শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

পর্যটন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিক: একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেছেন, পর্যটন খাতের পাশাপাশি এয়ারলাইন্স, হোটেল, মোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলোকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্যাকেজিং ও পণ্য থেকে দূরে সরে আসতে হবে এবং এর বিকল্প ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

 একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলোর ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা এবং এই বিষয়ে উপকারভোগীদের পরামর্শ নিতে আজ বুধবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো একটি ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ।

এই মহামারি চলাকালীন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের কাছে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের কারণে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এই পণ্যগুলোর মধ্যে স্যানিটাইজেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং এর মধ্যে ভাইরাস বেঁচে থাকে। এই পণ্যের উৎপাদন, পরিবহন বা পরিচালনার সময় পণ্যটি ভাইরাস দ্বারা দূষিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে, এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এছাড়াও, এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

অতিরিক্ত প্লাষ্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যটন ব্যবসা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি গবেষণা অনুসারে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র সৈকতে ৭৩ শতাংশ প্লাস্টিক পাওয়া গেছে এবং ৮৫ শতাংশ ভাসমান আবর্জনা এবং ৪৫ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য ভূমধ্যসাগরের তলায় পাওয়া গেছে।

এসব পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্ট্র, বোতল ও কটন বাড। পর্যটকরা বর্জ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ দূষণ উভয়ের জন্য দায়ী।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেয়া খান বলেন, পর্যটক কেন্দ্র এবং অন্যান্য স্থানগুলো প্রতিনিয়ত পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল এবং প্যাকেটসহ বিভিন্ন আবর্জনা দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এসব বর্জ্য পর্যটকরাই যেখানে সেখানে ফেলে যাচ্ছে, যা আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্রকে নষ্ট করছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলো ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আমাদের নিজেদের অভ্যাসগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে।

বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ বলেন, কক্সবাজার ও কুয়াকাটা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং এই স্থানগুলো ঘন ঘন প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত হচ্ছে। আমরা যদি কক্সবাজারকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মুক্ত করতে পারি তবে এটা শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন হবে।


বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এবং বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মতে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিক পণ্যগুলো আমাদের জন্য সুবিধার সৃষ্টি করলেও পরে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর উৎপাদন, বিতরণ ও ফেলে দেয়ার সময় এটি পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরণের হুমকির সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক বর্জ্য খোলা জায়গায় পোড়ানো, প্লাস্টিক দূষিত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ও বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ তার বলেন, পর্যটন খাতের পাশাপাশি এয়ারলাইন সেক্টরগুলোকেও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিবর্তে এর বিকল্প পণ্যগুলো বেছে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এজেন্সিগুলো প্লাস্টিকের বিকল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এই অনুযায়ী কাজ করতে পারি।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়নকারী প্রথম দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে পলিথিন দূষণ নিয়ন্ত্রণে ও আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু দেশের বিচার বিভাগ সম্প্রতি উপকূলীয় এলাকার হোটেল, মোটেল এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি এর সাথে জড়িত স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের উপর যথাযথ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে সেসব পণ্যগুলোর উপর, যেগুলো বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ আইনের কঠোরভাবে প্রয়োগের প্রয়োজন।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর চেয়ারম্যান শহীদ হামিদ বিষয়টি নিয়ে ধারণা প্রকাশ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্রর ক্ষতি এবং দূষণের সংকট মোকাবিলায় গন্তব্য (জাতীয় ও স্থানীয় সরকার), ব্যবসা (আবাসন প্রদানকারী, ট্যুর অপারেটর, সরবরাহকারী, এয়ারলাইনস, ইত্যাদি) এবং সহায়তাকারী সংস্থা (ব্যবসায়িক সমিতি, একাডেমিয়া, আইনজীবী ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনুষ্ঠানে  এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা, বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন- বিওটিওএ এর সহ-সভাপতি এবং এসডোর টেকনিক্যাল উপদেষ্টা সৈয়দ গোলাম কাদির, ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বুলু, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টওএসি এর সভাপতি এম রেজাউল করিম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মরিশাসের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চায় বাংলাদেশ
নিঝুম দ্বীপ ঘিরে নোয়াখালীর পর্যটন শিল্পের যে সম্ভাবনা

আপনার মতামত লিখুন