পোল্ট্রি খাত টেকসই করতে ঢাকায় আন্তর্জাতিক সেমিনার
পোলট্রি খামারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলায় অংশ নেবে বিশ্বের ১৭টি দেশ

শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবী জুড়েই প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস পোলট্রি। বাংলাদেশে বছরে ১৫-২০ শতাংশ হারে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটছে। তবে পোলট্রি শিল্পের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপদ ও টেকসই উৎপাদন। এ জন্য প্রতিটি খামারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েই উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রতিটি খামারেই বর্জ্য নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি সেমিনার বক্তারা এ কথা বলেন। দুদিন ব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এতে পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৮৮টি দেশি-বিদেশি টেকনিক্যাল পেপার উপস্থাপন হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বিবির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। তাই অভিধান থেকে অপুষ্টি শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলোই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের ধারণা পোলট্রিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, ফাইটোজেনিক, এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, পোল্ট্রি বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষকরা পোলট্রি বিজ্ঞানকে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন সমাধান উপহার দিচ্ছেন। গত ২৮ বছর ধরে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা ব্যবসা ও বিজ্ঞানের মাঝে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি করেছে। জরাজীর্ণতাকে কাটিয়ে নতুন এক সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার ডাক এসেছে আমাদের সবার জন্য। সাধারণ খামারীদের কথা ভাবতে হবে, কারণ তাঁদের সংখ্যাই বেশি। খামার থেকে শুরু করে খাবারের প্লেট পর্যন্ত পুরো চেইনকেই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে।
সেমিনারের গবেষক ও বক্তারা বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা না থাকলে কাউকেই পোলট্রি খামারের নিবন্ধন দেওয়া ঠিক হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় মাথায় রেখে বিজ্ঞানীদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মুরগির জাত উদ্ভাবন করতে হবে। রিসাইক্লিংয়ের কথাও গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। সরকার পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে- এই বিষয়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
প্রথম দিনের সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির অধ্যাপক ড. এসডি চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী,
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. গিয়াসউদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য পরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, বাকৃবির অধ্যাপক ড. কে.এম. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-এলাহী, প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা, বাকৃবির প্রফেসর ড. সুকুমার সাহা, প্রফেসর ড. মো. গোলজার হোসেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. বয়জার রহমান, অধিদপ্তরের পরিচালক উৎপাদন ড. এ.বি.এম খালেদুজ্জামান, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার প্রমুখ।
সেমিনার শেষে বৃহস্পতিবার থেকে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো। বিশ্বের ১৭টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও পণ্যের পসরা নিয়ে এতে হাজির হবেন।
আপনার মতামত লিখুন