শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দেখা থেকে লেখা

মনপুরা ও নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত

 সিদরাতুল সাফায়াত ড্যানিয়েল
১৮ জানুয়ারি ২০১৯

এখানে বসলে মনে হবে, আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন। কারণ, তখন আপনার চারদিকে থাকবে পানি, আপনি বসে থাকবেন সামান্য উপরে। নদীর পানির স্রোত আর ঢেউয়ে মাঝে মাঝে স্টেশনটি কেঁপে উঠে, তখন মনে হবে এই বুঝি নদীতে ভেসে গেলাম। এটা এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। দ্বীপে রয়েছে একটি হরিণের অভায়াশ্রম। জোয়ারের সময় হরিণগুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হরিণের পাল যখন রাস্তা পার হয় তখন তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে হয়। আপনার ভাগ্যে থাকলে আপনিও দেখা পেয়ে যেতে পারেন হরিণের পালের।

বলছিলাম ভোলা জেলার মন ভোলানো ‘মনপুরা দ্বীপ’-এর কথা। মনপুরা দ্বীপের পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর দিকে মেঘনা নদী প্রবাহমান আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। মনপুরা দ্বীপ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে। দ্বীপে আরো আছে, চৌধুরী প্রজেক্ট। প্রজেক্টটি হচ্ছে একটি মাছের ঘের। এখানে আপনি দেখতে পাবেন বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত মাছ চাষের পুকুর ও লেক। লেকের পাড় জুড়ে সারি সারি লাইনে হাজারো নারিকেল গাছ।

মনপুরা যেতে হলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে আসতে হবে সদরঘাট। ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়- ফারহান ৩/৪ (সন্ধ্যা ৫টা ৩০মিনিট) ও তাসরিফ ১/২ (সন্ধ্যা ৬টা)। সিঙ্গেল কেবিন ৯০০, ডাবল কেবিন ১৮০০ এবং ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার যাত্রায় সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার ও পানি নিতে ভুলবেন না। রাতের খাবার কিন্তু লঞ্চেই করতে হবে। লঞ্চে উঠার পর পরই একজন এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে যাবে। সবাই মিলে আড্ডা, কার্ড খেলা আর লঞ্চের পাল্লা দিয়ে চলা দেখতে দেখতে রাতটা কাটিয়ে দিন। বন্ধু মহলে কেউ গিটার নিয়ে গেলে তো কথাই নেই!

পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন হাতিয়ার তমরুদ্দিন ঘাটে। ঘাটে নাস্তা সেরে মোটরসাইকেলে চলে যাবেন মুক্তারিয়া ঘাটে। ৩৭ কিলোমিটারের এই পথ যেতে ঘন্টা দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। মুক্তারিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে অথবা নৌকায় যেতে হবে নিঝুমদ্বীপ। ঘাটে নেমে আপনাকে যেতে হবে নামার বাজার। এই পথে মোটর সাইকেলই আপনার একমাত্র ভরসা।

হোটেল রুমে ব্যাগ-প্যাক রেখে নাশতা সেরে ট্রলার নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। ট্রলারে চৌধুরী খাল, কবিরাজের চর প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের জন্য ৮০০-১০০০ টাকা নিবে। চরে গোসল করতে চাইলে সাথে জামাকাপড় নিতে পারেন। ১ টার মধ্যে চলে আসুন নামার বাজার। হোটেলে গোসল সেরে বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন বাইক যোগে চোয়াখালির দিকে। আনুসঙ্গিক দ্বীপের সব স্থান ঘুরে ৫ টার মধ্যেই নামার বাজার এসে সোজা বীচে চলে যান। আর কোলাহল মুক্ত এই নিরব- নিস্তব্ধতার মাঝে উপভোগ করুন- ‘সূর্যাস্ত’।

সন্ধ্যায় বাজারের গরম গরম শীতের পিঠা আর খেজুর গুড়ের জিলাপির পরিবেশন আপনার জিভে জল এনে দিবে। রাতে হোটেলে/বীচে বার্বিকিউ করতে চাইলে কিন্তু আপনাকে তখনই বাজার করতে হবে। ভাগ্য ভালো থাকলে সামুদ্রিক কোরাল মাছ পেতে পারেন। প্রতি কেজির দাম নিবে ৪৫০টাকা।

পরের দিন ভোরে উঠে বীচে সূর্যোদয় দেখতে চলে যান। নিঝুম দ্বীপের বিচে আপনি অনেক লাল কাকড়া দেখতে পাবেন। তারপর ট্রলারে চলে যান মনপুরা। নামার বাজার থেকে এই মনপুরা যাওয়ার ২ ঘণ্টার ট্রলার ভ্রমণ হতে পারে সারাজীবন মনে থাকার মতো। সমুদ্র ঘেষে মোহনার উপর দিয়ে ছোট-বড় ঢেউ কাটিয়ে টলারের এই ভ্রমণ আপনাকে ‘সেন্টমার্টিন’-এর আনন্দ দিবে খানিকটা।

মনপুরা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া লঞ্চ বেলা ২ টায় ঘাটে ভিড়বে। এর মধ্যে ইচ্ছেমতো দ্বীপটি ঘুরে নিন। সময়মতো লঞ্চ আসলে উঠে পড়ুন। পরেরদিন ভোরেই সদরঘাট পৌঁছে যাবেন।

বনের মধ্যে নিঃশব্দে প্রতিটি পা ফেলার অ্যাডভেঞ্চার, এক মুহূর্তের জন্য হলেও আপনাকে শহরের ব্যস্ত জীবনকে ভুলিয়ে দিবে। শ্বাসমূল উপেক্ষা করে হাঁটার মাঝে আপনি পাখির কলরব ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবেন না।

কম বাজেটে ঘুরে আসুন পান্থুমাই ঝরনা
বিশ্বের সেরা 'ট্রাভেল ফটো'র তালিকায় বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন