শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
দেখা থেকে লেখা

মৃত্যু উপত্যকায় দুটি দিন

মোহাম্মদ ইশতিয়াক রহমান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
১৩ জানুয়ারি ২০২২
ছবি: লেখক

ছবি: লেখক

পাগলাটে এক শহর থেকে যাত্রা শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের এক বছর ছুঁইছুঁই, বেড়াতে বেরিয়েছি খানিকটা পড়াশোনার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে, আর খানিকটা সহধর্মিনীর চাপাচাপিতে।

যে পাগলাটে শহরের কথা বলছিলাম তার নাম লাস ভেগাস। নানা সিনেমা-বই পত্রে কতোই না দেখছি পড়েছি এ শহরের কথা। সারা দুনিয়ার বিনোদন রাজধানী, পাপের শহর (সিন সিটি) লাস ভেগাস। জুয়ার এ শহরে বিনোদন কেনার ইচ্ছা বা সামর্থ্য কোনটাই এ ভ্রমণকারী দম্পতির নেই। দুইদিন মনভরে লাস ভেগাসের চোখ ধাঁধানো আলো আর জুয়ার নেশায় মশগুল মানুষ দেখলাম, সে গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা থাক। সময় হলো মূল গন্তব্যে যাত্রা করার। জায়গার নামটা ভয়াল আর জাঁদরেল - ডেথ ভ্যালি।

যুক্তরাষ্ট্রে রেন্ট-এ-কার পরিসেবা বিশ্বমানের। গাড়ি নিজেকেই চালাতে হবে, কোনো ড্রাইভার সেবা নেই। যে কোন এয়ারপোর্টের সঙ্গে সমস্ত রেন্ট-এ-কার কোম্পানিগুলোর যৌথ একটা সেন্টারের মতো থাকে। রেন্ট-এ-কার আগে থেকে বুক করা ছিল। মিনিট পাঁচেকের ভেতর সব কাগজপত্র দেখিয়ে পেয়ে গেলাম গাড়ি। বুক করা ছিল ছোট সেডান গাড়ি, রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা সহাস্যে জানালেন, মাত্র দশ ডলার বেশি দিলেই পেতে পারি এসইউভি। নিয়ে ফেললাম এসইউভি দুইদিনের জন্য। আগেই জেনেছিলাম যে ডেথ ভ্যালিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না, তাই অফলাইন গুগল ম্যাপ নামানো ছিল। খাবার দোকানও ডেথ ভ্যালিতে অপ্রতুল, তাই পর্যাপ্ত পানি-খাবার কিনে যাত্রা করলাম।

রোমাঞ্চকর এ যাত্রা। পার্থিব এ সৌন্দর্য রূঢ় এক ভূপ্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, মনে এক ভীতির সঞ্চার করে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার এ অপরূপ-মনোমুগ্ধকর-বিচিত্র সৃষ্টি মানুষের মনকে আদ্র করে, আর বেশি ঈশ্বর বিশ্বাসী করে। লাস ভেগাস শহরটা মাহাভে মরুভূমির ভেতর, আর ডেথ ভ্যালিও তাই। শহর পেছনে রেখে যখন প্রথম ডেথ ভ্যালির লাল লাল পাহাড়ের দিকে চোখ পড়লো তখন চোখ ফেরানো দায়। আপন মনে গেয়ে উঠলাম, ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার পরে।’ মখমলের মতো রাস্তা দিয়ে যখন গাড়ি তরতর করে ডেথ ভ্যালির ভেতরে এগিয়ে চলেছে ততক্ষণে মনে মনে মেনে নিয়েছি যে, এমন চমৎকার রাস্তা আর পাহাড়ের ভেতর কখনও গাড়ি চালাইনি নিজে।

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে আমি ও আমার স্ত্রীডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে আমি ও আমার স্ত্রীযুক্তরাষ্ট্রের মোট ৬৩ ন্যাশনাল পার্কের ভেতর ‘ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক’ একটা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অনন্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বিচিত্র বাস্তুসংস্থান আর বিনোদনের নানা ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল পার্কগুলো সংরক্ষিত জায়গার অন্তর্গত। আলাস্কা, হাওয়াই বাদ দিলে দেশটিতে যে ৪৮ স্টেট একসঙ্গে লাগানো তাদের ভেতর যতগুলো ন্যাশনাল পার্ক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। নেভাডা রাজ্যের অন্তর্গত এ পার্কটি সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। উত্তর মাহাভে মরুভূমির মাঝে আর গ্রেট বেসিন মরুভূমির সীমান্তে এ পার্ক। ৩৪ লাখ একরের এ ন্যাশনাল পার্কের সর্বোচ্চ চূড়া ১১ হাজার ফুট।

ডেথ ভ্যালির পাহাড়গুলোতে যেন নানা জাতের রঙের খেলা। মূলত লাল-গোলাপি-হলুদ আর সামান্য বেগুনি-সবুজ-নীল। বিভিন্ন সময়ে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এ এলাকায় নানা জাতের লোহা এবং ম্যাঙ্গানিজের লবণ জমা হয়। এসব লবণের রংই আসলে আমাদের চোখে ধরা পড়ে।

গাড়ি এগিয়ে চলেছে ডেথ ভ্যালির দিকে আর দোকানপাট ঘরবাড়ির ঘনত্ব কমে আসছে। দেখতে দেখতে ডেথ ভ্যালির লাল পাহাড়গুলোর ভেতর ঢুকে পড়লাম। সময়টা অক্টোবরের মাঝামাঝি শীত গরম কোনোটাই বেশি হওয়ার কথা না। নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে, উদ্দেশ্য ছবি তোলা। যে দিকে তাকাই সেদিকেই যেন নতুন কিছু দেখছি। যে অ্যাঙ্গেল যে ভঙ্গিমায় ছবি তুলি না কেন ক্যামেরার কি সাধ্য এ সৌন্দর্যকে বন্দি করার!

অনেক কসরত করার পর ফটোগ্রাফ-পিপাসু সহধর্মিনীও রণে ভঙ্গ দিলো, অসম্ভব এ ছবি তোলার চেষ্টা। জানি দুইদিনের এ ভ্রমণ পরিকল্পনা ডেথ ভ্যালির জন্য নিতান্ত অপ্রতুল, কিন্তু অনেকগুলো স্পট কভার করার বাকি, তাই গাড়ি ছুটলো ডেথ ভ্যালির পথে।

ডেথ ভ্যালি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শুকনো, গরম ও সর্বনিম্ন বিন্দু। এ ভয়ানক শুষ্ক আর গরম আবহাওয়ার জন্য মাটিও তৈরি হতে পারে না এখানে। এমন চরম পরিবেশ মূলত আদি মার্কিন সোসান জনগোষ্ঠীর নিবাস ছিল। ১৯৪৮ সালে মার্কিন মুলুকের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে স্বর্ণখনি আবিষ্কার হতে থাকে আর দলে দলে মানুষ ভিড় করতে থাকে সোনার খনির সন্ধানে। এসময়ের পোশাকি নাম ‘গোল্ডরাস’। সেইসময় একদল উৎসুক স্বর্ণসন্ধানী ক্যালিফর্নিয়ার স্বর্ণখনিগুলোতে পৌঁছানোর পথ হিসেবে এ মাহাভে মরুভূমির ভেতরের এমন শুকনো ও গরম পথ বেছে নেয়।

স্বভাবতই এ আবহাওয়া তাদের মারাত্মক পরীক্ষায় ফেলে। মাসের পর মাস অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে সেই দলের একজনের মৃত্যু হয়। অবশেষে তারা বেরিয়ে আসতে পারে এ চরম ভূখণ্ড থেকে। ধারণা করা হয় সেই দলের একজন এ উপত্যকার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘গুডবাই, ডেথ ভ্যালি’। সেখান থেকে এই নাম ‘ডেথ ভ্যালি’। এরপর মূলত সোনা আর রুপার খনির খোঁজে গোল্ডরাস পরবর্তী যুগে এ এলাকায় ১৮৭০ সালের দিকে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সোনা রুপার তেমন কিছু না মিললেও মূলত মেলে বোরাক্স। বোরাক্স সাধারণত ফাইবার গ্লাস এবং ডিটারজেন্ট তৈরিতে কাজে লাগে। বোরাক্স আহরণের নানা কোম্পানি গড়ে উঠে এ এলাকায়। তবে পর্যটন স্থান হিসেবে এটা জনপ্রিয় হতে থাকে ১৯২০ সালের দিকে। ন্যাশনাল মনুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি মেলে ১৯৩৩ সালে আর ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ১৯৯৪ সালে।

জ্যাবরিস্কি পয়েন্টে থামলাম আমরা । ডেথ ভ্যালির অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান এটি। বোরাক্স আহরণকারী কোম্পানির এক কর্তার নামে এ জায়গার নাম। রাস্তায় অল্পস্বল্প গাড়ি চোখে পড়লেও এখানে অনেক মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ল। দেখলাম যে শুধু আমরাই না, সবাই এ সৌন্দর্যে মোহিত আর আপ্লুত। জ্যাবরিস্কি পয়েন্ট আসলে ফারনেস ক্রিক লেকের একটা অংশ। তবে এ লেকে পানি ছিল ৯ মিলিয়ন বছর আগে আর সেই সময় এর নিচে নানা জাতের পলিমাটি জমা হতে থাকে। এরপর এ এলাকার আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে থাকে আর জলাভূমি শুকিয়ে যায় ৫ মিলিয়ন বছর আগে। ভাবতে অবাক লাগে ৫ মিলিয়ন বছর আগের শুকিয়ে যাওয়া পলিমাটি চোখের সামনে। ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে রওনা হলাম, পরের গন্তব্য ‘ব্যাড ওয়াটার বেসিন’।

ব্যাড ওয়াটার বেসিন পুরো আমেরিকার ভেতর অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮২ ফুট নিচে অনেকগুলো পাহাড়ের মাঝে একটা সমতল ভূমি যা আদতে একটা বেসিনের মতো জায়গা তৈরি করেছে। এটা উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিচু জায়গা। এখানে পৌঁছাতে প্রায় বেলা তিনটা বেজে গেছে। পার্কিং লটে পৌঁছে দেখলাম অনেক গাড়ি - একটা জমজমাট অবস্থা। গাড়ি থেকে নেমে চোখে পড়লো সতর্কবাণী, গরমকালে সকাল দশটার পর এখানে প্রবেশ নিষেধ। সময়টা শীতকাল, তাই সমস্যা হওয়ার কথা না। প্রায় মাইল পাঁচেক জায়গাজুড়ে এ জায়গা। এতো হাঁটা সম্ভব না, তবে কিছুদূর তো যাওয়া যেতেই পারে। দূরের পাহাড়ে চোখে পড়লো সমুদ্রপৃষ্ঠ কোথায় আছে তার চিহ্ন দেয়া আছে। এবার বুঝলাম যে কতটা নিচে আছি আমরা – প্রায় একটা ফুটবল মাঠের দৈঘ্যের সমান নিচে আছি। জায়গাটা আসলে লবণের ডিপো। দূর থেকে দেখলে তুষার বলে ভ্রম হয়। এ লবণের সমতলে প্রকৃতি মৌচাকের মতো বড়ো বড়ো ষড়ভুজ তৈরি করেছে যা দৃষ্টিনন্দন আর হাঁটার সময় এ শুকনো লবণে এক অদ্ভুত মচমচে আওয়াজ তৈরি হয়। চারদিকে মানুষের ছবি তোলার হিড়িকে শামিল হলাম আমরাও।

বরফযুগে এটা আসলে লেক ম্যানলির অংশ ছিল। প্রায় ১২ হাজার বছর আগে এটা শুকিয়ে গিয়ে এ বেসিন এলাকা তৈরি করে। জায়গাটা এমন যে প্রখর সূর্যের তাপে জর্জরিত হয়। কিন্তু চারদিকের পাহাড়ের কারণে এ তাপ আটকে পড়ে, বের হতে পারে না। এর ফলে পানি শুকিয়ে যায় সহজে। আবার এ পাহাড়গুলোর কারণে এ বেসিন একটা রেইন শ্যাডো এলাকার অন্তর্র্গত, ফলে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। তবে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আশপাশের পাহাড়গুলোর গা ধোয়া লবণ এসে জমা হয় বেসিন এলাকায়। তারপর এ চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় পানি বাষ্পে পরিণত হয় আর পড়ে থাকে লবণ। গোল্ডরাসের সময় একজন সার্ভেয়ার এ এলাকায় তার খচ্চরকে পানি খাওয়াতে নিয়ে আসে, সেই খচ্চর এ মারাত্মক লবণাক্ত পানি পান করে। সেই থেকে এ জায়গার নাম ‘ব্যাড ওয়াটার বেসিন’। সময় গড়িয়ে যায় আর এই শীতেও ঘেমে নেয়ে অস্থির অবস্থা। গাড়িতে ফিরে গেলাম। একটু ঠান্ডা হয়ে গোধূলির ম্লান আলোয় অন্য এক রূপে ডেথ ভ্যালি আর ব্যাড ওয়াটার বেসিনকে দেখলাম মনভরে।

সারাদিনের ক্লান্তি ভর করেছে পুরো শরীরে। এক কাপ কফিও খেতে পারিনি সারাদিনে। এখনকার মতো গন্তব্য রাতের নিবাস একটা অখ্যাত মোটেলে। হোটেল-মোটেলগুলো আসলে ডেথ ভ্যালির বিভিন্ন গেস্ট টাউনে ছড়ানো ছিটানো। বালারাট, পানামিন্ট সিটি, গ্রিন ওয়াটার, ক্লোরাইড সিটি ইত্যাদি গেস্ট টাউন রয়েছে ডেথ ভ্যালির ভেতর। শহরগুলোকে গোস্টটাউনের মতো বিটকেল নাম দেওয়া হয়েছে, তার কারণ হলো গোল্ডরাস পরবর্তী সময়ে এ শহরগুলো মানুষ ছেড়ে দিতে থাকলে এগুলো পরিত্যাক্ত ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হতে থাকে। আমাদের মোটেলটা পানামিন্ট সিটির কাছাকাছি। সামান্য খেয়ে-দেয়ে এ ভুতুড়ে নগরীতে মোটেলের বাইরে পা না দেওয়াই শ্রেয় মনে হলো।

পরের দিনের প্রথম গন্তব্য ‘আর্টিস্টস ড্রাইভ’। এটা একটা ৯ মাইল লম্বা সাপের মতো আঁকাবাঁকা একমুখী রাস্তা। বহু বছর আগের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে বেরিয়ে আসা লাভাগুলো লাল-হলুদ-কমলা-বাদামি-নীল-সবুজ নানা জাতের রং তৈরি করেছে – ঠিক যেন শিল্পীর হাতে রঙের প্যালেট। এ অনন্য ভূপ্রকৃতির অদ্ভুত রূপ ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও অন্যায়। অনেকে দেখলাম এ রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছে বা হাইকিং করছে। রাস্তার মাঝে মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছবি ভিডিও ধারণের নিষ্ফল চেষ্টা করা হলো বারবার।

দান্তেস ভিউ ডেথ ভ্যালি পর্যবেক্ষণের একটি চমৎকার আউটলুক পয়েন্ট এবং ফাটোগ্রাফারদের খুব পছন্দের স্থান। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচু থেকে ব্যান্ড ওয়াটার বেসিন দেখলাম। চোখে পড়লো বিখ্যাত ব্ল্যাক মাউন্টেন। শুনেছি এ দান্তেস ভিউ রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য এক চমৎকার জায়গা। কিন্তু সে উপায় তো নেই আমাদের। দান্তেস ভিউ থেকে নেমে এলাম ডেভিলস গলফ কোর্সে। ডেথ ভ্যালির সব জায়গার নামই শয়তান, ভূত নামের সঙ্গে জড়িত স্বাভাবিকভাবেই। এর নাম ‘ডেভিলস গলফ কোর্স’, কারণ এমন মারাত্মক একবোখেবড়ো পাথুরে জায়গা যে, একমাত্র শতানের পক্ষেই এখানে গলফ খেলা সম্ভব।

ডেথ ভ্যালিতে আমাদের সময় ফুরিয়ে আসছে- রাতে বিমান ধরার তাড়াও আছে সঙ্গে। ফেরার পথে গেলাম ‘হারমোনি বোরাক্স ওয়ার্কসে’। এটাই প্রথম কোম্পানি যারা গোল্ডরাস উত্তর যুগে ডেথ ভ্যালি থেকে বোরাক্স উত্তোলন শুরু করে। গরমকালে পানি এমন গরম থাকতো যে তা দিয়ে বোরাক্সকে জমাট বাঁধানো যেত না। এমন পাণ্ডব-বর্জিত বর্বর জায়গায় কাজ করার জন্য লোকবলের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কুশলতারও প্রয়োজন ছিল। হারমোনি বোরাক্স ওয়ার্কস তাদের তেমন বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবন কুশলতার পথিকৃৎ এ এলাকায়। নানা কারণে তাদের বিশ খচ্চরে টানা ওয়াগন গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একটা অংশ। হারমোনি বোরাক্স ওয়ার্কসে তাদের সেই ওয়াগনের একটা মডেল চোখে পড়লো আর কিছু স্মারকদ্রব্য সাজানো আছে সেই সময়টাকে বোঝার জন্য।

আগেই বলেছি ডেথ ভ্যালির মতো জায়গাকে দেখার জন্য দুইদিন একেবারে নগন্য। যা কিছু দেখা হলো না তার ফিরিস্তি দিয়ে লাভ নেই। মার্কিনদের ভেতর হাইকিং-ক্যাম্পিং এর প্রবণতা লক্ষ্য করেছি আগে। অনেকে রাস্তায় দেখলাম নানা জাতের অফরোড কাজকর্মে লিপ্ত রয়েছে। প্রাকৃতিক সান্নিধ্যকে প্রাণভরে উপভোগ করছে। সময়ের বিপরীত দিকে এক অদ্ভুত যাত্রা তাদের, হোক না তা কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য। এ দম্পতির আপাতত এ ফুসরত নেই। ফিরে যাচ্ছি জীবনের তাগিদে। যথা সময়ে গাড়ি জমা করে দিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। সৃষ্টিকর্তার যে অপরূপ আর রূঢ় ভূ-প্রাকৃতিক সৃষ্টি দেখলাম তাতে ভয় হয় যে, জীবনধারণ কতোই না কঠিন হতে পারে এমন জায়গায়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে এ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে মনের ভেতর এক অদ্ভুত কোমলতা এনে দিলো, মনকে প্রশান্ত করলো।

লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেম, যুক্তরাষ্ট্র, সহকারী অধ্যাপক, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ, প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ
৮০ টাকায় তাজা রূপালী ইলিশের স্বাদ

আপনার মতামত লিখুন