শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বরিশালে পর্যটন মোটেল প্রকল্প

দুই বছর ধরে অনিশ্চতার দোলাচলে ঝুলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ জানুয়ারি ২০২২

স্বাধিনতার সূবর্ণজয়ন্তির সাথে পর্যটন করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর অতিক্রম করলেও দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি বিভাগীয় সদরে জাতীয় ভ্রমণ সংস্থাটির হোটল-মোটেলসহ কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অথচ দেশের অনেক গুরুত্বহীন স্থানেও শুধু রাজনৈতিক তদবিরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের এমন সব স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা নুন্যতম পরিচালন মুনফাও করতে পারছেনা; কিন্তু সাগর সৈকত কুয়াকাটায় পর্যটনের বিশাল সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বরিশালে একটি মোটেল নির্মানের পরিকল্পনা ঝুলে আছে গত বছর পাঁচেক যাবত।

অথচ এলক্ষে বরিশালে কির্তনখোলা নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কসপের পরিত্যক্ত প্রায় এক একর জমি ৩০ বছরের জন্য পর্যটন করপোরেশনকে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এজন্য গত ৫ বছরে পর্যটন করপোরেশন ইজারা মূল্য বাবদ বিআইডব্লিউটিএ’কে ১০ লক্ষাধীক টাকা পরিষোধ করলেও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে মূল প্রকল্পটি এখন চরম অনিশ্চয়তায়। অথচ ডিপিপি অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তার বাস্তবায়নের কোন লক্ষন নেই এখনো।

১৫৩ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ‘বরিশাল পর্যটন মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্প’ নামের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের পরে বছর দুয়েক আগে পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হলে সেখান থেকে তা অনুমোদনের আগে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সম্মতি গ্রহনের কথা বলা হয়।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় আশ্চর্যজনকভাবে এ প্রকল্পটির জন্য সরকারী অর্থ বরাদ্বের পরিবর্তে ৬৬.৬৬ ভাগ অর্থ সরকারী অনুদান এবং অবশিষ্ট ৩৩.৩৪% শতকরা পাঁচ ভাগ সুদে ১৫ বছরে পরিষোধ করার শর্তে ঋন গ্রহনের কথা বলেছে। এরপর থেকেই বিষয়টি অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইতোপূর্বে সংস্থাটির কোন প্রকল্পে এধরনের শর্ত যুড়ে দেয়নি সরকার।

বিষয়টি নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের জিএম ও পরিচালক পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে এর বাইরে কোন কথা বলতে রাজি হননি কেউ। গত মাসেই পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অবসরে চলে গেছেন। একজন অতিরিক্ত সচিব পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও তিনি নিয়মিত কাজের বাইরে কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করছেন না। ফলে বরিশালে পর্যটন মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টারটির ভবিষ্যত কবে আলোর মুখ দেখবে তা বলতে পারছেন না কেউ।

বরিশালে প্রস্তাবিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকার কথা। একাধীক লিফট সম্বলিত এ ভবনে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ নির্মানের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেষ্ট্রুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধারও প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবনায়। মোটেলটির পাশের কির্তনখোলা নদীতে ভবিষ্যতে রিভার ক্রুজ-এর ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নেরও ছিল। ফলে এখন থেকে পর্যটকগন মোটেলটির পার্শ্ববর্তি কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-বিহারও করতে পারতেন।

বরিশালের এ পর্যটন মোটেল সংযূক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম-এর ওপর প্রশিক্ষন গ্রহনের প্রস্তাব ছিল। সাড়ে ৩ মাসের এ প্রশিক্ষন শেষে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেট প্রদানের কথা। ঢাকার বাইরে বরিশালে একাটি ‘হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপিত হলে বিদেশে বিপুল চাহিদার এ ধরনের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলাও সম্ভব হত। উপকৃত হতে পারত এ অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুন সমাজ। এসব তরুনদের বেশীরভাগই ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষন গ্রহনের সামর্থ নেই। পাশাপাশি ঢাকায় দেশের একটিমাত্র ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়াও বেশীরভাগ বেকার যুবকের পক্ষে ভাগ্যের ব্যাপার।

খুলনাতে পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব প্রায় ৬ একর জমি থাকলেও সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরেও সেখানে কোন হোটল বা মোটেল নির্মিত হয়নি। এমনকি বরিশাল ও খুলনাই একমাত্র বিভাগীয় সদর যেখানে এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যটন প্রতিষ্ঠানের কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অথচ এ দুটিচ বিভাগীয় সদরে এ ধরনের আবাসন সুবিধা গড়ে উঠলে শুধু মহানগরী নয় সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন সুবিধাই সম্প্রসারনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমনকি এসব পর্যটন মোটেল কুয়াকাটা ও সুন্দরবন সহ এ অঞ্চলে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের জন্য ‘নিরাপদ ও পার্যটন বান্ধব ট্রানজিট স্পট’ হিসেবেও কাজ করত বলে মনে করছেন ট্যুর অপারেটরগনও।

বিদেশভ্রমণে বছরে ব্যয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা
করোনার মাঝেও পর্যটনে বিশ্ব রেকর্ড

আপনার মতামত লিখুন