বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

হরিণঘাটা হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র

চৌধুরী মো. ফারুক, পাথরঘাটা (বরগুনা) থেকে
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা হতে সাত কিলোমিটার দূরে হরিণঘাটা হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বন এবং সমুদ্র একই সাথে দেখতে পাবেন। বনের মধ্যে দেখতে পাবেন আকর্ষণীয় হরিণ, শুয়োর, বানর বন্যমুরগী এবং বিভিন্ন প্রাণী।

ওয়াচ টাওয়ার: এখানে পাঁচতলা সমতুল্য একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে যেখানে বসে বনের মধ্যে সকল প্রাণীদেরকে দেখা যাবে এবং আকর্ষনীয় জীবজন্তু এবং বনের গভীরতা উপলব্ধি করা যাবে। বনের মধ্যে আছে একটি আকর্ষনীয় দীঘি, যার ঘাট বাঁধানো মনেরম পরিবেশ বসার সুব্যবস্তা আছে পর্যটকদের জন্য। পশু-প্রাণীরা সেখান থেকে পানি পান করে এবং পর্যটকরাও ইচ্ছে করলে সেখান থেকে সুপেয় পানি পান করতে পারন। সেখানে আছে বিভিন্ন পিকনিক স্পট দূর-দূরান্ত থেকে আগত স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখানে পিকনিক করে থাকে। প্রতিদিন শত শত স্কুল কলেজ থেকে বাস-অটো প্রাইভেটকার টমটম ও মটরসাইকেল নিয়ে আসা শতশত পর্যটক সারাদিন আনন্দ ফূর্তি করে সন্ধ্যার দিকে তারা চলে যায়। তারা একই সাথে সুন্দরবনের অবয়বে বন দেখতে পারে আবার বনের শেষ সীমানায় সমুদ্রে স্নান করতে পারবে। দূর করতে পারবে মনের সকল দুঃখ বেদনা হতাশা অবসাদ।

ঝাউবন: হরিণঘাটা থেকে ছোট ছোট বোর্ডে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে বিশাল ঝাউবন পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান স্পট। এখানে বসে আপনি সমুদ্রের ঢেউ দেখতে পাবেন আর শতশত কিলোমিটার দূর থেকে সমুদ্র হয়ে আসা বিশুদ্ধ বাতাসে আপনি প্রানভরে নিশ্বাস নিতে পারবেন। সেই ঝাউবনে আপনি শুয়ে-বসে সেখানে আনন্দের মধ্যে প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারবেন। আপনি চাইলে এখানে জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন বা স্বল্পমূল্যে জেলেদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করে ফ্রাই করে খেতে পারবেন। আপনি এখানে দক্ষিণের সমীরণে মুগ্ধমনে সবুজ ঘাসে শুয়ে-বসে সময় কাটাতে পারবেন। যাতে মনে হবে আপনি প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। এখানে নিরাপত্তার জন্য ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার কোন অভাব নাই। ফরেস্টের লোকজন আছে পর্যটকদের যেকোনো বিষয় তারা সাহায্যে করবেন।

লালদিয়ার চর: হরিণঘাটা থেকে মাত্র ২৫ মিনিট বোর্ড বা ট্রলার চালালে দেখা যাবে বিশাল একটা চর, সেখানে শুটকি শুকায় জেলেরা তাদের ট্রলার, জাল নিয়ে নোঙ্গর করে আছে, এখান থেকে ছোট ছোট বোর্ড সমুদ্রের কাছাকাছি মাছ ধরতে যায়। পর্যটকরা এখানে এসে চরে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলে পিকনিক করে কেউ কেউ ঝাকি জাল বায় সখে মাছ ধরে জেলেদের কাছ থেকে মাছ ধরা দেখে তাজা ও জীবন্ত ইলিশ ধরে এবং ফ্রাই করে খায় আনন্দ ফূর্তির মধ্যে কোন ফাঁকে দিনটি পার হয়ে যাবে তা টেরই পাবেন না।

খাবার রেস্তোরা: হরিণঘাটয় পর্যটনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু রেস্তোরা তৈরি হয়েছে ঢাকা ফুড ভিলেজ নামে এখানে আছে মিনি চাইনিজ ইলিশ চিংড়ি ফ্রাইসহ হরেক রকমের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্তা। এখানে অনেক কমদামে গ্রামের তাজা মিষ্টি পানির ডাব খেতে পাবেন। এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে রেস্টুরেন্টে আগাম অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন প্রয়োজনমত আপনাকে তারা খাবার সর্বারাহ করবে।

থাকার ব্যবস্তা: পাথরঘাটায় থাকার জন্য বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল, গেস্টহাউস রয়েছে। এরমধ্যে বাজারের প্রান কেন্দ্রে হোটেল সোনালি আবাসিক, নতুনবাজারে গেস্টহাউস, খান বোডিং ইত্যাদি। এখান এসি, ননএসি, ভিআইপিসহ সকল ধরনের রুম পাওয়া যায়। পাথরঘাটা বাজার থেকে আপনি অটোরিকসা মাহেন্দ্র মোটরসাইকেলে মাত্র ২০ মিনিটে হরিনঘাটা যেতে পারবেন। আপনি চাইলে হোটেল থেকে গাইড ও নিতে পারবেন।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, পাথরঘাটার হরিনঘাটা পর্যটন কেন্দ্রটি সরকারিভাবে আরো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো দৃষ্টিনন্দন করা যেত, এছাড়াও হরিনঘাটায় বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন কর্পোরেশন একটি সরকারি মোটেল হলে পর্যটন কেন্দ্রটি আরো সৌন্দর্যবৃদ্ধি হত ও পর্যটকের সংখ্যা বাড়তো এবং দক্ষিণ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প আরো বিকশিত হত। তবে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটের আরো উন্নতি করতে হবে এবং হরিনঘাটা থেকে বনের মধ্যে দিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণ হলে পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণ করা যাবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ আল মোজাহিদ বলেন, হরিনঘাটার উপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আছে, কুয়াকাটা তালতলী ও পাথরঘাটাকে পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য। ইতোমধ্যেই হরিনঘাটায় ২টি ওয়াস রুম ২টি পিকনিক কর্নার ১টি গেট নির্মাণ ও টুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে ১টি ডাকবাংলো করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পেশ করা হয়েছে যা খুব দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।

সাদা মেঘের মিলনমেলা নীলাদ্রি লেক
বঙ্গোপসাগরের বুকে অনন্য এক ভুবন ‘চর বিজয়’

আপনার মতামত লিখুন