শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

৩ হাজার ট্যুরিস্ট গাইড বেকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ জুলাই ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে স্নাতক আবিদ আলম ট্যুরিস্ট গাইডকেই পেশা হিসেবে নেন। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ২০১৯ সালে এ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ে প্রায় তিন মাস তাদের কাজ বন্ধ থাকে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মাসে দু-একজনের বেশি পর্যটক পেতেন না।

এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। আবিদ আলমের দুই মাসের বাসাভাড়া বাকি পড়ে। অসুস্থ বাবা-মা এবং ছোট ভাই-বোনদের খাবার জোটাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে আবিদ আলম সম্প্রতি সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি চলে যান।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আবিদ আলম বলেন, ‘ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে হবে কখনো ভাবিনি। করোনা আমার জীবন ওলট-পালট করে দিয়েছে। মাসে ১৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া, অসুস্থ বাবা-মা। আমি আর পারছিলাম না। এজন্য সব বিক্রি করে গ্রামে এসেছি। পরিস্থিতি কখনো অনুকূলে এলে আবার ঢাকা ফিরব।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে ট্যুরিস্ট গাইড পেশার বেশিরভাগেরই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। অনেকে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। জেলা পর্যায়ের ট্যুরিস্ট গাইডরা সংসার চালাতে গিয়ে ধারদেনায় জর্জরিত।

রাঙ্গামাটির স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড সাগর ওয়াহিদ পাঁচ বছর এ পেশায় আছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ওয়াহিদ জানান, গত বছর করোনা শনাক্তের পর থেকেই কাজ বন্ধ। চলতি বছর কিছুদিন স্বাভাবিক থাকলেও মার্চে পার্বত্য জেলাগুলোর সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। একটা সময় মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হলেও এখন কোনো কাজ নেই। পরিচিত অনেকে পেশা বদলে দিনমজুরের কাজ করছে। যারা পেশা বদলাতে পারেনি, তারা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা না পেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে প্রায় দুই শতাধিক নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড রয়েছেন। অনিবন্ধিতদের এ সংখ্যা তিন হাজারের মতো। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্যমতে, করোনায় বাংলাদেশে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ৪ লাখের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে ১৮ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। গত বছর তা কমে ১৪ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা শতাংশে ২১ দশমিক ৯।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিস্ট সোসাইটির সভাপতি তানাইম ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন ট্যুরিস্ট গাইডের চাকরির অর্থে পড়াশোনা ও পরিবারের দেখভাল করেন। অনেকে পেশা হিসেবে নেন। তাদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবার। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কোনো কাজ নেই। খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। এ সংকটে সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তামিম আহমেদ বলেন, ‘নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় ৩ হাজার ট্যুরিস্ট গাইড দেড় বছর ধরে বেকার। এসব মানুষের সহায়তার জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করলেও কোনো লাভ হয়নি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে ট্যুরিস্ট গাইডদের কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরা হবে।’

সম্মিলিত পর্যটন জোটের কো-অর্ডিনেটর শহিদুল ইসলাম সাগর বলেন, ‘মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েরাই ট্যুর গাইড হন, অন্যের কাছে নিজের দেশকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেন। কিন্তু তারা পারিশ্রমিক পান দৈনিক মজুরিতে। করোনাকালে এসব ট্যুর গাইডের সুরক্ষায় ট্যুরিজম বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য তারা অমানবিক কষ্টে দিন পার করছেন। আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয় তাদের পাশে দাঁড়াবে। অন্যথায় এসব ছেলেমেয়ে পেশা পরিবর্তন করলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দক্ষ ট্যুর গাইডের সংকট দেখা দেবে।’

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (বিপণন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ) যুগ্ম সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘ট্যুরিজমের সঙ্গে জড়িতদের জন্য আমরা এসএমই লোনের ব্যবস্থা করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যুর গাইডদের সরকারি সহায়তার বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা তালিকা চেয়েছে। তালিকা দেওয়া হবে। এরপর সে অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

ওয়ালটন পণ্যে ১৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন এবি ব্যাংকের গ্রাহকরা
ওয়ালটন পণ্যই আমাদের নির্ভরতা: সাইমন সাদিক

আপনার মতামত লিখুন