বেষ্টিত বন্দর নগরীর চট্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তে বঙ্গপোসাগরের আনোয়ারায় প্রান্তে কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে পার্কি সমুদ্র সৈকত। একই উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় রয়েছে এশিয়ার অন্যতম দুটো বৃহৎ ইউরিয়ার সার কারখানা ও দেশের সর্ববৃহৎ কোরিয়ান ইপিজেড। তেমনিভাবে বাঁশখালীতে গড়ে উঠেছে আরেকটি মায়াবী ইকোপার্ক, সাগর কূলে গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে। অপর দিকে আনোয়ারায় গড়ে তোলা হচ্ছে বৃহৎ পরিসরে চায়না ইকোনোমিক জোন, কাজ চলছে চট্টগ্রাম দোহাজারী কক্সবাজার রেল প্রকল্পের, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণের কাজ। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের আনাগোনাও। এ দিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নদী ও সাগর উপকূলের বেড়িবাঁধের কাজও অনেকটাই এগিয়ে গেছে। সাগর কূলে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে এলাকার মানুষের মাঝে জেগে উঠেছে বেঁচে থাকার নতুন প্রত্যয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীতে ৩৬.৬৫ কিলোমিটার ও আনোয়ারায় ১৫ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। সেই সাথে বন বিভাগের সাথে উপকূলে বনায়নের কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।
বাঁশখালীর খানখানাবাদ, প্রেমাশিয়া কদম রসুল হয়ে বিস্তীর্ণ বাহারছড়ায় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একদিকে বেড়িবাঁধ অপর দিয়ে সারি সারি ঝাউবন যেন মন জুড়িয়ে যায়। স্থানীয়রা দল বেঁধে ছুটে আসছে সৈকতে কেউ মোটরসাইকেলে কেউ আবার নিজস্ব কারে ছুটে আসছে ভ্রমণের পাশাপাশি অগণিত দলে বিভক্ত হয়ে চলছে ফুটবল খেলা আর এমনিভাবেই গড়ে উঠেছে অঘোষিত পর্যটনস্পট হিসেবে। সে কারণে এলাকাবাসী মনে করেন সরকারের ২০১০-এর পর্যটন নীতিমালা অনুসারে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ সৈকত ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে।
আপনার মতামত লিখুন