মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

সাদা মেঘের মিলনমেলা নীলাদ্রি লেক

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘের মিলনমেলা মানেই নীলাদ্রি লেক। পাহাড় ঘেঁষা নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য পর্যটকদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ঈদগডের পার্শ্ববর্তী বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ নীলাদ্রি লেক। কক্সবাজারের রামু উপজেলা ঈদগড় ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের দুইপাশে পাহাড়ের বুক চিরে যেতে হয় এ নীলাদ্রি লেকে। অনেকেই জানান, এই লেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং স্থানীয়দের আন্তরিকতা পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করবে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যটন সচিব মোকান্মেল হোসেন এ লেক আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করেন।

প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে পাহাড় ও রাবার বাগানের আঁকা-বাঁকা ও উঁচু নিচু পাহাড়ী পথ পেরিয়ে যেতে হয় এ নীলাদ্রি লেকে। পাহাড় ও নদীর অপরূপ সান্নিধ্য এখানে। নদীতে নৌকা ভ্রমণে পাহাড় নদীর মিতালি । চারপাশে সবুজের ঘেরা পাহাড়। দৃষ্টিনন্দন এই জায়গাটি দেখলে মনে হয় যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কক্সবাজারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন রূপ–লাবণ্যে ভরা এক লীলাভূমি নীলাদ্রি লেক।

বেসরকারি উদ্যোগে ২০ একর জমির ওপর প্রাকৃতিক লেকটি গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন উদ্যোক্তা ও কর্মউদ্যোমী তোফায়েল আহম্মেদ, তৌহিদুল ইসলাম তোহা, হোসাইন আহমদ বাহাদুরসহ একদল মানুষ ট্যুরিজম স্পট নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা লীলাভূমি বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। যেখানে মেঘালয়ের মতো পাহাড়–পর্বত, সবুজে ঘেরা শুভ্র মেঘের গালিচা মুহূর্তেই শরীর–মন সতেজ করে দেয়।

লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই স্থানীয়সহ দূর-দূরান্তের পর্যটকরা আসেন। বর্তমানে নীলাদ্রি লেক প্রকৃতি প্রেমীদের মাঝে আকর্ষণীয় এক স্পট। চারদিকে পাহাড়। পাহাড়ের মোহনায় জলধারা হয়েছে সৃষ্টি। নীলাদ্রি লেকের আশপাশে খুবই দৃষ্টিনন্দন এক দৃশ্য। পাহাড়ের ওপর যেন সাদা মেঘের ভেলা। লেকের জলে ভেসে উঠছে সেই মেঘের মনোমুগ্ধকর ছবি।

পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে উঠছে এই "নীলাদ্রি লেক। লেকে চলছে ছোট ছোট কাঠে ডিঙ্গি নৌকা, প্যাডেল নৌকা। লেকের জল আর পাহাড় ঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য যে কাউকেই সহজে কাছে টানে। ক্ষণে ক্ষণে বয়েই যায় দক্ষিনার হিমেল বাতাস। ছোট-বড় আর মাঝারী পাহাড়-টিলা ও গিরিপথ নিয়ে গড়ে উঠা প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি লেকটি। মায়ার জালে বন্দি সবখানে। লেকটিতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। সব মানুষের উচ্ছ্বাস যেন সরগরম করে তোলে লেক প্রাঙ্গনে।

লেকে রয়েছে কিটসজোন। অসাধারণ এক পিকনিক স্পট। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরই অবকাশ রাত্রি যাপনে ইকো টুরিজম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এখানে।

নীলাদ্রি লেকের চেয়ারম্যান ও বে-অফ বেঙ্গল ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, আধিবাসী জনগোষ্ঠী ত্রিপুরা, মুরুং, তংচঙ্গাসহ স্থানীয়দের ট্যুরিজমে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে তাঁত শিল্পের ওপর প্রশিক্ষনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে করে একটি অঞ্চলের পরিবর্তন হবে। অধিবাসীদের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

নীলাদ্রি লেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোহিদুল ইসলাম তোহা বলেন, চারপাশেই পাহাড়ের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য বিমোহিত করে পর্যটকদের। বনজ, ফলদ আর ভেষজ বৃক্ষরাজির সমারোহ। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে বিনোদনের নতুন আরেক খোরাক। লেকটিকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তিনি বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মান উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি পরিবর্তন আনার চেস্টা চলছে। এছাড়াও স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করেই ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার থেকে ভ্রমণে যাওয়া জাফর আলম, আনোয়ারসহ অনেকে জানান, অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই নিলাদ্রী লেক। এখানে এসে খুবই ভালো লাগল।

ভ্রমণপিপাসু অনেকেই জানান, এই লেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং স্থানীয়দের আন্তরিকতা পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করবে।

সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লেকে নদীভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত। নতুন হওয়ায় এখনো তেমন গোছানো পর্যটন বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। তবে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ চলছে বেশ। লেকের পাশে টয়লেট ও চেঞ্জিং রুম গড়ে তোলা হচ্ছে।

প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক ভিড় জমাছে এই নীলাদ্রি লেকে। ঢাকা বা দেশের অন্য যে কোন জায়গা থেকে সড়ক পথে গাড়ি যোগে এসে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়ক হয়ে সিএনজি বা চান্দের গাড়ি (জিপ) রিজার্ভ ভাড়া করে সরাসরি এই লেকের সৌন্দর্য দর্শনে সহজে যাওয়া যায়।

পর্যটক আকর্ষণে থাইল্যান্ডে শুরু হচ্ছে কোয়ারেন্টি-ফ্রি ভিসা
হরিণঘাটা হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র

আপনার মতামত লিখুন