পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দ্বার হাতিয়ার নিমতলী সমুদ্র সৈকত

জনমানব শূন্য কেউড়া বাগানের মাঝ দিয়ে একটি রাস্তা ধরে সামনে এগুলেই সবুজ বিস্তীর্ণ চোখ জোড়ানো খোলা মাঠ, যেখানে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার পাল ছুটে চলছে নিজেদের মত করে, মাঠের মধ্য দিয়ে ৫কিলোমিটার আঁকাবাকা সরু রাস্তা, এর পর আবারো দেখা মিলবে সবুজ কেউড়া বনের, দূর থেকে মনে হবে বিশাল বিশাল পাহাড় দাড়িয়ে আছে, বাগানের পরেই নয়নাভিরাম ১০কিলোমিটার বিশাল সমুদ্র সৈকত, যেখানে চোট বড় ডেউ এসে আছড়ে পড়ছে বিচে, সূর্য উদয় থেকে শুরু করে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত একেক সময় বিচের দেখা যায় একেক রুপ, দেশীয় বক, শঙ্খচিল সহ অতিথি পাখিরা ব্যাস্ত মাছ শিকারে, রুপালী বালির উপর লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটিতে তাদের পায়ের ছাপে সৃষ্টি হচ্ছে আল্পনা। যা দেখে মূহুর্তে হৃদয়ে নেমে আসবে প্রশান্তি। এখানকার প্রকৃতি মূহুত্বে আপন করে নেয় পর্যটকদের।
বলছি নোয়াখালীর বৃহত্তম উপজেলা হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের বিরবিরি গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরে নিমতলী সমুদ্র সৈকতের কথা। প্রতিদিনই এ সৈকতের সুন্দর্য উপভোগ করতে জেলা, উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসছেন হাজার দর্শনার্থী। যাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকাটি।
যেখানে কয়েক বছর আগেও মানুষের তেমন কোন আনাগোনা ছিলোনা, শুধু মাত্র দ্বীপের কিছু মানুষ শীতের সময়ে মাঝে মধ্যে ঘুরতে আসতো, বর্তমানে কিছু তরুনদের উদ্যোগে শুধু দেশের পর্যটকদের কাছে নয় বিদেশী পর্যটকদের কাছে ও প্রাকৃতিক দর্শনীয় জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ স্থানটি।
সম্প্রতি নিমতলী সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে আসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সহ অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা । পরিদর্শন শেষে সাংবাকিদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, বিশাল আকৃতির এত সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেশের আর কোথাও নেই। একদিকে বিশাল মাঠ, পাশে কেউড়া বাগান, অন্যদিকে সমুদ্র সৈকত। সব কিছুর সংমিশ্রন রয়েছে এখানে। সুন্দরের দিক থেকে কক্সবাজারের চেয়েও কোনো অংশে কম নয় এটি। দ্রæত সময়ের মধ্যে এ দ্বীপের এই অঞ্চলকে ভ্রমনপিপাসুদের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এ সমুদ্র সৈকতটি অর্ধশত বছর আগে সৃষ্টি হলেও দর্শনার্থীদের পদাচারণা শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। ককেজন যুবকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে নিমতলী উন্নয়ন কমিটি। জনবসতি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে এ সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে উক্ত কমিটি ও ইউয়িন পরিষদ। ফিকনিক স্পট হিসেবে খাবার পানি, শৌচাগার, কয়েকটি খাওয়ার হোটেল, রান্নার উপকরণ সহ সকল ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে এখানে। দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিতে বীচে বসানো হয়েছে রঙিন ছাতা বসার টেবিল। রাখা হয়েছে দুটি তাগড়া ঘোড়া, যে গুলোতে শিশু, কিশোর ও যুবকেরা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন বীচের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। রাত্রি যাপনের জন্য করা হয়েছে নিরাপদ তাবু সহ ক্যাম্প ফায়ারিং ও বারবিকিউর ব্যবস্থা।
কমিটির সদস্য আমিনুল এহসান রাসেল জানান, মন্ত্রীর সফরের পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেকগুন। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ প্রতিষ্ঠানের সহপাঠিদের নিয়ে, কেউ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠনের ব্যানার নিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি ও বড় গাড়িতেকরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বনভোজনে আসছেন এখানে। খেলাধুলা, রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া শেষে প্যান্ডেলে বড় বড় সাউন্ডবক্স লাগিয়ে চলে গান বাজনা।
বিচে দেখা হয় লক্ষীপুর সদর উপজেলার ব্যবসায়ী মো: হোসেন (৩৫) এর সাথে, তিনি বলেন, “সত্যি এটি একটি দেখার মত জায়গা, একদিকে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা সী-বিচ, অন্যদিকে গভীর সবুজ কেউড়াবন, কোলাহল মুক্ত পরিবেশ, কোন ধরনের স্থাপনা না থাকালেও এটি অনেক ভালো লাগছে, পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি, বাচ্ছারাও অনেক মজা করেছে ”।
জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাসুম বিল্লা জানান, নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি ইতমধ্যে হাতিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাবেক সংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী নিমতলী পরিদর্শন করেছেন। এলাকাটি পর্যকটদের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য জনপ্রতিনিধি সহ এরাকার সবাই আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। ইতমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে এবং কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের কাজ দ্রæত ভাবে এগিয়ে চলছে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাটামোগত উন্নয়নে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে যা বাস্তবায়ন
আপনার মতামত লিখুন