শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

পদ্মার দু'পাড়ে নতুন সাজে পর্যটন কেন্দ্র

ডেস্ক রিপোর্ট
২৪ জুলাই ২০২২

পদ্মা সেতু এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া, মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপাড়ে বাড়ছে পর্যটক; গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। মাওয়া প্রান্তের লৌহজংয়ের বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরেও গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র।

শিবচর ও জাজিরা প্রান্তেও পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। প্রমত্তা পদ্মার সৌন্দর্য আর অনুপম পদ্মা সেতু হয়ে উঠেছে পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ। সেতু চালুর পর এই এলাকার জমির দামও বেড়েছে। আগে যেসব জমি কেউ কিনতে চাইত না, এখন সেই জমি পেতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্যেও এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্পটে পরিণত হয়েছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় শহরের আবহ তৈরি হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর থেকেই মুন্সীগঞ্জের তিনটি উপজেলার প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। মানুষের জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।

পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সেতু চালু হওয়ার পর দুই প্রান্তে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। লৌহজংয়ে জেগে ওঠা পদ্মার চরে গড়ে উঠেছে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র। সেতু চালুর পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই আসছে অসংখ্য মানুষ। ফলে আগের পেশা বদল করে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের অনেকেই এখন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করছেন।

শরীয়তপুরের নওডোবা মোড়ে ফুড এক্সপ্রেস নামে রেস্তোরাঁর তরুণ উদ্যোক্তা তারিক আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে খাবার ও বিনোদন কেন্দ্রের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর তিনি রেস্তোরাঁ চালুর পর প্রথমে কিছুদিন লোকসান হলেও গত মাসে সেতু উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। তাঁর বিক্রিও বেড়েছে। সেতুসংলগ্ন সড়কে এখন রেস্তোরাঁ ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গার মোড়ে গোলচত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটি স্পট। একই অবস্থা মাদারীপুরের শিবচরেও।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার এই এলাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হয়। মাওয়া প্রান্ত থেকে শুধু সেতু দেখতেই প্রতিদিন ৩০টির বেশি স্পিডবোট ছেড়ে যায়। প্রতিটি স্পিডবোট অন্যান্য দিন দুই-একটি ট্রিপ পেলেও সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ১০-১২টির বেশি ট্রিপ হয়।

স্পিডবোটচালক শামসুদ্দিন বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুরের পর থেকে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। তবে সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে কাছে ঘেঁষতে পারছেন না তাঁরা। কয়েকজন হকার ও খাবার বিক্রেতা জানান, পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে। এ কারণে ছুটির দিনে তাঁদের বেচাকেনা দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে। মাওয়ার হোটেল ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে কয়েক মাস ধরে জনসমাগম বেশি। সেতুকে কেন্দ্র করে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট এখন পর্যটনের কেন্দ্রস্থল।

লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রাশিদুল হক মুন্না বলেন, পদ্মা সেতু দেখতে মাওয়া প্রান্তের পদ্মাপাড়, শিমুলিয়া ফেরিঘাটসহ আশপাশের এলাকা পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। ফলে ফেরিঘাট এলাকায় নতুন নতুন হোটেল-রেস্তোরাঁ তৈরি হচ্ছে। পদ্মার তীরে বসে রুপালি ইলিশ ভাজা খেতে খেতে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখার মুহূর্ত অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে। পদ্মা সেতুকে ফ্রেমের পেছনে রেখে মোবাইল ফোনে সেলফিসহ নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন দর্শনার্থীরা।

হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের ভাষ্য, পদ্মা সেতুকে ঘিরে গড়ে ওঠা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসছেন। তাঁরাই এখন মাওয়ার শিমুলিয়া ফেরিঘাটের হোটেল-রেস্তোরাঁর মূল গ্রাহক। তাই ঘাটকেন্দ্রিক খাবারের ব্যবসা বেশি জমেছে।-সমকাল

পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করাতে ভ্রমণ প্যাকেজ ঘোষণা
বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করলো যুক্তরাষ্ট্র

আপনার মতামত লিখুন