শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

সুন্দরবন ট্যুর: ভর মৌসুমে বাড়লো খরচ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সুন্দরবন ট্যুরের ভর মৌসুম চলছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে পর্যটনে যে মাত্রায় সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। আবহাওয়াও এ পর্যন্ত অনুকূলে রয়েছে। ফলে পর্যাপ্তসংখ্যক পর্যটক, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে সুন্দরবনে ভিড় করছেন।

২০২০ সালের মার্চে করোনার কারণে সুন্দরবনে সবধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। সাত মাস পর অক্টোবরের শেষে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর বনে পর্যটনে সুবাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু গত মাসের ১২ তারিখে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুন্দরবনে নৌযান চলাচলে আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সুন্দরবন ভ্রমণ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েন সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটররা। 

সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু হয় অক্টোবর মাসে। চলে মে মাস পর্যন্ত। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় হচ্ছে পিক টাইম। এ পিক টাইমে নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বিপদ কাটাতে তৎপর হয় ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন। তারা ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে সভায় বসে। সেখানে ছয়টি শর্তে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ আরোপিত শর্তে রয়েছে, পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করবেন, প্রতিটি লঞ্চে ৭৫ জনের বেশি পর্যটক নেয়া যাবে না, প্রত্যেক পর্যটক যাতে মাস্ক ব্যবহার করে তা লঞ্চ মালিকদের নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেক পর্যটকের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, নদীর মাঝপথে কোনো পর্যটক উঠানো যাবে না এবং অনুমতি ছাড়া কোনো লঞ্চে ভ্রমণে যাওয়া যাবে না। 

খুলনা নদীবন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সে সময় বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুন্দরবনে নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে সুন্দরবনে ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা শেষে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ আরো কিছু শর্ত দিয়ে সুন্দরবনে পর্যটন নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কোনো লঞ্চ মালিক এসব শর্ত ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ট্যুর অপারেটররা। কিন্তু এখন ওমিক্রনের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। 

ট্যুর অপারেটরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে থেকে তারা বুকিং পেতে শুরু করেছিলেন। এখন সেসব বুকিংয়ের কিছু বাতিল হচ্ছে। যেসব ট্যুর হচ্ছে সেগুলোতে ট্যুরিস্ট ২-৪ জন যেতে পারছেন না। আমাদেরকে সেটা ম্যানেজ করতে হচ্ছে। এটা ছাড়া সুন্দরবনে পর্যটনের জন্য আর কোনো সমস্যা নেই। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ট্যুর অপারেটররা যে ব্যবসা পেয়েছেন তাতে তারা খুশি। 

শুক্রবার সুন্দরবন ওয়ান্ডার্স ট্যুরিজম নামক অপারেটরের তিনটি জাহাজ ট্যুরিস্ট নিয়ে খুলনা থেকে সুন্দরবনে যায়। এভাবে অন্য অপারেটরদের নৌযানও বনে যায়। চলতি শীত মৌসুমে বৃষ্টি-বাদল হলেও তাতে অসুবিধা হচ্ছে না। অসুবিধা হয় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হলে। এ ছাড়া জ্বালানি তেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে অন্য সবার মতো ট্যুর অপারেটরদেরও কিছু সমস্যা হচ্ছে। ট্যুরের রেট বাড়াতে হয়েছে। মাথাপিছু আগের যে রেট সাত হাজার টাকা ছিল তা আট হাজার করতে হয়েছে। বর্ধিত রেট ট্যুরিস্টদের মানাতে কষ্ট করতে হচ্ছে। আর খরচ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে ট্যুরিস্ট সংখ্যায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এ ব্যাপারে কথা হলে ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, বনে নৌযান চলার নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ওমিক্রনের কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমার কথা বলতে পারি, আমার ৫০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। আর জ্বালানি তেলের এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে ট্যুরের রেট যতটা বাড়ানোর প্রয়োজন তা করা যাচ্ছে না বুকিং ক্যানসেলের ঝুঁকির মুখে।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে নির্মাণ হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র
পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দ্বার হাতিয়ার নিমতলী সমুদ্র সৈকত

আপনার মতামত লিখুন