রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

জঙ্গলে জলসাঘর, আত্মহারা রাতভর

সায়েম সাবু
২১ জানুয়ারি ২০১৯

গহীন জঙ্গল। জঙ্গলের সঙ্গে তখন গভীর রাতের মিতালি। পৌষের রাত যেটুকু ঠান্ডায় ভর করলে হাড়ে কাঁপুনি ধরে, তার পুরোভাগই নেমেছিল বনোমধ্যে। চারধার সুনসান। কোথায় গেলে জনপথ মিলবে, তার ইয়ত্তা নেই।

এমন বনো মাঝে যদি বাঁশের বাঁশির সুর লহরি ভেসে আসে, তবে কার না মন হরে! ঠিক তাই মিলল। বাঁশরীর গগন ভেদী বাঁশি। বাঁশি আর মনকাড়া হারমোনিয়ামের সুরে তখন মাতোয়ারা সবাই। ঢোলের শব্দ নির্জনতা ভেঙেছে আরও আগেই। আর প্রেমজুড়ি (মন্দিরা) তো হৃদয়ের ক্ষরণ তখন তীব্র করে তুলছে।

গাজীপুরের রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট তখন সাধনকুঞ্জ। হৃদয়ের উষ্ণতা উপচে পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। সে উষ্ণতায় শীত উবে গেছে জলসার প্রথম প্রহরেই। সুর তরঙ্গে মাস্তি করে জনে জনে প্রেম বিলিয়ে দিলো আসরের প্রথম বেলাতেই। যারা সুরে সুরে দোস্তি করতে জানেন, তারা তো হারিয়ে গেলেন সুরালা নেশায়। আর যারা আনাড়ি, তারাও দোহারী হলেন সাধের জলসা ঘরে। কে গাইছেন আর কে শুনছেন, তা যেন ঠাহর করাই গেল না। আসর জমিয়ে সবাই তখন বাউল বনে।

এদিন ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের বিখ্যাত দেওয়ান পরিবারের তরুণ শিল্পী বাউল সাগর দেওয়ান গাইলেন। ভেতরের রস উগরে দিলেন হারমোনিয়ামের সুরে সুরে। সাগরের সুরে বাদকরাও দেওয়ানা। ক্লাসিক্যাল ঢংয়ে নজরুল, কাওয়ালি আর বাউলের নানা ডালে বিচরণ করে রাতভর সুরসুধা ঢাললেন এই সাধক। সুরের পিয়ালায় মত্ত হলেন সাগর ভক্তরাও।

বাউল সাগরের প্রেমরসে যখন টইটম্বুর জলসাঘর, তখন আরেক বাউল কিশোরী বিথী আযম সুরের পাজর খুলে ধরলেন। বিথীর বিচ্ছেদ আর মন হারানোর বেদনায় উন্মাদ সবাই। ভেতরের বেদনা মেলে ধরলেন নাচ আর গানে গানে। বুকে বুক মিলিয়ে ভক্তরা আপনের চেয়েও আপন হলেন এ বেলায়। এমন আত্মহারা কুঞ্জবন রূপ নিলো আনন্দমেলায়।

নিশিবেলার মধুলগ্ন কখন যে ফুরিয়ে ভোরের আভা উঁকি দিলো, তা যেন টেরই পাওয়া গেল না। জলসা ভাঙলো, তবে রেশ রয়েই গেল। আর ভোরের আলো না ফুটতেই সুইমিংপুলে ডুবের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে জাগো নিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৮’র প্রথম পর্বের।

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চললো ফ্যামিলি ডে’র দ্বিতীয় পর্ব।

জলসা ঘরে সামিল হয়েছিলেন জাগো নিউজের প্রশাসনিক কর্মকর্তার তানভীর কবিরের সহধর্মিণী আয়েশা সিদ্দিকা বিথী। ফ্যামিলি ডে’র গানের আসরে অংশ নিয়ে আত্মহারা এই নববধূ। বলেন, এমন আনন্দের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গান বেলায় সব ভুলে গিয়েছিলাম। ঠাণ্ডা, বন আর সুর মিলে আলাদা মজা পেয়েছি।

ফ্যামিলি ডে উপলক্ষে এমন ভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাগো নিউজের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সিরাজুজ্জামান। তিনি বলেন, বহু পিকনিক এবং ফ্যামিলি ডে-তে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এমন মন মাতানো আয়োজনে অংশ নেয়া হয়নি। মনোরম পরিবেশ, গহীন বন আর তীব্র শীতে বাউল গানের আয়োজন। আহ! সত্যিই মনে রাখার মতো।

ফ্যামিলি ডে গানের আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার। মূলত ভজন গানে ভিন্ন সাদ আস্বাদন করতেই তার এই চেষ্টা। বলেন, আমরা জাগো পরিবার বিশেষ মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে পথ চলার চেষ্টা করি। এ পরিবারের সবাই আনন্দমুখি। আর সেই আনন্দ ঘরে বাড়তি কিছু দিতেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বলেন, আমরা একটি রাতের জন্য সব বিষাদের সিঁড়ি মাড়িয়ে জলসাঘরে বসেছিলাম সুখের ডানায় ভর করে। আগামীতে এ আনন্দধারা আরও বেগবান হবে বলে আশা রাখি।

এক শহরেই ৭ দর্শনীয় স্থান
শালবনে স্বপ্নের রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট

আপনার মতামত লিখুন